গ্রাম বাংলায় দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচি বেজায় ধাক্কা খাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে সাংসদ থেকে বিধায়ক, দলীয় নেতৃত্ব থেকে মন্ত্রীর সামনেই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূতদের। সম্প্রতি একাধিক কর্মসূচি দেখলে মনে হতে পারে সুরক্ষাকবচ ঢিলে পড়েছে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ, গ্রামে ঢুকতে বাধা, মন্ত্রীর সামনেই মমতার দূতের গ্রামবাসীকে সপাটে চড় দেখতে পাচ্ছে আমবাঙালি। তবে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদৌ এর কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে? তা কিন্তু লক্ষ টাকার প্রশ্ন।
পূর্ব মেদিনীপুরে দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে বাধা, বীরভূম জেলার দুই তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মালকে ঘিরে বিক্ষোভ। এই জেলাতেই দলের তরুণতুর্কী নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে গ্রামে ঢুকতে বাধা, উত্তর ২৪ পরগনায় খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের সামনেই রাস্তা সারানোর দাবি তোলায় গ্রামবাসীকে চড়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় কর্মসূচি ঘিরে একাধিক অস্বস্তিকর ঘটনায় চরম বিভ্রান্তিতে ঘাসফুল শিবির। একদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিতে প্রাক্তনমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক ব্যক্তি জেলবন্দি, গরুপাচার কাণ্ডে প্রতাপশালী তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল গ্রেফতার। কয়লাপাচার নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্ত করছে। আবাস যোজনায় ভুরি ভুরি তৃণমূল নেতা-নেত্রীর ধনসম্পদ থাকা সত্বেও তালিকায় নাম। নানা ইস্যুতে জেরবারের পর দিদির দূতরা গ্রামে যেতেই নয়া সমস্যা।
লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের পর কাটমানি প্রসঙ্গে তুলেছিলেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি থেকে পঞ্চায়েতের অনেক কর্তাই গ্রাম ছাড়া হয়েছিলেন। কিন্তু হাতে সময় থাকায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই ক্ষোভ সামলে নেয় তৃণমূল। এবারও রাজ্যের নানা জ্বলন্ত ইস্যুর সময় দিদির দূতরা জনসংযোগ করতে গ্রামে যাচ্ছেন। ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকা সত্বেও কর্মসূচি জারি রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া যাচাই করে নিচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের সময় হলে সমস্যা বাড়ত। এই ক্ষোভ কতটা নির্বাচনে পড়বে সেটা সব থেকে বড় বিষয়। বিরোধীরা চিৎকার জুড়লেও ভোটবাক্সে কোনও প্রতিক্রিয়া না হলে লাভের লাভের তাদের কিছু হবে না বলেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে।
কাটমানির ইস্যুর ধাক্কা পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু সামলাননি, আগের দুবারের থেকে বেশি ভোটে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় বসেছেন। রাজনৈতিক মহল এবার দিদির দূতকে বিক্ষোভ ও কাটমানির সময়কালকে মিলিয়ে দেখছে। পঞ্চায়েত দখলে এই আগাম মানুষের মন বুঝে নেওয়াই তৃণমূল নেত্রীর বিশেষ রণকৌশল বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, ভোট ঘোষণার পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সামলানো মুশকিল হত। পরিস্থিতি বুঝে নতুন ছক কষার সময় পেল ঘাসফুল শিবির। কাটমানির মতো এই ঝটকা সামলে নেওয়া সম্ভব কিনা সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। বিরোধীরা এই পরিস্থিতি কিভাবে কাজে লাগাবে সেটাও দেখার রয়েছে। তবে এবারে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য-রাজনীতি পরিস্থিতি যথেষ্ট ঘোরালো হয়ে উঠেছে। শীঘ্রই ময়দানে নেমে হাল ধরতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।