এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ একাধিক আধিকারিক গ্রেফতার হয়েছেন। প্রাথমিকে দুর্নীতির নিয়োগ নিয়েও তোড়জোড় চালাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা। তবে কলেজ সার্ভিস কমিশনে দুর্নীতির বহর এসএসসিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করে আসছে ২০১৮ সিএসসি এমপ্যানেলড ক্যান্ডিডেট অর্গানাইজেশন-এর সদস্যরা। নেতা-মন্ত্রীসহ কলেজ সার্ভিস কমিশন ও শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের একাংশ, অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের একাংশ এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে তাঁরা একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছেন। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি বৃহত্তর আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে চলেছেন সংগঠনের সদস্যরা। তার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যে বিচরের জন্য আদালতে ১৭০টি মামলা দায়ের হয়েছে। রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছে কলেজ সার্ভিস কমিশনের এমপ্যানেলডভুক্তরা। ইন্টারভিউয়ের স্কোরশিট প্রকাশ্যে এলেই দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে আন্দোলনকারী এমপ্যানেলডভুক্ত চাকরি প্রার্থীরা। এসএসসির থেকে কলেজ সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ দুর্নীতিতে আরও নেতা-মন্ত্রী জড়িয়ে যাবে বলে দাবি করেছে আন্দোলনকারীরা। প্রাথমিক, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে একযোগে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়ে দিলেন তাঁরা।
২০১৮ সিএসসি এমপ্যানেলড ক্যান্ডিডেট অর্গানাইজেশন-এর সহসভাপতি সেখ আব্দুল হামিদের কথায়, 'কারা কীভাবে চাকরি পেয়েছে তা মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে তথ্য-প্রমানসহ জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে সরকার এবিষয়ে কোনও ভাবেই চিন্তিত নয়। দুর্নীতির তদন্ত বা বঞ্চিতদের জাস্টিস সরকার চাইছে না। আইনি লড়াইতে আরও নেতা-মন্ত্রী জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ২০১৮ সালে বিজ্ঞাপন, ২০২০ সালে নিয়োগ শুরু হয় সিএসসিতে। শুধু লিস্ট নয়, ৯৪ পাতার ডকুমেন্ট দিয়েছি মুখ্যমন্ত্রীকে।' এসএসসির মতো এখানেও প্যানেলের বাইরে থেকেও নিয়োগ হয়েছে বলে সেখ আবদুল হামিদ দাবি করেছেন। ২০১৮ সিএসসি এমপ্যানেলে নেট, সেট, পিএইচডি আছে, তাঁরা অনেকেই তালিকায় নেই।
এসএসসি নিয়োগ নিয়ে আন্দোলনকারীদের একাংশের সঙ্গে সরকারি কর্তৃপক্ষের তবু মাঝে-মধ্যে বৈঠক হয়েছে। একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এমন কোনও বৈঠক এখনও পর্যন্ত হয়নি। প্রতিশ্রুতিও জোটেনি। হামিদ জানিয়েছেন, 'এই নিয়োগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত আদালতে ব্যক্তিগতস্তরে ১৭০টি মামলা হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছি। দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে অবশ্যই বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। সেখানে পুরো শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ নিয়ে ভুক্তভোগীরা একযোগে রাস্তায় নামব। সরকার যদি দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করে তাহলে সরকারকে আয়না দেখানোর দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। এখনও পর্যন্ত সরকারপক্ষের প্রতিনিধি বা মন্ত্রীদের সঙ্গে কোনও বৈঠক হয়নি। আমরা আলোচনার জন্য চিঠি দিয়েছে কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। সরকার কখনও সিগন্যালও দেয়নি বৈঠকের।'
ভূগোলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-এ গোল্ড মেডালিস্ট, ২০১৭-তে পিএইচডি কমপ্লিট, প্রিয়াঙ্কা কুন্ডুর। তাঁর কথায়, 'প্রথমে একটু ধন্দে থাকলেও পরে আরটিআই করে বুঝতে পারি দুর্নীতি হয়েছে।' তাঁর দাবি, 'ইন্টারভিউতে আমাকে কম নম্বর দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত ৪০-৫০ শতাংশ নম্বর পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা চাকরি পেয়েছে। আমরা বঞ্চিত হয়েছি। ইউজিসির কোনও গাইডলাইন মানা হয়নি।'
২০১৮-তে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল কলেজ সার্ভিস কমিশন। নিয়োগ হয়েছে ২০২০-তে। নিয়োগ পরীক্ষায় মোট নম্বর ছিল ১০০। তার মধ্যে একাডেমিক ৫০, বাকি ৫০ নম্বরের মধ্যে রিসার্চ পাবলিকেশন ৫, কলেজে পড়ানো ৫, ইন্টারভিউ বোর্ড ৪০। প্রিয়াঙ্কা বলেন, 'আমার ৬টা রিসার্চ পাবলিকেশন সত্বেও পেয়েছি ৩। এক্ষেত্রে বরাদ্দ নম্বর ছিল ৫। একাডেমিক পেয়েছি ৫০-এ ৪১, বাকি ৫০-এ পেয়েছি মাত্র ১৩। কী করে এত কম নম্বর পেয়েছি সেটাই আমার সব থেকে বড় প্রশ্ন। এখানেই মূল কারসাজি হয়েছে।' প্রিয়াঙ্কার দাবি, 'সিবিআই তদন্ত হলে এসএসসির থেকেও বড় দুর্নীতি ধরা পড়বে কলেজ সার্ভিস কমিশনে।'
একদিকে প্যানেলের বাইরে থেকে নিয়োগ ও পাশাপাশি ইন্টারভিউয়ের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ওই সংগঠনের সদস্যদের। মোদ্দা কথা একাধিক মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্বেও অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিরা অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন দাবি করেই আদালতের পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, রাস্তায় নেমেছেন চাকরি প্রার্থীরা।