Advertisment

রাজ্যে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত, জনস্বাস্থ্য নিয়ে কোনও হুঁশই নেই সরকারের, কড়া সমালোচনা চিকিৎসক সংগঠনের

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার কাজ করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যেতে পারত বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

author-image
Joyprakash Das
New Update
Dengue cases rising in Bengal, Doctors Association slams Government

ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত, সরকারের ভূমিকায় কড়া সমালোচনা চিকিৎসক সংগঠনের

ফের ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। রাজ্যজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তে এখানে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে বলেও প্রশাসন দাবি করছে। এদিকে চিকিৎসকদের সংগঠন রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার কাজ করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যেতে পারত বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। প্রতিরোধ করতে না পারায় সরকার নানা বাহানা দিচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন।

Advertisment

অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক ডা. মানস গুমটা বলেন, 'ডেঙ্গু প্রতিবছর আমাদের রাজ্যের একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গু সংক্রমণ কমানোর জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু প্রস্তাব আছে। কী করলে ডেঙ্গু কমানো যাবে। বাংলাদেশ থেকে আসছে, গ্রাম শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে। এইসব কারণে সংক্রমণ বাড়ছে, কোনও অযুক্তি বা কুযুক্তি দিয়ে কি ডেঙ্গু রোখা যাবে? আমাকে দেখতে হবে ডেঙ্গু কমানোর জন্য আমাদের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত কী? সেই মতামত যা থাকবে তা যদি আমরা পালন করি, মানুষের চোখে যদি আমরা ধুলো না দিই, জনস্বাস্থ্য়ের প্রস্তুতি যদি ঠিক রাখি। তাহলে এই প্রবণতা কমবে। এটা বলছি না যে ডেঙ্গু একেবারে কমে যাবে। আমাকে মৃত্যু তো কমাতে হবে, আমাকে সেই জায়গায় পৌঁছাতে হবে।'

ডেঙ্গু বা যে কোনও সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত হলে তা প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেয় রাজ্য সরকার। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে। সেই কমিটি নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে চিকিৎসকদের বড় অংশের। মানস গুমটা বলেন, 'এটা আমাদের বেদনার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো হয় না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওই তিন-চার জন ডাক্তার আছেন। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, একজন গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজিস্ট, এরকম ডাক্তাররা সব কমিটির মাথায় থাকেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কোথায়? পশ্চিমবঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নেই? তাঁদের নিয়ে কমিটি করা যায় না? তাঁদের মতামত নেওয়া যায় না? তাহলে আগাম প্রস্তুতিও নেওয়া যায়।'

আরও পড়ুন শুভেন্দুর বড় আশঙ্কা, ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে নাকি এবার বিএসএফের ঘাড়েই দায় ঠেলবেন মমতা!

সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাস বলেন, 'জনস্বাস্থ্যে যাঁরা কাজ করেন বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি তৈরি করার কথা অনেক দিন ধরেই বলেছি। সেটা কখনও তাঁরা করেনি। তাঁরা লোক দেখানো কিছু কমিটি করে। তাঁরা কতটা জনস্বাস্থ্যে কাজ করেছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সেইসব মানুষ যাঁরা সরকারের কথা শুনবে তাঁদের নিয়েই কমিটি করবে। ফলে সেই মতো রিপোর্ট করে সরকারের কাছে জমা দেয়। যাঁর ফলে পুরো সমাজের একটা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।' সজলবাবুর মতে, 'সব থেকে বড় কথা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার জন্য কি করতে হবে না করতে সবাই জানে তা সত্বেও সেগুলি করা হয় না। এগুলো টেক্সট বইতেও আছে। সেটা অনুযায়ী সরকার বা পুরসভা কাজ করে না। তাছাড়া তহবিলও নেই। যার ফলে বছরের বছরের পর একই দশা হয়।'

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেই নানা অজুহাত খাঁড়া করে সরকার। মশা মারতে কামান দাগানো থেকে শুরু করে ব্লিচিং ছড়াতে শুরু করে কর্পোরেশন ও পুরসভাগুলি। এসবও যে কাজের কাজ নয়, সেকথা স্পষ্ট বলছেন চিকিৎসকরা। মানস গুমটা বলেন, 'শহরের রাস্তায় কামান দাগায় ডেঙ্গুর মশা ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। রাস্তায় ব্লিচিং ছড়িয়ে ডেঙ্গুর মশা রোধ করা যায় না। এটা ভুল করছে। ডেঙ্গুর মশা পরিষ্কার জলে জন্মায়। নোংরা নালায় ব্লিচিং ছড়ানোর কথা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রেকমেন্ড করছেন না। ফ্ল্যাট বাড়ির জমা জলের দিকেও পুরসভাগুলির নজর নেই।' 

ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। তথ্য গোপনের অভিযোগও করছেন চিকিৎসক সংগঠনের কর্তারা। তাঁদের মতে, 'কোনওবার বলতে হয় অজানা জ্বর, কোনওবার তথ্য গোপন করা হবে। কোনওবার বলতে হবে বাংলাদেশ থেকে আসছে। কোনওবার বলবেন গ্রামে ডেঙ্গু হচ্ছে শহরে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য।' ডা. মানস গুমটার দাবি, 'এখনও পর্যন্ত যা তথ্য সরকারের কাছে তাতে জানুয়ারি মাস থেকে সংক্রমণ প্রায় ৫ হাজার। তবে প্রকৃত তথ্য আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। জুলাই মাসে সর্বাধিক সংক্রমণ হয়েছে।'

ডা. সজল বিশ্বাসের কথায়, 'বছরের পর বছর একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে লোক দেখানো বিষয় থাকে। প্রি-মরশুমের সময়ে বা এপ্রিল মাস থেকে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাই প্রতিবছর ডেঙ্গু বাড়ছে বা মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আতঙ্ক প্রতিবছরই তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।'

West Bengal Dengue
Advertisment