Advertisment

'৫০০ আর ২৮শে চুল্লু পেলেই ব্যস, দিদি জিন্দাবাদ’, অকপট কংগ্রেসের কৌস্তভ বাগচী

'দিল্লি বা এখানকার নেতা যেই হোক তৃণমূলে সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কথা বলবে তার কপালে দুঃখ আছে।'

author-image
Joyprakash Das
New Update
kaustav bangchi

মমতাকে নিশানা কৌস্তভের।

কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে কংগ্রেসের বির্ষীয়াণ নেতা পি চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। তৃণমূলের সঙ্গে দোস্তি কোনওমতেই মানবেন না বলেই মন্তব্য তাঁর। এই যুব কংগ্রেস নেতা চাঁচাছোলা ভাষায় শুধু বিরোধীদের নয়, নিজেদের দলের অকর্মন্য নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ উগরে দিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায়। তাছাড়া ২৮ টাকার চুল্লুর পাউচ ও লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে তুলোধোনা করলনে বাঙালিকে। কৌস্তভের স্পষ্ট কথা, মানুষের জোট হলেই ২০২৪-এ পরাস্ত হবে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের বিজেপি।

Advertisment

প্রশ্ন- কংগ্রেসের ছাত্র-যুবরা কতটা মজবুত করছে সংগঠনকে?

কৌস্তভ- নেতৃত্ব তৈরি হওয়াটা আমাদের একটা প্রক্রিয়া। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী, সাংসদদের সিংহ ভাগই তো তো কংগ্রেসের প্রোডাক্ট। কংগ্রেস নেতা তৈরির সরবরাহ কেন্দ্র। রাহুল গান্ধি বার বার বিচারধারার কথা বলেন। সেটাই এই মুহূর্তে ছাত্র-যুবদের বোঝাতে চাইছি। হাইলি কোয়ালিফায়েড ছেলে-মেয়েরা আসছে। ১৯৭৭ থেকে দল ক্ষমতায় নেই, প্রায় ৪৫ বছর। তা সত্বেও ছাত্র-যুবরা দলের প্রতি আনুগত্য় দেখাচ্ছে সেটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা।

প্রশ্ন- তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার মতো পরিস্থিতি এরাজ্যে আছে কি?

কৌস্তভ- কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এতোবড় বেইমান মুখ্যমন্ত্রী, বেইমান নেত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আনার জন্য কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধির যে অবদান ছিল তা যদি কেউ অস্বীকার করে তার থেকে বেইমান পৃথিবীতে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের এখানে দলীয় নেতৃত্বের একাংশ অত্যন্ত রিজিড ছিল আসন বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অল্প সিট দিচ্ছিলেন। সে সময় জোট না হলে এখনও পর্যন্ত সিপিএমই ক্ষমতায় থাকত। কিন্তু সেই সময় সনিয়া গান্ধি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্পূর্ণ সমর্থন করেছেন। এবং আমাদের অনেক নেতাদের কথা শোনা হয়নি। কংগ্রেস সচেষ্ট ছিল তৃণমূলের নেতত্বে লড়াই করতে। কংগ্রেসকে দিনে দিনে একবারে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলল। জোট থাকাকালীন আমাদের দল ভেঙেছেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে নিলেন। যাদের নাম বলছি এরা পলিটিক্যাল প্রস্টিটিউট। প্রস্টিটিউটদেরও অপমান করা হবে। আমরা একটা জায়গায় স্পষ্ট জোটের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। দিল্লির কোনও নেতা পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জোট করার কথা বলে সেই নেতাকে এয়ারপোর্টে নামতে দেব না।

প্রশ্ন- দলে যদি বোঝাপড়ার আলোচনা হয়?

 

কৌস্তভ- আমার দলের কর্মীরা মার খাবে, মিথ্যা কেস খাবে, আর আমি এখানে ভাল-ভদ্র ভাষায় কথা বলব? তৃণমূলের সঙ্গে গলা জড়াজড়ি করব, তা হবে না। যে নেতা এখানে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কথা বলবেন, জোটের কথা বলবেন একদম বৃন্দাবন দেখিয়ে দেওয়া হবে। কোনও ছাড়াছাড়ি নেই। আমি কংগ্রেস ছাড়ার লোক নই, আমি দলেই থাকব। দলে থেকেই আমি দলের নেতাদের বোঝাব কর্মীদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেললে কি আবস্থা হয়। যে তৃণমূলের হাতে আমাদের ছেলেরা মার খাবে, জেল খাটবে তাঁদের পক্ষে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কথা বলা সম্ভব নয়। মানসিক ভাবে সম্ভব নয়। আমার তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে কথা বলি। আমাদের যদি কোনও সময় জোট করে তৃণমূলের সঙ্গে একমঞ্চে ভাষণ দিতে হয় সেদিনের থেকে মরে যাওয়া ভাল।

দিল্লির অবজার্ভার একবার বলেছিলেন এখানকার জোটের কথা। আমি বলেছিলাম, কোন নেতারা জোটের কথা বলছেন নাম দিন ছাত্র-যুবরা বুঝে নেবেন। কংগ্রেসে যে বিরাট গণতন্ত্র আছে কোথাও নেই। সাধারণ নির্বাচনের মতো ভোট হয় এখানে। আমাদের কারও কাছে দাসখত লিখে দল করি। দিল্লি বা এখানকার নেতা যেই হোক তৃণমূলে সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কথা বলবে তার কপালে দুঃখ আছে।

প্রশ্ন- রাজ্য নানা ইস্যুতে তোলপাড়, কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটে কি করতে পারবে?

