Advertisment

ভোল পাল্টে ফের প্রাণঘাতী হতে পারে করোনা? সোজাসাপটা উত্তর ডাঃ কুণাল সরকারের

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বিস্তারিত সাক্ষাৎকারে করোনা সংক্রান্ত একাধিক বিষয় তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

author-image
Joyprakash Das
New Update
dr kunal sarkar interview on bengal politics, আমরা গণতন্ত্রের পুতুল খেলছি, ক্ষমতা আসলে ২৯৪ ভূমিশ্বরের হাতেই: ডাঃ কুণাল সরকার

ডাঃ কুণাল সরকার ছবি-শশী ঘোষ

২০২০-২০২২ কোভিড ছাড়খাড় করে দিয়েছে মানুষের পেশা, সমাজ-অর্থনীতি। করোনা কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। কোভিডের দুটি টিকা, বুস্টার ডোজ নিয়ে লড়াই জারি রেখেছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু আমাদের মধ্যে কি করোনা আছে? এখনও কি করোনা নিয়ে আতঙ্কের কারণ আছে? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বিস্তারিত সাক্ষাৎকারে করোনা সংক্রান্ত একাধিক বিষয় তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কুণাল সরকার।

Advertisment

প্রশ্ন- করোনা কালে সামাজিক বা আর্থিক ক্ষতির কোনও পরিপূরক হবে?

ডাঃ কুণাল সরকার- এর পরিপূরক বলে কিছু নেই। আমাদের জীবিতকালে প্রথম মহামারি দেখলাম। এর আগে কলেরা, সোয়াইনফ্লু, প্লেগ হয়েছে। দেশের সামাজিক, অর্থনীতি সব বদলে দিয়েছে। বহু জনগোষ্ঠী অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। করোনার আড়াই বছরের তীব্র ধাক্কায় মানুষের ক্ষতি হয়েছে। শারীরিকভাবে দুর্বল প্রাণ হারিয়েছে। আর্থিক ভাবে দুর্বলদের জীবন জীবিকা বদলে গিয়েছে। এটা নির্মম সত্য। এর থেকে পিঠ বাঁচানোর কোনও জায়গা নেই। ক্ষতি সবারই হয়েছে। নড়বড় করলেও এখন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে। ওলোট-পালোট হয়েছে ব্লাক ডেথ, কলেরা মহামারিতে, সে তুলনায় আমরা মোটামুটি গাড়ির ধাক্কা খেয়েও একটা জায়গায় এসেছি।

প্রশ্ন- চিনের এখনকার পরিস্থিতি প্রচারে আসায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পরিত্রান কি?

ডাঃ কুণাল সরকার- চিনে যাইনি কিন্তু সম্প্রতি আমি থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। চীনের মিডিয়া তো খুব কন্ট্রোল। বেজিং বলবে কিছুই হয়নি। চিনা বিরোধী আমেরিকার মিডিয়া বলবে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আমাদের তোষামদকারী মিডিয়ার মত সর্বত্র একই অবস্থা। সেখানে কিন্তু সমস্যা কিছু হয়েছে। চায়না বিরাট অগ্রগতি করেছে। ১৯৮২-২০০০ এই সময়কালে ভারতের থেকে পাঁচ গুণ এগিয়ে গিয়েছে চিন। ভবিষ্যৎ বিশ্বের কাছে চায়নাকে জবাবদিহি করতে হবে।

প্রশ্ন- ভাইরাস আক্রমণ দ্রুত কার্যকরী।

ডাঃ কুণাল সরকার- প্রকৃতি পরিবর্তন করতে কয়েকশো বা হাজার বছর লাগে। ব্যাকটেরিয়ার থেকে ভাইরাসের ক্ষেত্রে সহজ এই পরিবর্তন। যে জিনিসটা হতে প্রকৃতিগত ভাবে একহাজার বছর সময় লাগতো, তার অপেক্ষা না করে এক মাসে করে ফেললাম। যাকে বলে খোদার ওপর খোদ্দারি। আমি একটা নিরীহ ভাইরাস বেছে নিলাম। করোনা ভাইরাস সবার শরীরে ছিল, আছে। কুকুর, বিড়ালের মধ্যে আছে। নিরীহ, অহিংস, নিরামিশাষী ভাইরাস নিয়ে আমি ল্যাবরোটারিতে বসে খুঁটখাট করতে শুরু করলাম। খুঁটখাট করে এমন কিছু জেনেটিক নিশ্বাস-প্রশ্বাসের ওপেন কলকটি নাড়লাম, নাক দিয়ে ঢুকে লাঙসের মধ্যে পেনিট্রেট করতে পারবে। আমাদের শরীরের মধ্যেও তো ডিফেন্ড মেকানিজম আছে। জেনেটিক স্ট্রাকচারের কলকাটি এমন নাড়লাম মেসির মতো ভিতরে ঢুকে নিমোনিয়া হয়ে গেল, নভেল করোনা ভাইরাস। ডিফেন্স মেকানিজম এটাকে চিনত না একেবারে অপরিচিত।

প্রশ্ন- চিনে ফের কেন সংক্রমণ বাড়ল?

