Jagadhatri Puja 2024: বয়স মাত্র ১৫। এত কম বয়সে বাগবাজার সর্বজনীনের মত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পূজার প্রতিমার মুখ গড়ে করে সারা ফেলে দিয়েছে অনিকেত পাল। একসময় বাগবাজার সর্বজনীন এর প্রতিমা তৈরি করতেন চন্দননগর কুমোরপাড়ার বিখ্যাত শিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল। কয়েক বছর আগে তিনি প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর ভাইপো অসিত পাল মূর্তি বানানোর কাজ শুরু করেন। এবারে বাবার কাজে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে অসিত বাবুর ছেলে অনিকেত ।
চন্দননগর বঙ্গ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র অনিকেতের সেই ৫-৬ বছর বয়স থেকেই বাবা, কাকাদের কাজ দেখে দেখে মূর্তি তৈরিতে আকর্ষণ জন্মে যায়। ছোট ছোট মূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করতো তখন থেকেই। এবারে বাবা অসিত পাল বাগবাজার মূর্তি তৈরির সময় ছেলেকে সঙ্গে নেন। দায়িত্ব দেন মায়ের মুখাবয়ব তৈরি করার। অনিকেত তিনদিন ধরে সময় নিয়ে মায়ের মুখ ফুটিয়ে তোলে। চোখও আঁকে সে। এইটুকু বয়সে বাগবাজার সার্বজনীন এর মত ঐতিহ্যশালী পুজোর প্রতিমার মুখমন্ডলী গড়ে তোলবার জন্য ওই পূজা কমিটির পক্ষ থেকে তাকে পুরস্কৃতও করা হয়।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে গেলে বাগবাজারের প্রতিমা দেখতেই হবে । এবার ১৯০ বর্ষে পা দিল চন্দননগরের বিখ্যাত বাগবাজার সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো। প্রতিবছর অগণিত মানুষ ভিড় জমান এই পুজো দেখতে। এবারও ষষ্ঠী থেকেই কার্যত জনজোয়ার আলোর শহরে। তবে সমাজমাধ্যমে বেশ কয়েকজন বাগবাজারের প্রতিমার মুখ নিয়ে অভিযোগ জানান, তাতে দাবি করা হয়, দেবীর মুখের আদল একেবারেই বদলে গিয়েছে। মূর্তি আগের কার মত তাঁরা পূজা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন এই প্রাচীন পূজার একটা সংস্কার আছে। এভাবে এক খুদে শিল্পীর হাতে প্রতিমার মুখ ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়াতেই সেই ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। এতটা 'এক্সপিরিমেন্ট' করা উচিত ছিল না। পূজা কমিটির দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। যদিও পুজো কমিটির তরফেও এক বিবৃতিতে গোটা বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন - প্রায় ১০০ ভরি সোনায় সাজ দেবীর! তাকলাগানো মণ্ডপসজ্জা, চন্দননগরের এই পুজো না দেখলে পস্তাবেন!
এপ্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভুনাথ ঘটক বলেন, 'আগে যিনি করতেন তিনি মারা গেছেন তাই তাঁর ভাইপো এবার মূর্তি বানিয়েছেন। তিনিই এবার নিজের ছেলেকে দিয়ে প্রতিমার মুখ তৈরি করেছেন। একটু আলাদা হয়েছে আগের থেকে মানছি কিন্তু খারাপ তো হয়নি। একটি বাচ্চা ছেলে করেছে , তার প্রতিভাকে কুর্নিশ জানানো উচিত! তা না করে তার কাজকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে এটা দুর্ভাগ্যজনক।
প্রতিমার মুখ যে আগের মতো হয়নি সেটা মেনে নিয়েছে অনিকেত ও। সে জানায়, 'একটু আলাদা হয়েছে। গলাটা ছোট লাগছে। প্রথম করলাম তো। তবে যতটা সম্ভব সুন্দর ভাবে করতে চেষ্টা করেছি। আগামীদিনে সুযোগ পেলে আরও ভাল করার চেষ্টা করবো'। বিষয়টি নিয়ে চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী জানান, আমি এখনও দেখিনি। আজ যাবো। তবে জনশ্রুতি যে মূর্তির গড়নে কিছু অসামঞ্জস্য হয়েছে। বিষয়টি বারোয়ারীর নিজস্ব ব্যাপার। যদি কোন ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েও থাকে তাহলে আগামী দিনে তাঁরা নিশ্চয় ঠিক করে দেবেন। এবিষয়ে আমার কোন মন্তব্য করা উচিত নয়'।
পুজো কমিটির তরফে যুগ্ম সম্পাদক শুভজিৎ গোস্বামী বলেন, " দর্শনার্থীরা অনেকেই প্রতিমার মুখ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এবার প্রতিমা গড়েছেন এক শিশুশিল্পী। তার বয়স মাত্র ১৫। আমরা চাইনা কোনভাবেই কোন সমালোচনা তার আগামী দিনে প্রতিমা গড়ার উৎসাহকে নষ্ট করে দিক। তবে এটাও ঠিক আমাদের পুজোর যে গরিমা রয়েছে তা কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে বলে অনেকে দাবি করেছেন। যদি কোন ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকে তা কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে বিসর্জনের পর আমরা আলোচনায় বসবো"। তবে শিশুশিল্পীর প্রচেষ্টাকে পুজো কমিটির তরফে কুর্নিশ জানানো হয়েছে।