গরু পাচার কাণ্ডে তদন্তের গতি আরও বাড়াল সিবিআই। বুধবার কাকভোরে বোলপুরে হানা কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসারদের। অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ বোলপুরের ১৯ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশিতে যান তদন্তকারীরা। এছাড়াও এদিন বোলপুরেই কেষ্ট মণ্ডল ঘনিষ্ঠ আরও তিনজনের বাড়িতেও হানা দেয় সিবিআই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেলে চলে অভিযান। একসঙ্গে একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে এদিন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছে সিবিআই।
গরু পাচার মামলার তদন্তে নেমে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় সিবিআইয়ের দুঁদে অফিসারদেরও। ইতিমধ্যেই নামে-বেনামে কেষ্ট মণ্ডলের পাহাড় প্রমাণ সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। কোটি-কোটি টাকার এই সম্পত্তি গরু পাচারের টাকাতেই গড়া হয়েছে বলে দাবি সিবিআই সূত্রের। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি, তাঁর কন্যা, প্রয়াত স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। শুধু তাই নয়, অনুব্রত মণ্ডলের আত্মীয় ও অন্য ঘনিষ্ঠদেরও বিপুল সম্পত্তি রয়েছে বলে দাবি সিবিআই সূত্রের।
আরও পড়ুন- জেলে জেরা পর্বের মুখে কুলুপ কেষ্টর, অসহযোগিতার অভিযোগ সিবিআইয়ের
গত কয়েক দিনে বীরভূম-বর্ধমানের একাধিক রাইসমিলে হানা দেন সিবিআই অফিসাররা। ওই প্রতিটি রাইসমিলের সঙ্গেই অনুব্রত মণ্ডলের সরাসরি যোগ রয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। গরু পাচারের টাকাতেই ওই রাইসমিলগুলি কেনা হয়েছিল কিনা তার তদন্তও চলছে।
এদিকে, বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ হঠাৎই বোলপুরে পৌঁছে যায় সিবিআই। প্রথমেই বোলপুরের ১৯ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভিতরে ঢুকে যান সিবিআইয়ের চার অফিসার।
আরও পড়ুন- এবার বিধানসভায় মানিক ভট্টাচার্য, তবুও সিবিআইয়ের কাছে এখনও তিনি ‘নিখোঁজ’
এই বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মণ্ডলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে বোলপুরেই এক চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের অফিসে যান তদন্তকারীরা। সেখান থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে শুঁড়িপাড়ার বাড়িতে ফিরিয়ে এনে ফের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় তৃণমূল কাউন্সিলরকে। একটানা সাড়ে ৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের পর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সিবিআই দল। অন্যদিকে, এদিনই বোলপুরে তৃণমূলকর্মী সুদীপ রায় ও বোলপুরের উকিলপট্টিতে আরও এক কেষ্ট ঘনিষ্ঠ দোলনকুমার দে'র বাড়িতেও চলে সিবিআই তল্লাশি। বাড়ি ঘিরে রেখে তল্লাশি কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসারদের।
এছাড়াও এদিন অনুব্রত মণ্ডলের হিসেব রক্ষক পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীশ কোঠারির বাড়িতেও এদিন হানা দেন সিবিআই অফিসাররা। এর আগে গরু পাচার মামলায় এই মণীশ কোঠারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। এদিন বোলপুরে তাঁর বাড়িতেও তল্লাশিতে যান গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ প্রত্যেকের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানোর পাশাপাশি তাঁদের বয়ানও রেকর্ড করা হয়। একসঙ্গে একাধিক জায়গায় তল্লাশিতে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। সেই সসব নতি এবার খতিয়ে দেখার পালা।
গরু পাচার মাময়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা উৎস সম্পর্কেই কেষ্ট ঘনিষ্ঠদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা। তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই বয়ান পরে জেলে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকেও শোনানো হবে। সেই বয়ান নিয়েও জেলে জেরা করা হবে অনুব্রত মণ্ডলকে, এমনই খবর সিবিআই সূত্রের।