সমুদ্রনগরী দিঘার পালকে নতুন এক মুকুট জুড়তে চলেছে শীঘ্রই। পর্যটকদের জন্য বাংলার এই চিত্তাকর্ষক সমুদ্রনগরী এখন আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা শুধুই সময়ের অপেক্ষামাত্র। সব কিছু ঠিকঠাক চলতে থাকলে পর্যটকদের জন্য পুজোর আগেই দিঘার সমুদ্রে এমন এক নতুন পরিষেবা মিলতে পারে যা জানলে অবাক হতেই হবে। দিঘায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের ভরপুর মনোরঞ্জনে এবার তাকলাগানো এই উদ্যোগ দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের।
নতুন কী এমন পরিষেবা মিলতে চলেছে দিঘায়?
গোয়ার মতোই এবার দিঘার সমুদ্রেও নামতে চলেছে সুসজ্জিত প্রমোদতরী। পুজোর আগে পর্যটকদের কাছে যা একটি নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘এমভি নিবেদিতা’ নামে এই প্রমোদতরীটি হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থা তুলে দিয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থার হাতে।
পুজোর আগে দিঘার পর্যটন মানচিত্রে যুক্ত হতে চলেছে এই প্রমোদতরীর পরিষেবাও। ভরপুর বিনোদনের ষোলোআনা মজা নিতে এই প্রমোদতরীতে চেপে পর্যটকরা সমুদ্র বক্ষে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। মাঝসমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগের সুযোগ মিলবে। সমুদ্রে মাছ ধরার পদ্ধতিও সরাসরি দেখার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।
দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানস মণ্ডল জানিয়েছেন, প্রমোদতরীর টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চম্পা নদী ক্যানেল থেকে দিঘা মোহনা হয়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার শৌলা পর্যন্ত চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ভ্রমনপিপাসুদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এই প্রমোদতরী। এখানে পর্যটকদের জন্য থাকবে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি বিনোদনের জন্য গান বাজনার ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই নায়েকালি ব্রিজ সংলগ্ন চম্পা নদী ক্যানেলে জোর কদমে প্রমোদতরী তৈরির কাজ চলছে।
এতদিন পর্যটকরা সৈকত থেকেই সমুদ্রের রূপ উপভোগ করেছেন। এবার প্রমোদতরীতে চেপে সমুদ্রযাত্রার আনন্দও উপভোগ করতে পারবেন তাঁরা। সমুদ্রের তির বরাবর রয়েছে দিঘা থেকে শৌলা পর্যন্ত দীর্ঘ ২৯ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। মাঝখানে রয়েছে ঝাউবন। সব মিলিয়ে এক অপূর্ব এবং মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে ভেসে চলবেন পর্যটকরা। এর আগে কলকাতায় গঙ্গাবক্ষে প্রমোদতরী নামতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে সমুদ্রবক্ষে প্রমোদতরী এই প্রথম। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী পুজোর মরশুমে সমুদ্রবক্ষে প্রমোদতরীতে ভ্রমণের স্বাদ উপভোগের সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।
এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের তরফ থেকে ‘এমভি নিবেদিতা’ নামে ওই ভেসেলটি হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সেই ভেসেল নদীর মোহনায় ঘুরবে। ভেসেল অর্থাৎ প্রমোদতরীতে পর্যটকদের মনোরঞ্জন ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। তা থেকে আয়ও হবে।
হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থার তরফে এই জলযানটি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সহ অন্যান্য কারণে সেই উদ্যোগ শুরু হতে দেরি হয়। ফলে জলযানটি দীর্ঘদিন ধরে পড়েছিল। তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে লক্ষাধিক টাকা খরচ হচ্ছিল হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থার। এই পরিস্থিতিতে হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থাকে ভেসেলটি দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয় দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা। সেই প্রস্তাব অনুমোদনের পর ভেসেলটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘মহুলের জীবনেও যেন একটা শোভন আসে’, মেয়ের সহবাসে আপত্তি করবেন না বৈশাখী
জানা গিয়েছে, ওই জলযানটি দিঘার অদূরে শঙ্করপুরের ন্যায়কালী মন্দির সংলগ্ন সমুদ্র থেকে ছাড়বে। দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণির পাশাপাশি খাঁড়ি এলাকাগুলিতেও ঢুকবে জলযানটি। অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত এই জলযানে রেস্তোরাঁর পাশাপাশি থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা।
সন্ধেয় আলোকোজ্জল পরিবেশে নাচগানের ব্যবস্থাও থাকবে। সেখানে বাউল সহ বিভিন্ন লোকসঙ্গীত এবং আধুনিক গান পরিবেশিত হবে। পর্যটকরা সমুদ্রের শোভা দেখতে দেখতে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। যাত্রাপথে সমুদ্রতীরবর্তী মৎস্যজীবীদের গ্রাম এবং তাঁদের কর্মকাণ্ড দেখার সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন- অভিষেকের হাতেই বড় মা’র নয়া মন্দিরের উদ্বোধন, নতুন মূর্তির প্রতিষ্ঠা পুজোয় নজরকাড়া আয়োজন
যাত্রা শেষে ফের ন্যায়কালী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ফিরে আসবে প্রমোদতরীটি। প্রয়োজনে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান, পার্টি প্রভৃতির জন্যও ভাড়া করা যাবে এমভি নিবেদিতা। এই প্রমোদতরী চালিয়ে যা আয় হবে, তার একটি অংশ পাবে হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থা এবং আর একটি অংশ পাবে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা। এমনই জানা গিয়েছে।