কৌস্তভ- কেন্দ্রীয় বা রাজ্য কংগ্রেস নয়, সম্পূর্ণটাই জেলা ও ব্লক স্তরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। লোকাল ইক্যুয়েশন পঞ্চায়েতে কাজ করে। অধীর চৌধুরীও বার বার বলছেন ওপর থেকে কিছু বলছি না। সিপিএমের তরফ থেকেও কিছু বলা হয়নি। নীচের তলায় কার সঙ্গে এডজাস্ট হবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে স্বাধীনতা দেওয়া আছে ব্লক স্তরের কংগ্রেস বা জেলা নেতৃত্বকে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের জোট হতে চলেছে যদি বাঙালির শিঁরদাড়াটা ঠিকঠাক থাকে তো। এখন যদি বাঙালি ৫০০টাকা ও ২৮ টাকার চুল্লুর পাউচে ভুলে টুলে যায় তাহলে অন্য ব্যাপার। গড সেভ বাঙালি। কিছু করার নেই। পাশাপাশি তৃণমূলের উটকো ছাটকা ভোট লুট করতে আসছে দেখে খিল দিয়ে ভয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে এই বাঙালি জাতিটার প্রতি সমবেদনা ছাড়া আর কিছু জানানো যাবে না। এরপরও মানুষ যদি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ না করে তাহলে আমরা রাজনৈতিক দল যতই বাঁচানোর চেষ্টা করি তা পারব না।

প্রশ্ন- মমতার ক্যারিস্মা কি ২০২১-এ বিপুল জয়ের কারণ?

 

কৌস্তভ- বিজেপি এই নির্বাচনটা জিততে চাইনি। তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেছে।

প্রশ্ন- মূল কারণ কি কি?

কৌস্তভ- বিজেপি ১৮টা আসন পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হাওয়া ছিল। বাম-কংগ্রেসের সেই পরিস্থিতি ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে যে টুপি পড়াচ্ছে সেই টুপি মানুষ খাচ্ছে। ৫০০টাকা, ২৮ টাকার চুল্লুর পাউচ। বাঙালি এই মুহূর্তে হয়ে গিয়েছে একটা ভিখারি জাতি। আমার কথায় কেউ যদি খারাপ ভাবে আমার কিছু এসে যায় না। হাত পেতে ৫০০ টাকা নেব। বাড়িতে বসে কোনও কাজকর্ম করব না। ২৮ টাকার চুল্লুর পাউচ খেয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খাব। ব্যস দিদি জিন্দাবাদ হয়ে যাচ্ছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর টাকা পাচ্ছে। এভাবে অর্থনীতি ঘুরপথে কোন পথে যাচ্ছে মানুষ তো বুঝতে পারছে না। এই লোভ, লালসার পর্দাটা যতদিন না মানুষের মধ্যে থেকে চলে যাবে ততদিন তৃণমূলকে কোনও ভাবে সরানো যাবে না।

প্রশ্ন- এখানে বিজেপির আর কোনও সুযোগ আছে?

 

কৌস্তভ- বিজেপির এখানে কোনও অস্তিত্ব নেই। বিজেপির চান্স কিছুটা ছিল। কিন্তু ওদের সংগঠন কিছু নেই। হাওয়ায় হাওয়ায় সব কিছু হয়েছে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো বিজেপিকে অনেকটা প্রোমোট করেছে। বিজেপির সেই জিনিসটা হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজার চেষ্টা করলেও এখানে বিজেপির আর কিছু হবে না। কারণ এই রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে পছন্দ করে না। বাম বা আমাদের কাছে বড় সুযোগ আছে। আমরা এনক্যাশ করতে না পারলে আমাদের ব্যর্থতা। ১৯৭৭ থেকে ক্ষমতায় নেই দল। মানুষ বিজেপিকে পছন্দ করছে না, তৃণমূলকে চাইছে না। বামেরা দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় ছিল। যে সুযোগ ছিল কংগ্রেস তা নিতে পারছে না এটা বলতে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই।

প্রশ্ন- লোকে কি কংগ্রেসে আসতে চাইছে?

