২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলবদলের বড় খেলা দেখেছে বঙ্গ রাজনীতি। ১৪৮ জন বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন যাঁদের গায়ে ঘাসফুলের গন্ধ ছিল। ভোট পরবর্তী দলবদলও প্রত্যক্ষ করেছে বাংলা। সেই ধারা এখনও অব্যাহত। তবে এই প্রথম খড়গপুরের বিজেপি বিধায়ক অভিনেতা হিরন চট্টোপাধ্যায় তথা অভিষেকের প্রাক্তন সঙ্গীর দলবদলের জল্পনা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে। এমনকী হিরন স্বয়ং সাংবাদিক বৈঠকের পরও নানা জল্পনা অব্যাহত। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন হল তাহলে কি একে অপরে ফের দরজা-জানলা খোলা রাখতে চলেছেন?
এই মুহূর্তে বাংলায় দলবদল থমকে যাওয়ায় বিস্মিত রাজনৈতিক মহল! এই থমকানোর পিছনে নানা কারণ হাতড়ে বেরাচ্ছেন পর্যবেক্ষক মহল। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরও ব্যাপক সংখ্যায় ঘরওয়াপসি ঘটেছিল। একেবারে শীর্ষ বিজেপি নেতা বিধায়ক মুকুল রায় থেকে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া সব্যসাচী দত্ত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতৃত্ব তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। অনেকে দলে এসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি বড় ধরনের দলবদল আটকে রয়েছে।
আরও পড়ুন- আমরা গণতন্ত্রের পুতুল-পুতুল খেলছি, ক্ষমতা আসলে ২৯৪ ভূমিশ্বরের হাতেই: ডাঃ কুণাল সরকার
এর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের সভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৫ মিনিটের জন্য দরজা খোলার কথা বলেছিলেন। খুলবেন কিনা তা নিয়ে সভায় হাজির তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন যুবরাজ। যদিও এখনও দরজা খোলার নমুনা দেখা যায়নি। আগামী সপ্তাহে কেশপুরে অভিষেকের জনসভার দিকে লক্ষ্য রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। এরই মধ্যে তিনি যে হেস্টিংসে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও বৈঠক করেননি তা প্রমাণ করতে গিয়ে হিরন পাল্টা জানলা খোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। দরজা-জানলা খোলার বাস্তবতার দিকে নজর রয়েছে পর্যবেক্ষক মহলের।
গত বছর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন তৃণমূল ঘোষণার পর প্রকাশ্যে আদি তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই মুখ খুলেছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, পরবর্তীতে আদি ও নব্য তৃণমূল এক যোগে কাজ করার নীতিতে দল সাংগঠনিক ক্ষেত্রে আপাতত অনেকটা ব্যালান্স। এখন নতুন করে ফের দলে যোগদান শুরু হলে নয়া সমীকরণ তৈরি হতে পারে। সামনেই ২০১৪ লোকসভা নির্বাচন। সেক্ষেত্রে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
আরও পড়ুন- বারবার ডায়মন্ড হারবারে কেন রিভিউ বৈঠক? চটে লাল শুভেন্দু, দিলেন ‘সাংঘাতিক’ হুঁশিয়ারি
মুকুল রায় ঘরোয়া আলোচনায় বলতেন, কোনও বাড়তি সুযোগ-সুবিধা না থাকলে দল ছেড়ে অন্য দলে যাবে কেন? অতীতে দেখা গিয়েছে, ফরোয়ার্ড ব্লক বিধায়ক সুনীল মণ্ডল তৃণমূলে এসে বর্ধমান পূর্ব লোকসভার টিকিট পেয়েছেন। তৃণমূলের সাংসদ হয়েছেন। কংগ্রেস বিধায়ক সৌমিত্র খাঁ বিজেপির টিকিটে বিষ্ণুপুরের সাংসদ হয়েছেন। অভিজ্ঞ মহলের মতে, যাঁর হাত ধরে দলবদল শিল্পের রূপ নিয়েছিল ২০২১-এর বিধানসভার পর দেখা গেল মুকুল রায় নিজেই দল বদলাতে তৃণমূল ভবনে হাজির হয়ে গেলেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, কোনও বিশেষ চুক্তি ছাড়া দলবদলের ঘটনা সাধারণত ঘটে না। এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে কোনও বিধায়ক দলবদল করতে পারে কিনা তা নিয়ে সেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বও জোরালো ভাবে কোনও মন্তব্য করতে সাহস পাচ্ছে না। সরাসরি জবাব না দিয়ে অন্য কোনও প্রসঙ্গ টেনে বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, পরের বছর ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। দরজা-জানলা খোলার প্রয়াস যে চলতে থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।