২০১৮-তে তোড়জোড় করে রামনমবমী পালিত হয়েছে বাংলায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২০-২১-এ ছিল করোনা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের রামনবমী উৎসবকে কেন্দ্র করে উত্তাল হল বাংলা। জমি মসৃনের চেষ্টা সত্ত্বেও বারবার যেন পিছলে যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপির সাফল্য।
২০১৮-এর পর এবারও রামনবমীতে অশান্তির জেরে ফের রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দলসহ হিন্দু সংগঠনগুলি শোভাযাত্রাগুলির আয়োজন করে। হাওড়ার শিবপুর, হুগলির রিষড়া, উত্তর দিনজপুরের ডালখোলার ঘটনাগুলিতে ভিএইচপি, বিজেপিকে দোষারোপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা দাবি উঠেছে, মমতার উসকানিমূলক মন্তব্যের জেরেই ওই হিংসা হয়েছে। এদিকে দুপক্ষকেই দায়ী করছে কংগ্রেস, সিপিএম সহ অন্যরা। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনার ফলে কি ভোট রাজনীতির ফায়দা পাবে বিজেপি?
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের বাংলায় ১৮ আসনে জয়ের ফলে এক লাফে বিজেপির বঙ্গ জয়ে উৎসাহকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে রথ যাত্রার পরিকল্পনা নিয়েছিল বিজেপি। যদিও তখন আর সেই রথযাত্রা করা সম্ভব হয়নি আদালতে রাজ্য সরকারের প্রবল আপত্তিতে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে ঝড় তুললেও ৭৭ আসনে থমকে গিয়েছিল। তাছাড়া নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকট হয় বিজেপির। বিধানসভার উপনির্বাচনগুলিতে কোনও প্রতিরোধই গড়তে পারেনি পদ্মশিবির। বরং সম্প্রতি সাগরদিঘি উপনির্বাচনে ব্যাপক ভোট শুধু কমেনি তৃতীয় স্থান পেয়েছে বিজেপি। বঙ্গ বিজেপির সাফল্যের ঝুড়িতে এখানকার নেতৃত্বের কতটা অবদান তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। জমি প্রস্তুত করে দিলেও হোঁচট খেতে হয়েছে বারে বারে।
আরও পড়ুন- ‘আমাদের লোকেরা হাত পেতে টাকা নিয়ে ধরা পড়েছে’, বিস্ফোরক শোভনদেবের আসল টার্গেট কারা?
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘনঘন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এরাজ্যে আসতে শুরু করে। তৃণমূল তখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের দিল্লি থেকে কলকাতা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করা নেতা বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। পরবর্তীতে বিধানসভা নির্বাচনের আগেও কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা নিত্যদিনই এরাজ্যে আসতেন। এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের বিধানসভায় প্রার্থীও করেছিল বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, বঙ্গ বিজেপিকে যত ধরনের এনার্জি টনিক আছে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতেও রাজ্য জয় হয়নি। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে যাদের ভারত মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সেই কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। তলানিতে ঠেকেছে বিজেপির ভোট। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি ভোট ব্যাংকে ধাক্কা খেতে চলেছে বিজেপি?
আরও পড়ুন- অবরোধ প্রত্যাহার নিয়ে কুড়মি সমাজেই বড়সড় বিভ্রান্তি! নয়া পদক্ষেপে আরও ঝাঁঝ আন্দোলনে
২০১৮-তে রাজ্যে জোরদার ভাবে রামনবমী উৎসব পালিত হয়েছে। তখনও নানা অশান্তি হয়েছে বাংলায়। বিভিন্ন ধরনের ফেক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তারপর ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচন ছিল। ২০২০-এ কোভিড বিধিনিষেধের জেরে মিছিল-মিটিং কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ ছিল। ২০২১-এও একই পরিস্থিতি ছিল। ওই দুই বছর ঘটা করে রামনবমী উৎসব করতে পারেনি ভিএইচপিসহ হিন্দু সংগঠনগুলো। করোনা আবহে ২০২১ নির্বাচনে বিজেপির স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিও কেটে গিয়েছে। সামনের বছর গ্রামপঞ্চায়েত নির্বাচন। এবারও রাজ্যজুড়ে ব্যাপকহারে রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী পালন করা হয়েছে। শিবপুর, রিষড়া, ডালখোলায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যদিও রামনবমী উৎসবের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে দাবি ভিএইচপির। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, ফের বাংলায় বাইনারি পলিটিক্সের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তৃণমূল ও বিজেপির।
আরও পড়ুন- অফিস ছেড়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে বিডিও-র সাইকেল-সফর, কারণটা তারিফ করার মতোই!
ভিএইচপির কর্মকান্ডে এখানে জমি তৈরির চেষ্টা হলেও তার ফায়দা কি গেরুয়া শিবির নিতে পারবে? এটাই অভিজ্ঞ মহলের কাছে সব থেকে বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট। নবান্ন অভিযানেও সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে। আদি বিজেপির নেতৃত্ব ও কর্মীরা এখনও ঘরে বসে রয়েছেন। তাঁদের কোনও দলীয় কর্মসূচিতেই দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব ফের তৃণমূল ও বিজেপির গট-আপ নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। 'বল বল আপনা বল, জল জল গঙ্গা জল,' নাহলে যে কোনও যুদ্ধ জয় সম্ভব নয়, এমনই মনে করে অভিজ্ঞমহল।