মোবাইল-কম্পিউটারে মজেছে পূর্ব বর্ধমানের পালা-শ্রীরামপুরের ক্ষুদে ছাত্র-ছাত্রীরা। দামোদর নদের তীরের এই গ্রামের দুস্থ ছেলেমেয়েরা ঘরের মোবাইলকে কম্পিউটারের মতো ব্য়বহার করে প্র্যাকটিস করছে। সাগর স্যারের কথায়, 'ওটিজি কোড সহযোগে কী-বোর্ড ও মাউস ব্যবহার করছে তারা।' প্র্যাকটিস করছে এমএস ওয়ার্ড, এমএস পেইন্ট, এমএস পাওয়ার পয়েন্ট, এমএস এক্সেল। বেসিক কম্পিটারের শেখা যাচ্ছে সহজেই। ব্যাংকের অস্থায়ী কর্মী সাগর পণ্ডিত এভাবেই উদ্যোগ নিয়ে গ্রামে কম্পিউটার শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলছেন গ্রামের ছোটদের।
সাগর পণ্ডিতের কথায়, 'গ্রামের গরীব ছেলে-মেয়েরা পয়সার অভাবে কম্পিউটার সেন্টারে গিয়ে শিখতে পারে না। অনেক পরিবার ঠিকমতো দু'মুঠো খেতে পায় না। আজ একটা কম্পিউটারের বাজারমূল্য কমপক্ষে ২০হাজার টাকা। তাঁদের কম্পিউটার কেনার ক্ষমতা নেই। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কম্পিউটার কিনে বাড়িতেই কম্পিউটার শেখানো শুরু করি।' সাগর বলেন, 'তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এখানে শিখে বাড়িতে প্রাকটিস করবে কী করে? তা নাহলে তো ভুলে যাবে। ভাবতে গিয়েই মাথায় আসে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কথা। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে মাইক্রোসফট ৩৬০ ডাউনোলোড করে ওটিজি কর্ড দিয়ে কী বোর্ড ও মাউস কানেক্ট করলেই কম্পিউটার হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।'
সাধারণত এখন মানুষের কাছে কিছু না থাক একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন রয়েছে। সাগরের কথায়, 'তখন আমি ভাবলাম অ্যান্ড্রয়েড ফোন এখন সবার ঘরে আছে। তখন গুগল থেকে কয়েকটা ফ্রি সফটওয়্যার আমি ডাউনলোড করে দেখলাম একটা মাউস ও একটা কী বোর্ড কিনলেই হবে। অর্থাৎ তিন-চারশো টাকা খরচ করলে বাড়িতেই মোবাইলে কম্পিউটার প্র্যাকটিস করা যাবে। মোবাইলের কী প্যাড ব্যবহার করলে বাইরের প্রতিযোগিতায় সমস্যা হবে। আমি নিজে প্র্যাকটিস করে দেখেছি। এমএসওয়ার্ড, এমএস পেইন্ট, এমএস পাওয়ার পয়েন্ট, এমএস এক্সেল ফোনের দ্বারা সবাই প্র্যাকটিস করছে। ছাত্র-ছাত্রীরাও খুব খুশি।'
সঞ্চিতা মুদি, রূপম পণ্ডিত, সামিম মির্জারা সাগর স্যারের কাছে কম্পিউটার শিখছে। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে তাঁদের কম্পিউটার শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সাগর। বছর পয়ত্রিসের সাগর জানান, দুস্থ ও গরীব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যেন সৎ পথে থেকে রোজগার করতে পারে তার জন্যই এই উদ্যোগ। ক্ষুদে সামিম মির্জা বলছে, 'কম্পিউটার বাড়িতে না থাকলেও মোবাইলে প্র্যাকটিস করি। স্যারের নির্দেশ মতো মোবাইলে মাউস ও কী বোর্ড কানেক্ট করে নিয়েছি। আমার বন্ধুরাও সেভাবে প্র্যাকটিস করছে।'