বৃদ্ধকে ঘরে ফেরাতে নাছোড়বান্দা ছিলেন এক শিক্ষিকা, তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যাম রেডিও। তাঁদেরই সৌজন্যে দীর্ঘ আট মাস পর বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধ। বাবাকে ফেরাতে এসে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না একমাত্র ছেলে। চোখ ছলছল করে উঠল মর্মস্পর্শী এই ঘটনার সাক্ষী থাকা বাকিদেরও।
উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা লক্ষ্মণ নাগ। আজ থেকে আট মাস আগে হঠাৎই একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। পরিবারের সদস্যরা তাঁর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরেছে দিনের পর দিন ধরে। তবে কোথাও বৃদ্ধের সন্ধান মেলেনি। একমাত্র ছেলে সমীর বৃদ্ধ বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন।
শ্যামনগর থেকে বেরিয়ে সোজা চুঁচুড়ায় এসে ওঠেন লক্ষ্মণ নাগ। চুঁচুড়ার একটি মাঠের ধারে তিনি থাকতে শুরু কপেন। পথচলতি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের শিক্ষিকা শুভ্রা ভট্টাচার্য ওই বৃদ্ধকে একাকী মাঠের ধারে পড়ে থাকতে দেখেন। অসহায় এক বৃদ্ধকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে তিনিই প্রথমে এগিয়ে এসেছিলেন। শুভ্রাদেবী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ওই সংস্থাও দুঃস্থদের নিয়ে কাজ করে।
বৃদ্ধ লক্ষ্মণ নাগকে মাঠের ধারে থাকতে দেখে তাঁর সাহায্যেও এগিয়ে এসেছিলেন শুভ্রাদেবী। প্রতিদিন নিয়ম করে তাঁর খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করেন তিনি। বৃদ্ধের জন্য পোশাক, কম্বলেরও বন্দোবস্ত করেন শুভ্রাদেবী। কথায়-কথায় বৃদ্ধের কাছে একদিন তাঁর বাড়ি, পরিবার-পরিজনদের কথা জিজ্ঞাসা করেন শুভ্রা ভট্টাচার্য নামে ওই শিক্ষিকা। বৃদ্ধ লক্ষ্মণ নাগ তাঁকে জানান, শ্যামনগরে তাঁর বাড়ি। তাঁর বাড়িতে ছেলে, বউমা, নাতি রয়েছে। বাড়ি কেন ছাড়লেন তা অবশ্য বলতে পারেননি বা চাননি ওই বৃদ্ধ। একথা শুনেই দিন কয়েক আগে হ্যাম রেডিও-র সঙ্গে যোগযোগ করেন শুভ্রা ভট্টাচার্য নামে ওই স্কুল শিক্ষিকা।
আরও পড়ুন- শুধু আমেই নয় পরিচয়, এজেলার কীর্তি অনেক, লিচুর বিদেশ-যাত্রায় উচ্ছ্বসিত চাষিরা
হ্যাম রেডিও-র কর্মীরাই এরপর বৃদ্ধের শ্যামনগরের বাড়ির খোঁজ চালান। বৃদ্ধের একমাত্র ছেলে লক্ষ্মণ নাগ ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন হ্যাম রেডিও-র কর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে বৃদ্ধের ছেলে ও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে চুঁচুড়ায় পৌঁছে যান হ্যাম রেডিও-র কর্মীরা। আট মাস পর বৃদ্ধ বাবাকে দেখে কেঁদে ওঠেন একমাত্র ছেলে। বৃদ্ধেরও চোখেও জল।
ছেলেকে দেখেই চিনতে পারেন বৃদ্ধ। ছেলে সমীরের সঙ্গে আসা বাকিদের নামও গড়গড় করে বলে ফেলেন তিনি। বৃদ্ধের ছেলে সমীর নাগ বলেন, ''আমি বেসরকারি চাকুরিজীবী। একদিন কাজে বেরনোর পর বাবাও কোথায় যেন বেরিয়ে যায়। কিছুই জানতে পারিনি। বহু দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। বাবার মানসিক সমস্যা রয়েছে। সেই কারণেই তাঁর চিকিৎসা করাতে হবে। শুভ্রাদির জন্যই বাবাকে আজ ফিরে পেলাম।''