Advertisment

একাহিনী চোখে জল আনবে! মৃত্যুর ৪৭ দিন পর বিদেশ থেকে শ্রমিকের দেহ বাড়িতে

বছর চারেক আগে পরিবারের জন্য রুটি-রুজির জোগাড়ে বিদেশে কাজে গিয়েছিলেন এই শ্রমিক।

IE Bangla Web Desk এবং Joyprakash Das
New Update
coffined body of murshidabad labour returned home from saudi arabia

দমদম বিমানবন্দরে আনা হয় শ্রমিকের দেহ। সেখান থেকে দেহ ফেরানো হয় বাড়িতে।

বছর চারেক আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন পরিবারের জন্য রুটি-রুজির জোগাড়ে। তারপর আর দেশে ফেরা হয়নি। মঙ্গলবার দেশে ফিরলেন, কিন্তু এলেন কফিনবন্দি হয়ে। মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার করজোড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজাহান আলি। আচমকাই ভিনদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বছর আটত্রিশের সাজাহানের। মৃত্যুর ৪৭ দিন পরে ৩ যুবকের প্রচেষ্টায় ফিরল প্রবাসী ওই শ্রমিকের কফিনবন্দি দেহ।

Advertisment

মুর্শিদাবাদের নিমগ্রাম বেলুড়ি হাইস্কুলের শিক্ষক মোহম্মদ কামাল হাসান, বেলডাঙার সেলিম রেজওয়ান ও মালদার মেহবুব আলাম। এই তিন যুবকের প্রচেষ্টায় ফিরেছে সাজাহান আলির নিথর দেহ। সৌদি আরব থেকে ভারতে সাজাহানের দেহ ফেরাতে ১১,০০০ রিয়াল যা ভারতীয় মূল্যে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে, এই তথ্য জানতে পারেন তিন যুবক। তারপরেই সৌদিতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাজাহান আলির পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা জানান সেলিম-মেহবুবরা। বিদেশমন্ত্রক নিজেদের উদ্যোগে বাংলার ওই যুবকের মৃতদেহ দেশে ফেরানোর বন্দোবস্ত করে।

এপ্রসঙ্গে কামাল হাসান বলেন, ‘চার বছর আগে সাজাহান আলি সৌদি আরবের দাম্মামে গিয়েছিলেন কাজ করতে। প্রথমে তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। তার কিছু দিন পর সেখানে কাজে সমস্যা হওয়ার কারণে কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য এক জায়গায় ঠিকা শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন তাঁর কোনও বৈধ কাগজ ছিল না।

আরও পড়ুন- ‘ছেলেটা পরশু ফিরেছে, এরই মধ্যে ৫-৬ জায়গায় রেড!’, ইডিকে ধুয়ে দিলেন মমতা

সেই সময় তিনি বাড়ি আসার অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু হয়ে উঠেনি। ২০২৩ সালের ৫ জুলাই সাজাহান আলির সঙ্গী তাঁর বাড়িতে খবর দেন যে সাজাহান হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছেন। ওখানকার পুলিশ ওঁর মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের লোকজন কী করবেন ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না।'

মৃতের বাবা আশরাফ আলি বিষয়টি জানান পাশের গ্রামের কামাল হাসানকে। ঘটনাটি শুনে কামাল হাসান তাঁর ২ বন্ধু মালদার মেহবুব আলাম এবং বেলডাঙার সেলিম রেজওয়ানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিন বন্ধু মিলে আলোচনা করেন যে কী করে মৃতদেহটি দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।

আরও পড়ুন- দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদের জন্য বিরাট সুখবর, বড় ঘোষণা মমতার, সঙ্গে ছাড়ের পর ছাড়

তারপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা সৌদি আরবের ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের দূতাবাসে যোগাযোগ করবেন। ৬ জুলাই মেহবুব আলাম ভারতীয় দূতাবাস এবং ডেথ সেকশনে যোগাযোগ করেন। গুরুত্বপূর্ণ নথি পাঠানো হয় ওই দফতরে। ভারতীয় শ্রমিকের মৃতদেহ দেশে পাঠানোর জন্য ১১,০০০ রিয়াল খরচ হবে বলে জানানো হয়। ভারতীয় মূল্যে ওই টাকার অঙ্ক প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মতো। বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়। সাজাহানের পরিবারের সদস্যদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মৃত সাজাহানের তাঁর ছেলে পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে, মেয়ে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও বাবা-মা।

আরও পড়ুন- যাদবপুরে ছাত্র-মৃত্যু: ‘আলু’-র গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’? কালই ডাকল বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি

মেহবুব আলাম ও সেলিম রেজওয়ান আরবে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করে জানান যে ওই পরিবারের তরফ থেকে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। দূতাবাস যাতে মৃতদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করে সেই আবেদন জানান তাঁরা। শেষমেশ তাঁদের আবেদনে সাড়া দেয় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। সরকারি তহবিলের টাকায় মঙ্গলবার সকালে সাজাহানের কফিনবন্দি দেহ ফেরে দমদম নেতাজি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় মরদেহ।

saudi arabia West Bengal Migrant labour West Bengal News Death
Advertisment