সেজে উঠেছে আলোর শহর চন্দননগর! প্রতিমা থেকে মণ্ডপ সজ্জা, সবেতেই চমকের ছড়াছড়ি। ভাইফোঁটার পর যখন উৎসবের শেষবেলায় বিদায়ের সুর, ঠিক তখনই আলোর শহর সেজে উঠেছে তার সর্ববৃহৎ উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য। গোটা জেলা জুড়েই কার্যত উৎসবের মেজাজ। দূরদূরান্ত থেকে লোকেরা ঠাকুর দেখতে আসেন। এমনকী বিদেশ থেকেও মানুষজন আসেন আলোর শহরের বৈচিত্র্য উপভোগ করতে।
কোভিড কালের আতঙ্ক কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছে সকলেই। উৎসবে তাই এই বছর বাড়তি পাওনা। কিন্তু মন খারাপ চন্দননগরের। কেন? দুপুর ২ টো থেকে পরের দিন সকাল ৬ টা পর্যন্ত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী গাড়ি। জিটি রোডে বন্ধ থাকবে অটো টোটোর মত গণ পরিবহন। তবে দিনের বেলায় কেমন ভিড় হয় তা দেখেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
অটো-টোটোর মত গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন শহর বাসী। চিন্তা ঠাকুর দেখবেন কী করে! ফি বছর ঠাকুর দেখার জন্য শহরবাসীর একটা বড় অংশ নির্ভর করত বিশেষ পুজো পাসের ওপরেই। কিন্তু এবার পুজো শুরু হতেই উধাও পাস এমনই অভিযোগ চন্দননগর বাসীর। ফলে কাজে যেতে বা বিশেষ প্রয়োজনে কোথাও যেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শহর বাসীকে। শহরবাসীর আক্ষেপ। পুলিশি সক্রিয়তা বাড়তেই সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের।
যদিও এমন অভিযোগ কার্যত মানতে চাননি পুলিশ প্রশাসন। তাদের যুক্তি অন্যান্য বছর আট হাজারের কাছাকাছি পাস ইস্যু করা হয়। এই বছর কোভিড পর্ব মিটতে ভিড়ের আগাম সতর্কতায় ১০ হাজারের কাছাকাছি পাস ছাপানো হয়েছে। প্রশাসনের অনুরোধ যদি কেউ পাস না পেয়ে থাকেন তবে চন্দননগর থানায় যোগাযোগ করুন, পুলিশ সর্বদাই আপনার সমস্যা সমাধানে পাশে রয়েছে।
ষষ্ঠীর দিন ঘড়ির কাটায় ঠিক দুপুর দেড়টা, চন্দননগর থানার সামনে পাসের জন্য দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে চন্দননগরের বাসিন্দা পেশায় নার্স তনুশ্রী দেবনাথ, তাঁর কথায়, পঞ্চমী থেকেই এবার প্রচণ্ড ভিড়। ট্রেন থেকে স্টেশনে নেমে আগের দিন হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। অটো-টোটো সহ সকল গণ পরিবহন বন্ধ। মানুষজন যারা ঠাকুর দেখতে আসছেন তাদের কথা মাথায় রেখেই হয়তো এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু শহরে তো আরও মানুষ রয়েছেন এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের পেশার তাগিদে রোজই বেরোতে হচ্ছে। শহর জুড়ে গণ পরিবহণ বন্ধ করে দিলে সাধারণ মানুষ কীভাবে যাতায়াত করবেন”।
আরও পড়ুন : < রেল কোচকে বদলে ফেলা হল রেস্তোরাঁয়! ঘরের কাছেই জিভে জল আনা খাবার খেতে যাচ্ছেন তো? >
তারই মত বিশেষ পুজো পাসের সন্ধানে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে চন্দননগরের খলিসানি অঞ্চলের বাসিন্দা অনিমিখ সামন্ত। পেশায় কলেজ শিক্ষক অনিমিখ বাবুর কথায়, “সকালে যাও বা দু’একটা টোটো-অটো মিলছে দুপুরের পর থেকে সে সব উধাও। সোমবার সকালেই কলেজে যেতে হবে বাড়ি ফিরব কী করে সেটাই বড় চিন্তার”। সারাদিন পরিশ্রমের পর ভিড়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা যে কার্যত অসম্ভব তা মেনে নিয়েছেন তিনি। তাই পাসের লাইনে দাঁড়িয়ে।
এদিকে গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় রীতিমত বিপাকে পড়তে হচ্ছে আম-আদমি কে। লক্ষ্মীগঞ্জ অঞ্চলের বাসিন্দা অভিষেক নন্দী। কাজ করেন সেক্টর ফাইভের আইটি হাবে। স্ত্রী পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। বাড়িতে বৃদ্ধা অসুস্থ মা। প্রতিদিন মাকে দেখতে ত্রিবেণী থেকে আয়া আসেন বাড়িতে। সকাল আটটার মধ্যেই তিনি ঢুকে যান। তাকে সব বুঝিয়ে অফিসে বেরোন অভিষেক বাবু। তার কথায়, “সকল প্রকার গণ পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায়, এই কদিন উনি কাজে আসতে পারবেন না। কীভাবে অফিস করব সেটাই এখন চিন্তা”।
যদিও এব্যাপারে চন্দননগর সেন্ট্রাল জগদ্ধাত্রী পুজোর এক কর্মকর্তা বলেন, “টোটোর সংখ্যা যে ভাবে বেড়ে গিয়েছে তাতে বন্ধ না করলে কোন উপায় ছিল না। মানুষজন শান্তিতে প্রতিমা দর্শন করতে পারতেন না। তবে নির্দিষ্ট সময় ধরে কিছু সংখ্যায় টোটো-অটো চালানোর অনুমতি দেওয়া হলে সাধারণ মানুষের সমস্যা কিছুটা হলেও মিটত” ।