 

কৌস্তভ- তৃণমূলের অনেক সাংসদ, মন্ত্রীরা স্বীকার করেছে কংগ্রেস একটু শক্তিশালী হলে আসতে পারে। তাঁরা বিজেপিতে যাবে না। কিন্তু টাকা কামানোর লোভ মোহমায়া ত্যাগ করে আসাটা খুব ডিফিকাল্ট। তৃণমূলের অবস্থা খারাপ হলে কংগ্রেসের অবস্থা ভাল হলে এঁরা আসবে। কোনও অসুবিধা নেই। কংগ্রেসে আসাটা বিচারধারার প্রশ্ন। ভিক্টর শত প্রলোভন থাকা সত্বেও বিজেপি বা তৃণমূলে না গিয়ে আমাদের দলে এসেছেন। এটাও বড় পাওনা।

প্রশ্ন- যাঁরা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাঁদের দলে স্বাগত জানাবেন কখনও?

কৌস্তভ- চোর-জোচ্চরদের নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। চোর-জোচ্চরদের নিলে ছাত্র-যুবরা বুঝিয়ে দেবে। যে যত বড়ই নেতা হোক তৃণমূল বা অন্য দল থেকে আসা আমাদের পুরনো দিনের নেতাদের রিপ্লেস না করে দেয়। এটা হবে না। ভিক্টর তো জয়েন করল। কোনও পদ দেওয়া হল? এটা কংগ্রেস দল। তৃণমূল নয় যে জয়েন করবে সেই সহসভাপতি। যশবন্ত সিনহাও সহসভাপতি, আবার কচুবনে লাদ খেল জয়প্রকাশ মজুমদার সেও সহসভাপতি। যোগ দিলেই সর্বেসর্বা হয়ে যাবে তা হবে না।

প্রশ্ন- রাজ্যে গরম গরম ইস্যু সত্বেও সেভাবে কংগ্রেসকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না?

কৌস্তভ- অধীররঞ্জন চৌধুর বাড়তি চাপ নিয়ে দলে কাজ করলেও অন্য নেতাদের কাজকর্ম হওয়া উচিত ছিল তা হচ্ছে না, ঘাটতি আছে। একথা অপকটে স্বীকার করছি। অধীর চৌধুরি এই বয়সে যে চাপ নিচ্ছেন ভাবা যায় না। বয়স্ক বা অভিজ্ঞ নেতাদের ভাবা উচিত হয় পার্টি করব না ছেড়ে দেব। এই করে দলটার বারোটা বাজানোর কোনও অধিকার তাঁদের নেই। যদি মনে করে ছেড়ে দেব বাড়িতে বসে থাকব। না পোষালে দল ছেড়ে দাও। এই সমস্ত নেতাদের দাওয়াই রেডি আছে। আমরা এই পথটাই বেছে নিয়েছি। ২০১৬ থেকে দলের যে বিরোধী দলনেতার পদ ছিল এটা আমরা জানতেই পারিনি। হাজার মতবিরোধ সত্বেও বলতে দ্বিধা নেই শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা হিসাবে সফল।

প্রশ্ন- ভারত জোড়ো যাত্রায় নতুন কোনও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কি?

কৌস্তভ- ভারতজোড়ো যাত্রার মাধ্যমে মানুষের উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশ যেখানে আমাদের অবস্থা খারাপ সেখানেও আশা জাগাচ্ছে। যেহেতু এই পদযাত্রা কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর তাই যে রাজ্য গুলি ছুঁতে পারছে। এই রাজ্যগুলি একটা জায়গা থেকে পদযাত্রা শুরু করে নির্দিষ্ট জায়গায় এতত্রিত হবে। এই রাজ্যে সাগর থেকে পাহাড় একটা কর্মসূচি হচ্ছে। সাগর থেকে শুরু করে দার্জিলিং পর্যন্ত যাবে। এখানেও উন্মাদনা শুরু হয়েছে। আগামী দিন কংগ্রেসটাই ভবিষ্যত। রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো যাত্রায় মানুষর ব্যাপক কৌতুহল, এটাই আমাদের পাওনা।

 

প্রশ্ন- বিজেপির বিরুদ্ধে আপ বা তৃণমূলের ভূমিকা কি?

কৌস্তভ- দেখুন একটা জিনিস মানুষের কাছে পরিস্কার হচ্ছে যে কংগ্রেসই বিজেপির মোকাবিলা করতে পারবে। আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে তা সম্ভব নয়। তৃণমূল, আপ অন্য রাজ্যে গিয়ে ভোট কাটতে পারবে। ওদের দিয়ে বিরোধী ভোটে ভাগ বসানো করাচ্ছে বিজেপি। বিজেপির সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারে মানুষ।

প্রশ্ন- বিজেপির বিরুদ্ধে কি ধরনের জোট চাইছেন?

কৌস্তভ- আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত এই মানসিক অবস্থায় আসতে হবে। সত্যি লড়াই করতে চায়। যেটা তৃণমূল ও আপকে দেখে বোঝা যায় না। তৃণমূলের ভূমিকা মানতে পারছে না কংগ্রেস। বিজেপির বি-টিম হয়ে কাজ করছে। বিজেপি যা শক্তি সঞ্চয় করেছে তাতে দেশে একটা বৃহত্তর জোট  দরকার। রাজনৈতিক দলগুলির জোটের থেকে মানুষের জোট হওয়া দরকার। এই জোট হলে বিজেপিকে উৎখাত করা কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার।

CONGRESS West Bengal koustav bagchi
Advertisment