তৃণমূল কংগ্রেসের দিল্লি অভিযানে এরাজ্য থেকে প্রথম রওনা দেওয়া বাসটির যাত্রীরা আর রাজধানীতে দলের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না। সবুজ রংয়ের ট্রাভেল বাসটি বাংলায় ফিরে আসছে। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ঝাড়খণ্ডে কোডারমার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাসটি। রাস্তার ওপর থাকা মাটির ঢিপিতে ধাক্কা দেয় বাসটি। দুর্ঘটনায় প্রায় ৮ জন অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন। বাসটিতে ৩৩ জন তৃণমূল কর্মী ও জবহোল্ডার ছিলেন। এর আগে বাস থেকে দুর্গাপুরে ১৩ জন নেমে গিয়েছেন।
১০০ দিনের প্রকল্প, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা থেকে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে বঞ্চিত করছে। সেই টাকা আদায়ের দাবিতে ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২ অক্টোবর গান্ধীঘাটে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ৩ অক্টোবর জবকার্ড হোল্ডারদের নিয়ে যন্তরমন্তরে অবস্থান। তারপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে স্মারকলিপি।
দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা করার লক্ষ্যে জবকার্ড হোল্ডার ও তৃণমূল কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। তাঁদের প্রথমে ট্রেন রিজার্ভ করে যাওয়ার কথা ছিল। রেলমন্ত্রক তা বাতিল করে দেয়। শেষমেশ শনিবার দুপুর থেকে দিল্লি যাওয়ার লক্ষ্যে একের পর এক বাস ছাড়তে শুরু করে। প্রথম বাসটি ছেড়েছিল ১টা ১০ মিনিট নাগাদ। সেই বাসটিই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সেটি আর দিল্লি যেতে পারছে না। ফিরছে বাংলায়। জানা গিয়েছে, আহতদের প্রথমে চিকিৎসার জন্য ধানবাদে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাসের চালক মদন সাউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'বাসটি দুপুরে ছাড়ার পর দুর্গাপুরে ১৩ জন নেমে পড়েন। তাঁরা দিল্লি যাবেন না বলে নেমে যান। তাঁদের নামিয়ে আমরা দিল্লির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। ঝাড়খন্ডের খোডারমার কাছে কলকাতা থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে বিপত্তি ঘটে। আজ, রবিবারের ভোর, তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল। ঘন্টায় গাড়ির গতিবেগ ছিল ৬০-৬৫ কিলোমিটার। রাস্তায় কাটিং ছিল, বন্ধ আছে ডান দিকে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টিতে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। যখন আমি দেখেছি জোরে ব্রেক কষেছি। রাস্তাতেই মাটির ঢিপি করা ছিল। সেটাকে ধাক্কা মেরে ফেলি। গাড়ির সামনের বাম্পার তুবড়ে, ভেঙে গিয়েছে। কয়েকজন যাত্রী হালকা জখম হয়েছেন। তাঁরা আমাকে বলেন, পুরুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে চলুন। সেখানে চিকিৎসা করাতে হবে। তাই বাস নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।'
আরও পড়ুন- ‘আমরা অন্য ধাতুতে তৈরি’, দিল্লি রওনার আগে হুঙ্কার অভিষেকের
বাসচালক আরও বলেছেন, 'তাছাড়া দিল্লি গেলে বাসের সামনের বাম্পারে যে ভেঙে গিয়েছে তা দেখলে দিল্লি পুলিশ আটকে দেবে। শেষমেশ আর দিল্লি যাওয়া হল না। রাস্তায় দু'বার চা খেয়েছি আমরা। আসানসোলে রাতের খাবার খাওয়া হয়েছে।'
এই বাসেই ছিলেন পুরুলিয়ার মানবাজার বিধানসভার পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি ধরম বন্দ্যেপাধ্যায়। চালকের ফোনেই তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লি যাচ্ছিলাম। পথে বাস দুর্ঘটনায় পড়ে যাওয়ায় পুরুলিয়ায় ফিরে যাচ্ছি। একজনের নাকের ওপর চোট লেগেছে, দুজনের চোখের নীচে চোট লেগেছে। ৮ জন জখম হয়েছেন। পুরুলিয়া গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরব। দলের নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি।' তিনিও জানান, যাওয়ার সময় দুর্গাপুরে ১৩ জন নেমে গিয়েছিলেন।
শনিবার সকালে নেতাজি ইন্ডোরের সামনে এই বাসটি প্রথম এসে দাঁড়িয়েছিল। চালক মদন সাউ তখন জানিয়েছিলেন, তিনি পর্যটকদের নিয়ে পুরী থেকে সবে সকালে ফিরেছেন। নামখানা, বিষ্ণপুর, মথুরাপুরে যাত্রীদের নামিয়ে এলেন। ফোন পেয়েই বাস নিয়ে চলে এসেছেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন আড়াই দিন লাগবে দিল্লি যেতে। তারপর দিল্লির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে এই দুর্ঘটনা।