Digital scam trail tracked: কোন পথে ডিজিটাল জালিয়াতি? প্রতারণার বিরাট পর্দা ফাঁস। মুহূর্তে গায়েব হওয়া টাকা রাজ্য পেরিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাচার। হাজার হাজার ভুতুড়ে অ্যাকাউন্টের হদিশ। যা দেখে চোখ কপালে দুঁদে গোয়েন্দাদেরও।
ডিজিট্যাল জমানায় হুহু করে বাড়ছে সাইবার প্রতারণার ঘটনা। কীভাবে মুহূর্তে উধাও হওয়া টাকা একাধিক শহর ঘুরে সীমানা পেরিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে তা জানলে বুক কেঁপে উঠবে। এমনই একটি সাইবার জালিয়াতির ঘটনা জানলে হাড়হিম হবে। জালিয়াতির প্রায় ৬ কোটি টাকা ১৫টি রাজ্য ঘুরে ২৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে এবং পরে আর সেই টাকার আর কোন হদিস মেলেনি। কার্যত উধাও হয়ে যায় সেই টাকা।
এটা শুধুমাত্র জালিয়াতির একটি ঘটনা মাত্র। ২০২৪ সালে রিপোর্ট হওয়া ১.২৩ লক্ষ ডিজিটাল প্রতারণার ঘটনার মধ্যে এই ঘটনাটি অন্যতম, যেখানে মোট ১,৯৩৫ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে — যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।
জালিয়াতির ঘটনা এক নজরে
ভুক্তভোগী: ৪৪ বছরের বিজ্ঞাপন সংস্থার এক্সিকিউটিভ, 'সিঙ্গেল মাদার'।
প্রতারণার কৌশল: ভিডিও কলের মাধ্যমে ফেক ইন্টাররোগেশন ও ভয় দেখানো
টাকা লেনদেন
সেপ্টেম্বর ৪-৫, ২০২৪: ভুক্তভোগী HDFC ব্যাংক থেকে RTGS-এর মাধ্যমে ৫.৮৫ কোটি পাঠান হরিয়ানার ঝাজ্জরের যুবক পিয়ূষের ICICI অ্যাকাউন্টে। মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে এই টাকা ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে ২৮টি ব্যাংকে।
১১টি অ্যাকাউন্টে ৪.৮৭ কোটি স্থানান্তর হয় হায়দরাবাদের একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংকে। পরে সেই টাকা আরও পরে আরও ১৪১টি অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে পড়ে। পীযূষের অ্যাকাউন্টে শেষ ব্যালান্স ছিল মাত্র ২,৮৪৪ টাকা।
অধিকাংশ টাকা গিয়ে পড়ে Sreenivasa Padmavathi Co‑operative Urban Bank‑এর ১১টি অ্যাকাউন্টে। এসআইটি তদন্তে দেখতে পেয়েছে যে এই ১১টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের এক ম্যানেজার ভেঙ্কটেশ্বরালু সমুদ্রালের নির্দেশে খোলা হয়েছিল। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছে যে এই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য জমা দেওয়া ফর্মগুলিতে বেশিরভাগ ঠিকানাই কাল্পনিক।
এই অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে পাঁচটির ঠিকানাই ভুয়ো। এক দর্জি, এক কাঠমিস্ত্রি ও এক অটোচালককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ‘চাকরির লোভ’ দেখিয়ে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়। তিন মাসে এই ১১ অ্যাকাউন্টে ঘুরেছে ২১ কোটি ঘুরেছে।
গুরগাঁও পুলিশের SIT ইতিমধ্যেই সামুদ্রলা ও দুই সহযোগী‑সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে ৫৮লক্ষ উদ্ধার করেছে। এসআইটি রবীন্দ্র নামে একজন কাঠমিস্ত্রীর জবানবন্দিও রেকর্ড করেছে। রেকর্ডে দেখা গেছে যে পীযূষের অ্যাকাউন্ট থেকে তার অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং তা মুহূর্তে উধাও হয়ে গিয়েছিল।
তিনি জানিয়েছেন, “আমি ব্যাংকের কাছে একটি চায়ের দোকানে সমুদ্রালের সাথে দেখা করেছিলাম এবং তিনি আমাকে স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খোলা আবশ্যিক। পরে, পুলিশ আমাকে বলেছিল যে প্রমাণ দেওয়ার জন্য আমাকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। আমি একজন কাঠমিস্ত্রী যে সারাদিন তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কাজ করি। আমি কোনও ভুল করিনি,”।
অটোরিকশা চালক শিবরাজু ১৪টি পৃথক সাইবার অভিযোগের ক্ষেত্রে তার অ্যাকাউন্টের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও দেখা করতে রাজু হন নি।। ফোনে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমি আমার শ্যালকের অনুরোধে অ্যাকাউন্টটি খুলেছি। আমি প্রতিদিন ব্যস্ত থাকি, অটোরিকশা চালাই, এবং ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করিনি। তারপর, পুলিশ আসে।"
গুরুগ্রাম (দক্ষিণ) এর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ডঃ হিতেশ যাদব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "হায়দ্রাবাদ থেকে আমরা যে জালিয়াতির মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি তার সাইবার অপরাধের ইতিহাস রয়েছে। আমরা ডিজিটাল অ্যারেস্টের মামলার পিছনে থাকা অন্যদেরও গ্রেপ্তারির চেষ্টা করছি।
পুলিশ জানিয়েছে, সামুদ্রলার বিরুদ্ধে আগেও তিনটি ক্রিপ্টো জালিয়াতির মামলা রয়েছে; তিনি গুজরাটে জেলবন্দী ছিলেন। ভুক্তভোগী বলেন, “শিক্ষিত হয়েও ভুল করেছি—এই লজ্জায় অনেকেই চুপ থাকেন। অপরাধীরা ঠিক এটাকেই কাজে লাগায়।”