দূরদূরান্ত থেকে শুক্রবারই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসে গিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। বাংলার দাবিদাওয়া নিয়ে দিল্লির যন্তরমন্তরে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হবেন জামুড়িয়ার রাজকুমার ভুঁইয়া, বীরভূমের আলি হোসেনরা। তবে কেন্দ্রীয় সরকার তৃণমূলের বিশেষ ট্রেনের অনুরোধ না রাখায় বাসে দিল্লি যাওয়ার ব্যবস্থা জোড়াফুল নেতৃত্বের। তবে এই কর্মীরা নির্ধারিত সময়ে দিল্লিতে পৌঁছোতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলকর্মীদের বাস আটকানোর আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
আগামী ২ অক্টোবর দিল্লির রাজঘাটে ধরনা কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূলের। যদিও সেই কর্মসূচিতে দলের সাধারণ কর্মীরা থাকবেন না। শীর্ষনেতাদের কয়েকজনকে দেখা যেতে পারে সেই কর্মসূচিতে। তবে ৩ অক্টোবর যন্তরমন্তরের বিক্ষোভ সমাবেশে দলে দলে কর্মীদের হাজির করবে জোড়াফুল নেতৃত্ব। রাজ্যের বকেয়া আদায়ে খাস রাজধানীর বুকে সুর চড়াবে তৃণমূল।
বাসচালক বারাসাতের মদন সাউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "এখনও পর্যন্ত হাতে (সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট) দিল্লি যাওয়ার পারমিট পাইনি। পেয়ে যাব। তবে কখন বাস ছাড়ব জানি না। আমাকে নেতাজি ইন্ডোরের সামনে বাস দাঁর করাতে বলেছে। বাস দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। সকালে পুরী থেকে ফিরলাম। দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানা, মথুরাপুর, বিষ্ণুপুরে পর্যটকদের নামিয়ে এলাম।"
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ভুরিভোজে তৃণমূলকর্মীরা। ছবি- পার্থ পাল
কখন দিল্লি পৌঁছোবে বাস? চালকের জবাব, "কমপক্ষে আড়াই দিন লাগবে। অনেকবার হল্ট দিতে হবে। ২ তারিখ না হলেও ৩ অক্টোবরের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে। তিনি জানান, ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা। প্রায় ৮০০ লিটার ডিজেল লাগবে। ৩৬০ লিটারের ট্যাঙ্ক।"
দিল্লি যাওয়ার জন্য হাজির তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের নেতাজি ইন্ডোরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ও রাতে ডিম-ভাতের মেনু ছিল। ট্রেন নাম মেলার খবর পাওয়ার তাঁরা খোঁজ নিতে শুরু করেন কীসে যাবেন! সকালে নেতাজি ইন্ডোরের সামনে একটা ট্রাভেল বাস দাঁড়াতেই তৃণমূল কর্মীরা খোঁজ নিতে শুরু করেন। এই বাসটি কখন ছাড়বে?
আরও পড়ুন- বকেয়া আদায়ে ‘মিশন দিল্লি’তে অনড় অভিষেক! চেয়েও ট্রেন না পেয়ে বিকল্প পথেই অভিযান
জলমগ্ন স্টেডিয়াম চত্বরেই রান্নার বন্দোবস্ত। ছবি- পার্থ পাল
স্টেডিয়ামের মেঝেতে বসে সুন্দরবনের রোসন মোল্লা বলেন, "১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনার টাকা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে দিয়েছে। সেই টাকা আদায়ের জন্য দিল্লির যন্তর মন্তরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা তাতে সামিল হয়েছি। ট্রেন বাতিল করে দেওয়ায় অসুবিধা হবে ঠিকই, তবে বাসের ব্যবস্থা করেছে দল। দিল্লি আমরা যাবই।'
আবেদ হোসেন, শাহানাজ পারভিন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। এসেছেন জলপাইগুড়ির মেটেলি থেকে। কৃষিকাজ করেন আবেদ হোসেন। তিনি বলেন, "কাল ডিম-ভাত খেয়েছি। কিন্তু কীভাবে যাব তাই বাসের খোঁজ করছি। শুনছি উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার বাধা দিতে পারে। দেখা যাক কি হয়। এই প্রথমবার দিল্লি যাচ্ছি।'
এদিকে, দিল্লিতে এরাজ্য থেকে যাওয়া দলের কর্মীদের থাকার জন্য জোরদার বন্দোবস্ত করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। দিল্লির দুটি বঙ্গ ভবন ছাড়াও বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস, হোটেল বুক করা হয়েছে। সেখানেই কর্মীদের রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। গোটা প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শনিবারের বিমানেই দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা। দলের শীর্ষনেতাদের কয়েকজনও যাচ্ছেন দিল্লিতে।