শূন্যকে এত ভয় কেন? গড়পড়তা সিপিএম তথা বামনেতাদের বক্তব্যে এ প্রশ্ন থাকবেই। যথারীতি দুর্নীতি ইস্যুতে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের মঞ্চে এমন আওয়াজ শোনা গিয়েছে। সভায় ভিড় নিয়েও খুশিতে ডগমগ বাম নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, হয়তো ভিড় একটু বেড়েছে তবে তাতে ভোট বাক্সে কতটা ফায়দা হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
Advertisment
২০১১-তে বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ক্রমাগত রক্তক্ষরণের পর রক্তশূন্য হয়েছে। সংসদীয় রাজনীতিতে শূন্য হওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেসও কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। সংগঠন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। একের পর এক দলীয় কার্যলয় হাতছাড়া হয়েছে। রাস্তার ধারের দলীয় কার্যালয়গুলিতে এখনও লালপতাকার বদলে ঘাসফুলের পতাকা উড়ছে। যদিও সিপিএমের ছাত্র-যুব বাহিনী পথে নেমে আন্দোলনের ফলে কিছুটা হালে পানি পেয়েছে। তবে সভা-সমাবেশে যে ভিড় নিয়ে বড়াই শুরু হয়েছে তার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছে রাজনৈতিক মহল। এই ভিড় মানে কী নতুন করে মানুষজন সিপিএমে আকৃষ্ট হচ্ছেন? নাকি তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপি নয় সিপিএমকে বেছে নিচ্ছেন?
এই মুহূর্তে সংসদীয় রাজনীতি তথা সংগঠনগত ভাবে রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সিপিএমের সভা-সমাবেশে আহ্লাদিত হওয়ার কারণ দেখছে না রাজনৈতিক মহল। সিপিএমের একাংশও মনে করছে, রাজ্য-রাজনীতিতে শুধু এই ভিড়ের প্রচার করে তেমন কোনও লাভ হবে না। রাজ্য থেকে বিদায় নেওয়ার আগে ব্রিগেডের সমাবেশের ভিড় ছিল ঐতিহাসিক। কিন্তু সমূলে উৎপাটিত হয়েছিল পার্টি। আর এখন তো দীর্ঘ বছর ক্ষমতার বাইরে রয়েছে দল। অধিকাংশ জায়গায় বুথ ভিত্তিক সংগঠন অত্যন্ত নড়বড়ে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, প্রথমত এখনও রাজ্যে সেই পরিস্থিতি হয়নি যে সিপিএমের ছত্রছায়ায় গিয়ে আন্দোলনে শরিক হবে লোকজন। যারা সভা-সমাবেশ-মিছিলে আসছেন তাঁরা বেশিরভাগই হার্ডকোর সিপিএম বা শরিক দলের সদস্য-সমর্থক। তাঁরা আগেও দলে ছিলেন। সেভাবে নতুন মুখের দেখা নেই। সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানেও মধ্যবয়স্ক বা প্রৌঢ়ের সংখ্যা যথেষ্ট ছিল। ছাত্র-যুবদের ক্ষেত্রে ডানপন্থীদের মতো সিপিএমেও রাজ্য বা জেলাতে পারিবারিক সূত্রে নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এই ভিড়ে মূল পজিটিভ দিক কিছুটা হলেও একত্রিত হওয়ার বার্তা দেওয়া। দ্বিতীয়ত ওই ভিড় হচ্ছে প্রচার।
এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি ও গরুপাচার কাণ্ডে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব গ্রেফতারের মতো টাটকা ইস্যু রয়েছে রাজ্যে। বিরোধীরা লাগাতার আন্দোলনও করছে। যদিও এখনও অবধি সেই আন্দোলন সাধারণের মধ্যে সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। বর্ধমানে বামেদের আইন-অমান্যে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বাধে। গ্রেফতার করা হয় সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে। ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে সিপিএম বলতে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস মিছিলের ভিতর লোক ঢুকিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তাহলে সেদিনের ভিড়ে বিরোধী দলের লোকজনও ছিল! ডেডিকেটেড নেতৃত্ব-কর্মী ছাড়া জেনেবুঝে ভিড়ের প্রচার করা হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিগত পুরসভা নির্বাচনেও অনেক ক্ষেত্রে বামেরা দ্বিতীয় হয়েছে। একই সঙ্গে বিজেপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ করেছে সিপিএম। ভোট লুঠের পরও দ্বিতীয়তে বিশেষ খেলা আছে বলেই মনে করে অভিজ্ঞমহল। এবার বামেদের সভা-মিছিলে ভিড়, পুলিশের আক্রমণাত্মক ভূমিকাও গুরুত্ব বাড়িয়েছে। সামনের পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল জানান দেবে কতটা এগিয়েছে বামেরা।