১৯৭০-এ ১৭ মার্চ, বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলার সাঁইবাড়িতে ঘটেছিল নারকীয় হত্যালীলা। বাড়িতে ঢুকে দুই ভাই প্রণব সাঁই, মলয় সাঁই ও গৃহশিক্ষক জিতেন রায়কে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, মাকে রক্তমাখা ভাত খাওয়ানোর। এই হত্যাকান্ডে ৮৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছিল।সিপিএম নেতা খোকন সেন ওরফে নিরুপম সেন, বিনয় কোঙার, অনিল বসুরা অভিযুক্ত ছিলেন বলে সাঁই পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। সিপিএমের বিরুদ্ধে এই সাঁইবাড়ির হত্যা ইস্যু নিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। এখন সেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়াই করছে সিপিএম। এই জোটকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করছে সাঁই পরিবার।
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট জোট করেছিল। যদিও ভোটের পর বাম শরিকদের দাবি ছিল, কংগ্রেসীরা তাঁদের ভোট দেয়নি। তবে বামেদের ভোটে কংগ্রেস বেশি সংখ্যক আসন পেয়েছিল। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে বামেদের সমর্থনে বিপুল ভোটে জয় পায় কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। বর্ধমানের সাঁই পরিবারের সদস্যরা এই জোটকে অনৈতিক জোট হিসাবেই দেখছেন।
সাঁইবাড়ির হত্যাকান্ডের পর ওই বাড়ির বড় ছেলে নবকুমার সাঁই আহ্লাদিপুর গ্রামে খুন হন। পরবর্তীকালে সাঁই কমিশনে টাউনহলে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে খুন হতে হয় গুণমনি রায়কে। সাঁই পরিবারের ছোট ভাই বিজয় সাইঁ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "কংগ্রেস অনেক সময় পেয়েছিল। ৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও বিচার তো করেনি। সাঁই বাড়ির ঘটনা ভাঙিয়েই তো ক্ষমতায় এসেছিল। তারপর আর যা হয়। ওই শহিদ বেদিও আমার হাতে করা। সেটাও কংগ্রেস কিছু করেনি। ওই মালা দিতে আসতেন ভোলানাথ সেন, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা। ওই মালা দেওয়াই সার। একেবারে তরমুজ কংগ্রেস। তাছাড়া যে লঙ্কায় যায় সেই রাবন হয়। যা হারানোর তো হারিয়েছি। ভাইয়েদের তো ফেরত পাব না। মাটি কেটে খাব, তবু আর রাজনীতি করব না।" বিজয়বাবুর কথায়, "জোট নিয়ে কি বলব, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও জ্যোতি বসুকে একসঙ্গে টেবিল-টেনিস খেলতে দেখেছি।"
১৭ মার্চ ছিল সাঁইবাড়ির মেজ মেয়ে স্বর্ণলতা যশের ছেলের নামকরণের অনুষ্ঠান। সেদিন কাঠের আগুনের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল ১ মাসের পুত্রসন্তানকে। সেখান থেকে কোনওরকমে দুধের শিশুকে উদ্ধার করেছিল মা ও দিদা মৃগনয়না দেবী। সেই অমৃত যশ বাং-কংগ্রেস জোটকে অনৈতিক জোট বলছেন। তিনি বলেন, "তবে এখন রাজনীতিতে কেউ কারও স্থায়ী বন্ধু নয়। আবার শত্রুও নয়। এখন নৈতিকতা বা অনৈতিকতা বলে কিছু নেই। যার যেটা সুবিধা সেভাবেই রাজনীতি চলে। আগে দ্বিধা ছিল নৈতিকতার জন্য নীচুতলার কর্মীরা ভোট দেবে কিনা। তবে কংগ্রেস সিপিএমের জোট দুঃখজনক।"