এর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ে পুরো-বাজেট ভাষণ পড়বেন কি না তা নিয়ে চরম বিতর্ক হয়েছে। প্রথম পাতা, শেষ পাতার কিছু অংশ পড়েই ছেড়ে দিয়েছেন পূর্বতন রাজ্যপাল। এমন ঘটনা নিয়ে টানা-হ্যাঁচড়া হয়েছে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে। দিনের পর দিন রাজ্যপালের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাই ছিল বাংলার ফি সপ্তাহের রোজনামচা। কিন্তু এক রাজ্যপাল বদল হতেই বিধানসভা ও রাজভবনের চিত্রপটই বদলে গিয়েছে। আগে রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পরত তৃণমূল কংগ্রেস। এখন রাজ্যপালকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি। ধনকর বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে কালো পতাকাও দেখেছেন নানা সময়ে।
সাধারণত রাজ্য সরকারের লেখা ভাষণ পাঠ করেন রাজ্যপাল। ২৬ জানুয়ারি রাজভবনে এক অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দবোস 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়েছিলেন। তা নিয়ে বঙ্গ বিজেপি রেরে করে উঠেছিল। তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডি লিট প্রদান অনুষ্ঠানেও তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ্যপাল। মমতার সঙ্গে অন্য় রাজনীতিক লেখকদের নাম তুলনা করতে গিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নাম করেন সিভি আনন্দ বোস। এক্ষেত্রেও অসন্তুষ্ট হন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। এবার একেবারে বিধানসভায় রাজ্যপালের বাজেট বক্তব্যকে ঘিরে স্লোগান, বয়কট, বিক্ষোভ চলল বিধানসভায়।
আরও পড়ুন- ধনকড়-আনন্দ বোস ‘এক নন’, এক বছর আগে কী করেছিলেন বিজেপি ‘বন্ধু’ জগদীপ?
এদিন বাজেট বক্তব্য নিয়ে বিজেপি বিধায়করা স্পষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল কেন রাজ্য সরকারের দেওয়া মিথ্যাভাষণ পড়বেন? আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন করছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশংসা করা হয়েছে রাজ্যপালের ভাষণে। সাধারণত রাজ্য সরকারের লিখিত বয়ান পড়েন রাজ্যপাল। তবে এর আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজ্য সরকারের দেওয়া লিখিত বয়ান না পড়া নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। বিধানসভা চত্বরেই রাজ্যপালকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়করা। রাজভবনকে বিজেপির সদর দফতর বলেই দিনরাত তৃণমূলের ছোট-বড় নেতৃত্ব কটাক্ষ করতেন। এখন কি তাহলে ঘড়ির কাঁটা বিপরীত দিকে ঘুরছে? এই চর্চাই চলছে রাজনৈতিক মহলে।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের জয় বাংলা স্লোগানকে কড়া আক্রমণ করেছিলেন একদা রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। তিনি বলেছিলেন, 'জয় বাংলা' বিদেশি স্লোগান। এই স্লোগান দেওয়া ঘোরতর অন্যায়। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তথাগত রায়। রাজভবনের তখতে ব্যক্তি বদলাতেই বদলে গেল রাজভবন, বিধানসভার চিত্রপট। রাজ্যপাল হায় হায় স্লোগানও শোনা গেল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপি বিধায়কদের গলায়। অথচ জগদীপ ধনকড়ের কাছে প্রায়সই নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজভবনে হাজির হতেন শুভেন্দু। তবে সিভি আনন্দ বোসের প্রতি তৃণমূল বা বিজেপির এই মনোভাবের কবে আবার আমূল পরিবর্তন হয়, সেদিকেই লক্ষ্য রাজনৈতিক মহলের।