ফের সিবিআই হেফাজত অনুব্রত মণ্ডলের। আরও চার দিন সিবিআই হেফাজতে থাকতে হবে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতিকে। কেষ্ট মণ্ডল প্রভাবশালী, এই তত্বেই আদালতে অনুব্রতর জামিনের আবেদনের বিরোধীতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী মক্কেলের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিনের আবেদন করেছিলেন। উভয়পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে আদালত অনুব্রত মণ্ডলকে ফের চারদিন সিবিআই হেফাজতের মঞ্জুর করে।
শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। পাল্টা জামিনের বিরোধিতা করে ফের একবার কেষ্ট মণ্ডলকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় সিবিআই। আদালতে গোয়েন্দা সংস্থার আইনজীবী দাবি করেন, অনুব্রত মণ্ডল খুবই প্রভাবশালী। তদন্তে অসহযোগিতা করছেন এই তৃণমূল নেতা। তাঁর দেহরক্ষী সহগল ৭২ দিন বেফাজতে রয়েছেন। যাঁর সঙ্গে অনুব্রতর কথপোকথনের প্রমাণ মিলেছে। গরু পাচের অনুব্রত মণ্ডল সরাসরি যুক্ত। ফলে তাঁকে হেফাজতে রাখা প্রয়োজন। এরপর ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত কেষ্ট মণ্ডলকে সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী।
যদিও এদিন সকালেই সিবিআই তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ উড়িয়ে দেন অনুব্রত মণ্ডল। নিজাম প্যালেস থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ''সিবিআই যা বলছে বলুক। সিবিআইকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। আমার নামে কোনও বেনামি সম্পত্তি নেই।'' ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষে আজ ফের আলিপুর কম্যান্ড হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয় তৃণমূল নেতার। তারপর তাঁকে পেশ করা হয় আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে।
এ দিন আবারও 'গরু চোর' স্লোগান শুনতে হল বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতিকে। কলকাতা থেকে আনার পর প্রথমে রানিগঞ্জে ইসিএলের একটি গেস্ট হাউসে কিছুক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তৃণমূল নেতাকে। সেখান থেকে বেরনোর মুখেই অনুব্রত মণ্ডলকে লক্ষ্য করে 'গরু চোর' স্লোগান ওঠে। ঠিক তার কিছু সময় পরেই আসানসোল কোর্ট চত্বরেও 'গরু চোর' 'গরু চোর' বলে স্লোগানে ঝড় ওঠে। কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই কোর্টে ঢুকে পড়েন অনুব্রত মণ্ডল।
আরও পড়ুন- ‘টাকা-ভর্তি’ ব্যাগ নিয়ে ভিনরাজ্যের হোটেলে পার্থ-ঘনিষ্ঠ? নয়া অভিযোগে তোলপাড়
অন্যদিকে অনুব্রতকে আদালতে তোলার সময় রীতিমতো ভিড় জমে গিয়েছিল। 'কেষ্ট মণ্ডল জিন্দাবাদ' স্লোগান তুলতে থাকেন অনুব্রতর অনুগামীরা। কোর্ট চত্বরে থাকা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের নিশানায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীও। বিজেপি বিধায়ককে বিঁধে তাঁদের টিপ্পনি, ''চোর চোর চোরটা, শিশিরবাবুর ছেলেটা।'' অনুব্রত মণ্ডলকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি তৃণমূলকর্মীদের।
গরু পাচার মামলায় আষ্ঠেপৃষ্টে নাম জড়িয়েছে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় মেজাজটা এখনও বেশ চড়াই রয়েছে কেষ্টর। শনিবার তাঁর ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষ। নিয়মমাফিক আজ ফের এক দফায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় তৃণমূল নেতার। শনিবার সকালে নিজাম প্যালেস থেকে বের করে আলিপুর কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রত মণ্ডলকে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বোলপুরের ভোলে ব্যোম রাইস মিলে হানা দিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। ওই রাইসমিল থেকেও একাধিক সম্পত্তির নথি মিলেছে বলে দাবি সিবিআই সূত্রের। মিলেছে পাঁচটি গাড়ি। রাইসমিলটিতে অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা ও প্রয়াত স্ত্রীর অংশিদারীত্ব রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। হেফাজতে নিয়ে পেয়ে অনুব্রতকে সেব্যাপারে জেরা করতে মরিয়া কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।