লকডাউনে বন্ধ হয়েছে গোটা রাজ্যে। তবু দাপট কমছে না করোনাভাইরাসের। রবিবারেও ঊর্ধ্বমুখী মারণ ভাইরাসের দাপট। শনিবার পর্যন্ত যে সংখ্যা ছিল ১৮, রবিবারেই তা পৌঁছল ২০-তে। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে একজনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ জন। তবে এর মাঝেই রবিবার বাংলায় আক্রান্ত হলেন এক চিকিৎসক এবং একজন ৬৬ বছরের ব্যক্তি। নাইসেড সূত্রের খবর, কলকাতার আলিপুরের কমান্ড হসপিটালের অ্যানেসথেসিস্ট ওই চিকিৎসক দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন কলকাতায়। শনিবার রাতে তিনি অসুস্থতা বোধ করায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার নমুনা পরীক্ষা করা হলে সেই রিপোর্টে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার কথা জানান হয়েছে। অন্যদিকে, বরানগরের ডাফোডিল নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন ৬৬ বছরের ব্যক্তি। এলাকাবাসীদের একাংশের মত সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ ঘুরতে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি সেখান থেকেই এই সংক্রমণ।
এদিকে করোনা আক্রান্ত শেওড়াফুলির বাসিন্দা। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ওই ব্যক্তি। সূত্রের খবর, ২৮ মার্চ ভর্তি হন এই ব্যক্তি। ডায়াবেটিস এবং উচ্চচাপ-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা আছে ওই ব্যক্তির। ১৬ মার্চ থেকে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। ২১ মার্চ জ্বর কমলেও ফের ২২ তারিখ জ্বর আসে। বাড়তে থাকে অসুস্থতা।ইতিমধ্যেই তাঁর পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সূত্রের খবর, তিনি বেশ কয়েকবার দুর্গাপুর যাতায়াত করেছেন।
আরও পড়ুন: লকডাউনে দেশজুড়ে যাবতীয় পণ্য পরিবহনের অনুমতি কেন্দ্রের
এদিকে, করোনা মোকাবিলায় সাংসদ তহবিল থেকে বিপুল অর্থসাহায্য করলেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্যসভার এই সাংসদ দিয়েছেন ৮ কোটি টাকা। এমনকী করোনা রুখতে রাজ্যকে দু'কোটি টাকা অর্থসাহায্য করেছেন অভিষেক মনু সিংভিও। এছাড়াও, নিজেদের সাংসদ তহবিল থেকে অর্থসাহায্য করেছেন তৃণমূলের ২২ জন সাংসদেরাও।
অন্যদিকে, নদিয়ায় করোনা আক্রান্ত ৫ জন তেহট্টের বার্নিয়ায় যে বাড়িতে এসেছিলেন, সেই মোহন মন্ডলের বাড়ি ও তার আশেপাশের সমস্ত এলাকা স্যানিটাইজ করল তেহট্ট মহকুমা প্রশাসন। রবিবার মোহন মন্ডলের বাড়ি স্যানিটাইজ করার জন্য কলকাতা কর্পোরেশনের গাড়ি আসে বার্নিয়ায়। কড়া সতর্কতা অবলম্বন করে দুই কর্মী সমস্ত এলাকা স্যানিটাইজ করেন। মহকুমা প্রশাসনের এহেন উদ্যোগে কিছুটা স্বস্তিতে বার্নিয়া বাসী।
আরও পড়ুন: লকডাউনে এই অর্থনৈতিক শাটডাউন বাড়িয়ে তুলতে পারে মৃত্যু সংখ্যা: রাহুল গান্ধী
করোনা মোকাবিলায় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজকে 'প্রশংসাযোগ্য' বলে উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রবিবার টুইটে তিনি বলেন, "রাজ্য এবং কেন্দ্র যেভাবে করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে তা প্রশংসাযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদাহরণ তৈরি করেছেন।"
এদিকে করোনা মোকাবিলা করতে রাজ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেই কাজ করছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী এবং চিকিৎসকগোষ্ঠী। রবিবার তাঁদেরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদও জানান মুখ্যমন্ত্রী। টুইটে তিনি বলেন, "আমি সমস্ত চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্যাল স্টাফ, পুলিশ কর্মী, সরকারী কর্মী, নিকাশী কর্মী ও অত্যাবশকীয় পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যেভাবে তাঁরা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।"
আরও পড়ুন: গাছের মগডালে কোয়ারেন্টাইন শয্যা বাংলায়
তবে করোনা মোকাবিলায় একজোটে লড়াইয়ের আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আশ্বস্ত করলেন কেন্দ্রীয় সাহায্যেরও। কই সঙ্গে লকডাউনে বাংলায় অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষা ও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও মমতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাংলাকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন মোদী।