‘ফণী’ তো এল না! কোথায় ‘ফণী’! শনিবারের ভোর থেকে এ প্রশ্নই আউড়ে চলেছে বাংলা। গত দু-তিনদিন ধরে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আশঙ্কায় প্রহর গুনেছে বাংলা। শুক্রবার সকালে ওড়িশায় ফণীর তাণ্ডব দেখে আরও শিউরে উঠেছিল পশ্চিম বাংলা। ফণীর আশঙ্কায় কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সবরকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। ফণী এল ঠিকই, কিন্তু কলকাতাকে সেভাবে ছুঁতে পারল না। বাংলায় ঢুকে এতটাই শক্তি হারাল ঘূর্ণিঝড়, যে শেষ বেলায় ঝড় নিয়ে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসও ঠিকমত মিলল না। মোদ্দা কথা, ফণীর ছোবল থেকে কোনওরকমে বেঁচে গেল কলকাতা।
কিন্তু কীভাবে ফণীর হাত থেকে রক্ষা পেল কলকাতা?
শুক্রবার সন্ধের পরও একাধিকবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছিল, বাংলায় ফণীর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ছুঁতে পারে ১১৫ কিমি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলো না বলেই মনে করছেন আবহবিদদের অনেকে। হাওয়ার তীব্রতার নিরিখে বাংলায় ঢুকে অনেকটাই বেসামাল হয়েছে ফণী। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, কলকাতায় যেখানে ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিমি প্রতি ঘণ্টা ঝড়ের গতি হতে পারত, সে তুলনায় শহরে ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০-৫৫ কিমি। ফলে ফণীর তাণ্ডবে যে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা বাস্তবে না হয়ে অনেকটাই স্বস্তি দিল।
আরও পড়ুন: Cyclone Fani in West Bengal Live: বাংলাদেশে ঢুকল ‘ফণী’, ছন্দে ফিরছে বাংলা
ফণীর ঘায়ে কলকাতার গায়ে কোনও আঁচড় লাগেনি। এটা যেমন স্বস্তিজনক, তেমনই অস্বস্তি বাড়িয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কর্তাদের। কেন? গত কয়েকদিন ধরে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে বারবার জানানো হচ্ছিল, ফণীর জেরে হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিমি থাকবে, সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১৫ কিমি। কিন্তু তা আদতে হলো না। এ নিয়েই কিছুটা হতাশ আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, "অত বেগে ঝড় হয়নি, জনগণের জন্য খুব ভাল খবর। কিন্তু আমরা তো আবহবিদ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাই। কিছুটা মিলল না পূর্বাভাস, ফলে একটু তো খারাপ লাগছেই। এতে আরও অনেক কিছু শেখার রয়েছে।"
কেন শেষবেলায় পূর্বাভাস মিলল না?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাংলায় ঢোকার পর অনেকটাই শক্তি হারিয়ে ফেলে ফণী। তাছাড়া গরম থাকায় জলীয় বাষ্পের সাহায্য মেলেনি। ফলে ঝড়ের তীব্রতার পূর্বাভাস ঠিকমত মেলেনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আরেক কর্তা জি কে দাস বলেন, "কলকাতায় আমাদের পূর্বাভাস ছিল ঝড়ের বেগ হবে ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিমি। কিন্তু কলকাতায় ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৫২ কিমি। এটা পূর্বাভাস, কখনও পুরোটা মেলে, কখনও পুরোটা মেলে না। এটাই স্বাভাবিক।" তিনি আরও বলেন, "দু-এক জায়গায় ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিমি বেগে ঝড় হয়েছে। আমাদের কাছে খবর রয়েছে, বকখালিতে এই গতিতে ঝড় হয়েছে।" অন্যদিকে, ‘আয়লা’র সঙ্গে ‘ফণী’র তুলনা টেনে জি কে দাস বলেন, "আয়লা আমাদের রাজ্য সরাসরি আঘাত হেনেছিল, তাই এত প্রভাব পড়েছিল।"