ভাগ্য ফেরাতে লোকে লটারির টিকিট কাটছেন ঠিকই। কিন্তু পুরস্কার জিতেছে কেউ, এমন কথা শোনা যাচ্ছে না বহুদিন।
নিয়মিত দাম বাড়ছে লটারির টিকিটের। কিন্তু কালেভদ্রেও নাকি পুরস্কার মিলছে না, এমন অভিযোগে শিলিগুড়ির খুচরো লটারি বিক্রেতারা তাই দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে প্রতিবাদে নামলেন। অন্যদিকে লটারি শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে বিশাল মাফিয়া চক্র, এই অভিযোগ তুলে আন্দোলনের ডাক দিল দার্জিলিং জেলা যুব কংগ্রেস। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন লটারির নাম দিয়ে নকল লটারি টিকিট বিক্রি হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টিকিট বিক্রি হলেও পুরস্কারের দেখা মিলছে না। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছে যুব কংগ্রেস।
আরও পড়ুন, ভূস্বর্গ থমথমে, পুজোর মরশুমে কি তাহলে ‘দার্জিলিং জমজমাট’?
শুধু শিলিগুড়ি নয়, উত্তরবঙ্গের যে কোনও শহরে কিংবা গ্রামে দু'কদম হাঁটলেই একটি করে লটারির দোকান চোখে পড়বে, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ। শুধুমাত্র শিলিগুড়ি শহরেই অন্তত কুড়ি হাজার খুচরো লটারি বিক্রেতা আছেন। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন যাবত লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে হারে লটারির বিক্রি হচ্ছে, সেভাবে পুরস্কার পাচ্ছেন না কেউ, এমনই অভিযোগ স্থানীয় লটারি বিক্রেতাদের। লটারির বিক্রি বাড়লেও কেন পুরস্কার পাচ্ছেন না কেউ, তা নিয়ে সংস্থাগুলি কোনরকম জবাবদিহি করতে নারাজ। তাই "বাধ্য হয়ে" শিলিগুড়ির সমস্ত লটারি বিক্রেতা শুক্রবার দোকান বন্ধ করে প্রতিবাদের পথে হাঁটলেন।
সিন্টু প্রসাদ নামের এক খুচরো লটারি বিক্রেতা জানালেন, শুধুমাত্র শিলিগুড়ি নয়, কোচবিহার জলপাইগুড়ি থেকে মালদা পর্যন্ত সমস্ত এলাকার লটারি বিক্রেতারা বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। বলছেন, "আমরা সাধারণ মানুষকে ঠকাতে চাই না। আমরা চাই সঠিকভাবে লটারি খেলা হোক। মানুষ পুরস্কার পাক। তবেই ব্যবসা ঠিক ভাবে চলবে। কিন্তু কেন সেটা চলছে না তার কারণ খুঁজে বের করা দরকার। নইলে এই আন্দোলন আরও বড় আকার ধারণ করবে"।'
আরও পড়ুন, শিলিগুড়ির ফুটপাথ রক্ষা ও যানজট সমস্যার সমাধানে এবার পথে নামবেন গৌতম দেব
অন্যদিকে দার্জিলিং জেলা যুব কংগ্রেসের তরফে এদিন শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বেআইনি লটারি বিক্রি বন্ধ করার আবেদন করা হয়েছে। যুব কংগ্রেসের প্রদেশ স্তরের নেতা মোহন শর্মা জানালেন, "লটারি নিয়ে বিশাল মাফিয়া চক্র কাজ করছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। প্রথমত আমাদের রাজ্যে সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে মিজোরাম নাগাল্যান্ড ভুটানসহ বাইরের রাজ্যের লটারি। সমস্ত রাজস্ব নিয়ে চলে যাচ্ছে অন্য রাজ্য বা দেশ। তাতে আমাদের রাজ্যের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। পাশাপাশি এখানে যত লটারি বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে প্রচুর নকল লটারি আছে বলে অভিযোগ আসছে। এটা যদি হয় তাহলে এখানকার মানুষ সব দিক থেকে সর্বনাশের মুখে পড়বেন। পাশাপাশি যত্রতত্র ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া, আইনি ছাড়পত্র ছাড়াই যে কেউ লটারি বিক্রি করছে। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। আমরা চাই নিয়মমাফিক লটারি বিক্রি হোক। নইলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব আমরা।"
আশ্চর্যের বিষয়, লটারির বড় ব্যবসায়ীরা এই প্রসঙ্গে কোনও কথাই বলতে চাইছেন না। তাই ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য।