ডক্টর সুজীব কর
Climate Change: পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ুগত পরিবর্তন সমগ্র বিশ্বের রূপরেখা ও প্রকৃতিকে পরিবর্তন করতে চলেছে । ভারতের ক্ষেত্রেও এই বিষয়ের অন্যথা ঘটছে না। ভারতের জলবায়ু বিশেষভাবে মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের ফল । ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের গৃহীত একটি পদক্ষেপ ছিল রাজস্থানের থর মরুভূমি অঞ্চলে সবুজায়ন যার ফলে পরিবর্তিত হয়েছে ভারতের জলবায়ুগত পরিমণ্ডল। বাস্তবিক ক্ষেত্রে মৌসুমী বায়ু ভারতে প্রবেশ করে উত্তর-পশ্চিম ভারতে অবস্থিত থর মরুভূমির উপর সৃষ্ট নিম্নচাপের আকর্ষণে তবে বর্তমানে এই অংশে কোন নিম্নচাপ সৃষ্টি হচ্ছে না, কারণ হলো বিস্তীর্ণ সবুজায়ন । তাই অবিবেচকের মতো সবুজায়নের পদ্ধতি বাস্তবিক ক্ষেত্রে ক্ষতিসাধন করে।
তাই স্বাভাবিকভাবে প্রকৃত নিম্ন চাপের কেন্দ্র ভেঙে গিয়ে কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিভক্ত হয়ে গেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মধ্যপ্রদেশের ওপর সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের উপর সৃষ্ট নিম্নচাপ। এই দুই নিম্নচাপের আকর্ষণে একদিকে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ ভারতের উপর দিয়ে প্রবেশ করে মধ্য ভারত ও দক্ষিণ ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে আর অপরদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে প্রবেশ করে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত এবং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে । কিন্তু বৃষ্টিহীন হয়ে পড়ছে দক্ষিণবঙ্গ,ঝাড়খন্ড,বিহার,উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলএবং পাঞ্জাব ও হরিয়ান।
যার ফলে ভারতীয় ভূখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে জলীয় বাষ্পের বিন্যাস ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এই সময়ে অর্থাৎ জুলাই মাসের মধ্যে জেট বায়ু উচ্চ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থান করার কথা । কিন্তু সূর্যের উত্তরণের সাথে সাথে উত্তর ভারতের ভূখণ্ডের উপর যে পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের সমপরিমাণ জলীয় বাষ্প না থাকায় সেই তাপ প্রশমিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যে কারণে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে যে জেট বায়ু থাকার কথা তা প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার উত্তরে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বেশ কিছু স্থানে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো শ্রীনগরের তাপমাত্রা ৩৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হিমাচল প্রদেশের বেশ কিছু স্থানের তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রভৃতি।
সময়ের সাথে সাথে ভারতের জলবায়ু পরিমণ্ডলের ওপর বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এবং ধীরে ধীরে উত্তর ভারতের বেশ কিছু স্থান বৃষ্টিহীন হয়ে পড়বে এবং শুধু তাই নয় এর ফলে নষ্ট হবে কৃষি কাজের পদ্ধতি এবং পরিবর্তিত হয়ে যাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা। ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি সম্ভাব্য বিপর্যয়কে ডেকে আনতে পারে।বিশ্ব উষ্ণায়নের যে থাবা আগামী ১০ বছরের মধ্যে অত্যন্ত প্রকট হবে বলে আশা করা যায় তাতে উত্তর ভারতের কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ অশনি সংকেত।
আরও পড়ুন : < Kashmir Heatwave: সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার, গরমে কলকাতাকে টেক্কা, দাবদাহে নাকাল শ্রীনগর, কাশ্মীরে তাপপ্রবাহ >
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে উপকূলবর্তী অঞ্চলের বেশ কিছু স্থান সমুদ্রের তলায় তলিয়ে যেতে পারে এই বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে। ভারতবর্ষের কয়েক কোটি মানুষ পরিবেশগত রিফিউজিতে পরিণত হতে পারেন। ঠিক একইভাবে ভারতবর্ষের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত বেশকিছু রাজ্যের কৃষিকার্য এবং বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কিত জীবিকায় এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে তৈরি হবে প্রচুর পরিমাণে ছদ্ম বেকার। ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি ভয়ংকর ইঙ্গিত কে বহন করছে।