পুরনির্বাচনে এরাজ্যে একমাত্র তাহেরপুরে জয়ী হয়েছে সিপিএম। নদিয়ার এই পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে বামেরা। তাছাড়া রাজ্যের বাকি সমস্ত পুরসভায় ঘাসফুলের পতাকা উড়ছে। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে ঝালদা পুরসভা ছিনিয়ে নিতে চলেছে কংগ্রেস, এমনই দাবি করছে দলের পুরুলিয়া জেলার সভাপতি নেপাল মাহাত। ঝালদা পুরসভার কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলরও তাঁদের পক্ষে ভোট দেবেন বলে দাবি করেছেন পুরসভার কংগ্রেস দলনেতা বিপ্লব কয়াল। যদিও পুরচেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়ালের বক্তব্য, 'আমাদেরই জয় হবে।'
পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভায় মোটি আসন ১২টা। কংগ্রেস ও তৃণমূল ৫টা করে আসনে জয় পায়। বাকি ২টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় নির্দলপ্রার্থীরা। বোর্ড গঠনের কয়েক দিন আগে কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুন হন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নেপাল মাহাত বলেন, 'আমরা তখন ৫ থেকে কমে ৪ জন কাউন্সিলর হয়ে যাই। স্বাভাবিক ভাবে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ঝালদায় বোর্ড গঠন করে। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়ী হয়। ফের কংগ্রেসের ৫ জন কাউন্সিলর হয়। অনাস্থা আনতে গেলে সময় লাগে ৬ মাস। পুরচেয়ারম্য়ানকে অপসারণের জন্য় অনাস্থার নোটিস দিয়েছে আমাদের কাউন্সিলররা। চেয়ারম্যান সভা ডাকেনি, আজ ভাইস চেয়ারম্যানও সভা ডাকেনি। আমাদের তিন কাউন্সিলর আগামী ৭ তারিখ তলবি সভা ডাকতে চলেছে।' বর্ষীয়াণ এই কংগ্রেস নেতার দাবি, 'পুরবোর্ডে কংগ্রেসের জয় পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।'
ঝালদা পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিপ্লব কয়াল বলেন, 'অনাস্থায় ৬ জন কাউন্সিলর স্বাক্ষর করেছি। তবে সর্ব মোট ৯টি ভোট আমরা পাব এবিষয়ে আমি সুনিশ্চিত। তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলায় তলবি সভা ডাকছেন না চেয়ারম্য়ান। খাতায়কলমে তৃণমূলের ৫ জন কাউন্সিলর, কি করে চেয়ারম্যান পদে থাকেন তিনি? বিবেক থাকলে পদত্যাগ করতেন।' বিল্পব জানান, আগামীকাল নোটিস করে ৭ অক্টোবর তলবি সভা ডাকব। পুলিশ-প্রশাসনের মদতে তৃণমূল আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিপ্লববাবু।
১৩ অক্টোবর অনাস্থা নোটিস দিলেও ২৮ তারিখে তলবি সভা ডাকতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়াল। নিজেই একথা বলে জানান, ২৪-২৭ অক্টোবর ছুটি ছিল। সুরেশবাবু বলেন, '২৮ তারিখে ফের একটা চিঠি আসায় কনফিউজড হয়ে পড়ি। পরে অবশ্য বুঝেছিলাম ২৮ অক্টোবরও সভা ডাকতে পারতাম। তলবি সভা ডাকার সময় রয়েছে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। আশা করছি ভাইস চেয়ারম্যান নিশ্চয় সভা ডাকবেন। চেয়ারম্যানের আশা তাঁরাই জয়ী হবেন। তিনি বলেন, '৬ জন সই করেছে। দেখুন আমার হিসাবে বলে সম্ভব হবে না। ওরা যদি ভাবে সম্ভব করতে পারে হবে।' 'আমিও নির্দল থেকে স্বপ্ন দেখেছিলাম,' সেকথাও বলছেন চেয়ারম্যান।
এদিকে বিপ্লব কয়ালের দাবি, 'পুরআইন অনুযায়ী ১৩ অক্টোবর তলবি সভার জন্য চিঠি দিয়েছি, অর্থাৎ সেই দিন থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত চেয়ারম্যান সভা ডাকতে পারতেন। তারপর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যানের সুযোগ ছিল সভা ডাকার। তাছাড়া ২৮ তারিখের আগেই তো সভা ডাকতে পারতেন।' চেয়ারম্যানের নৈতিক অধিকার নেই ওই চেয়ারে বসে থাকার।
পুরনির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুট ও সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। যদিও ঘাসফুল শিবির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল। পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভায় অনাস্থার ভোটাভুটির জন্য তলবি সভা ডাকা না ডাকা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যদি কংগ্রেসের দাবি মতো এই পুরসভা তৃণমূলের হাতছাড়া হয় তাহলে এবার রাজ্যে প্রথম পুরবোর্ড দখল করবে হাতশিবির।