রাজু ঝা খুন হওয়ার ১০ দিনের মাথায় এবার আইটিআই পাশ করা এক যুবক খুন সেই শক্তিগড়েই। তড়িঘড়ি তদন্তে নেমে নিহতের এক বন্ধুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই নৃশংসভাবে যুবককে খুন কার হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। তবে এই খুনের পিছনে সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কয়লা কারবারি রাজু ঝা খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১০ দিন। যদিও এখনও খনি এলাকার কয়লার কালো কারবারের 'বেতাজ বাদশা' রাজু খুনের কোনও কিনারাই করতে পারেনি পুলিশ। দুষ্কৃতীদের খোঁজে ভিনরাজ্যে গিয়েও চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। তবে এখনও রাজু খুনে একজন দুষ্কৃতীরও নাগাল পায়নি পুলিশ। এরই মধ্যে ফের খুন সেই শক্তিগড়েই।
এবার খুন আইটিআই পাশ করা যুবক তন্ময় মালিক। বছর উনিশের যুবক তন্ময়ের বাড়ি শক্তিগড়ের হীরাগাছির ঘোষ পাড়ায়। যুবক খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ নিহতের এক বন্ধু পিন্টু মুর্মুকে গ্রেফতার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, 'ব্যক্তিগত শত্রুতার জরেই বন্ধু পিন্টুর হাতে খুন হয়েছেন তন্ময়।’
এদিকে একের পর এক খুনের ঘটনায় শক্তিগড়ের বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজু ঝা যেখানে খুন হন সেই জায়গার মাত্র কিছুটা দূরেই রয়েছে হীরাগাছি এলাকা। সোমবার সন্ধেয় সেখানকারই একটি মাঠে তন্ময় মালিকের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। মৃতদেহের পাশে পড়ে ছিল দুটি ব্যাগ। তার মধ্যে একটি ব্যাগ তন্ময়ের বন্ধু পিন্টু মুর্মুর। ব্যাগ পড়ে থাকলেও প্রথমে পিন্টুর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন- জাতীয় তকমা পেতেই নয়া উদ্যমে বঙ্গ আপ, তবুও পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেওয়া অনিশ্চিত!
নিহত যুবকের পরিবার দাবি করে যে পিন্টুই খুন করেছে তন্ময়কে। তবে খুনের কারণ নিয়ে ধন্দে ছিল নিহতের পরিবারের সদস্যরাও। নিহতের পরিবারের অভিযোগ পেয়ে গতকাল রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে নামে পুলিশ। শেষমেশ পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে জেরা করে এবার খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত তন্ময় মালিক নামে ওই যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত হয়।
তন্ময়ের বাবা তাপস মালিক বলেন, 'আমার ছেলে আইটিআই পাশ করেছে। সোমবার ও চন্দননগর থেকে বাড়ি আসে। একটা ভ্যাকসিন নেওয়ার দরকার ছিল ওর। আমরা দু'জনে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ছেলে ওই দিনই চন্দননগর ফিরে যাবে বললে ওকে বাইকে চাপিয়ে হীরাগাছি রেলগেট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলাম। ওই সময় তন্ময় আমায় বলেছিল পিন্টু আসছে। ওই আমায় স্টেশনে নিয়ে যাবে।' তাপসবাবু আরও জানান, ছেলেকে রেলগেটের কাছে নামিয়ে দিয়ে তিনি নিজের কাজের জায়গায় চলে যান।
আরও পড়ুন- দ্বন্দ্ব রুখতে মাস্টারস্ট্রোক তৃণমূলের, এই প্রথম মহিলা চেয়ারপার্সন পেল খড়গপুর
তারপর সোমবার সন্ধে ৭ টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দারা রেলগেটের অদূরে মাঠের মধ্যে তন্ময়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরাই এমন ঘটনার কথা তাঁকে জানান। সেই খবর পেয়ে দ্রুত ওই মাঠে পৌঁছে যান তন্ময়ের বাবা। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, "ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এটা খুনের ঘটনা বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। নিহত যুবকের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে।"