ডাঃ কুণাল সরকার- প্রথমত তারা ছিটকানি মেরে বসেছিল। একএকটা শহরে প্রায় ১৫ বার করে লকডাউন হয়ে গিয়েছে। তারা কেউ পরিচিত নয়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল চায়না মহামারীর আগে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল। যে সাপ নিয়ে কাজ করে সে সাপের বিষের এন্টি ডোজ সব সময় হাতে রাখে। এই সাইনো, সাইনোফার্ম ভ্যাক্সিনের পুরোটাই ২০১৮ থেকে তৈরি করেছে সীমিত সংখ্য়ক। যখন অতিমারি শুরু হল তখন ব্যাপক উৎপাদন শুরু করল। কিন্তু ভারতে দেখছি ২০২০ বা ২০২১-এ যে ভ্যাকসিন পেয়েছি তা ২০২২-এ অকেজো হয়ে গিয়েছে। যাঁরা ২০১৮-তে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে তা আস্তে আস্তে তার সংস্করণ পাল্টে গিয়েছে।

প্রশ্ন- কেন কাজ করল না চিনের ভ্যাকসিন?

ডাঃ কুণাল সরকার- ভাইরাস আনস্টেবল জেনেটিক মেটেরিয়াল। ভাইরাসের ব্রেন বলে কিছু নেই। ভাইরাস যখন নিমোনিয়া করে ঝাঁঝরা করে ভেন্টিলেশনে মরে গেলাম। আমারও ক্ষতি ভাইরাসের ক্ষতি। আমাকে যত সংক্রমিত করবে তার সংখ্যাবৃদ্ধি তত বেশি হবে। তুমি একতারা কাগজ নিয়ে ফোটোকপি মেশিনে দিলে অবধারিত ভাবে তার ২ শতাংশ ত্যাড়া ব্যাকা বের হবে। ভাইরাস যত নিজেকে ফটোকপি করার চেষ্টা করবে তার মধ্যে জেনেটিক চেঞ্জ আসাটা স্বাভাবিক। একসঙ্গে ১০ হাজার স্ট্রেট লাইন টানলে কিছু ত্যাড়া ব্যাকা হবে। একই কথা বলা যায় ভাইরাসের ক্ষেত্রেও। আমরা ভ্যারিয়েন্টের কথা বলতে থাকবো। ব্যাকডেটেড ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে চিন। আগের পাসপোর্ট ছবিতে কি আর পরে চেনা যায়।

প্রশ্ন- ওমিক্রন কি টিকার কাজ করেছে?

ডাঃ কুণাল সরকার- সব থেকে বড় প্রশ্ন আমাদের মধ্যে যে ইমিউনিটি ডেভেলপ করেছে আমার বিশ্বাস এখনও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তার শতাংশ মাপা যায় না। মেজরিটি মাপা যাবে না। কিন্তু গ্রেট মেজরিটি অব ইমিউনিটি এসেছে ন্যাচারল ইমিউনিটি থেকে, অল্প সংখ্যক এসেছে ভ্যাকসিন থেকে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ২০২২ অবধি যে ওমিক্রণ হয়েছে তাও এক প্রকার ন্যাচার ভ্যাকসিনেশন। কারণ ওমিক্রণের আপডেটেড ভ্যাকসিন নেই। ওমিক্রণ ১৫ গুন দ্রুত ছড়াতে পারে ডেল্টার থেকে। তাতে কি হল? তার মধ্যে গলা ধরেছে, সর্দি জ্বর হয়েছে। খারাপ লেগেছে। কিন্তু ফ্রি ভ্যাকসিনেশন হয়েছে। আজ যে আমরা বসে কথা বলছি তোমার নাকে সোয়াপ করলে পজিটিভ বের হতে পারে আমারও হতে পারে।

প্রশ্ন- কোভিডের কোনও সম্ভাবনা আছে?

ডাঃ কুণাল সরকার- আমরা যারা মনে করি ঘর পোড়া গরুর মতো, হয় কোভিড আছে না হয় নেই। কোভিড কি আবার হবে? আরে বাবা কোভিড হবে না! কোভিড আছে আমাদের মধ্যে। জিনিসটা ছোট বলে আমাদের সরকার তার পিছনে সিএএ, এনআরসি নিয়ে লাগতে পারেনি। কিন্তু সে আমাদের সমাজের স্থায়ী বাসিন্দা। তাহলে কেন তুমি খ্যাক খ্যাক করে কাশছো না আমি কেন কাসছি না। কারণ আমরা তাঁকে চিনে ফেলেছি, জেনে ফেলেছি, এই সময়ে তোমার, আমার ইমিউনিটি আছে, তাই আক্রান্ত হচ্ছি না। কোনও কারণে ইমিউনিটি নেমে গলে কোভিডের ধর্ম পাল্টে গিয়ে গলাব্যাথা করছে, জ্বর হচ্ছে। কত হাজারবার ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে, কে গিয়েছে রক্ত পরীক্ষা করাতে? কে যাচ্ছে আরটিপিসিআর টেস্ট করাতে? কেউ যাচ্ছে না। মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য নয়, কিন্তু কোভিড আছে। একমুঠো হাওয়ার মধ্যে যদি ৫ হাজার ভাইরাস থাকে তা তিন মাস আগেও ছিল, তিন মাস পরেও আছে। কিন্তু এই ভাইরাসটার সঙ্গে আমার শরীর আজ পরিচিত। আমি যদি এক খাবলা ভাইরাস নিয়ে নাকের সামনে ঢুকিয়ে দিই আমার কিছু হচ্ছে না। কিন্তু কোনও কারণে আমার ইমিউনিটি ড্রপ করে তখন হবে। ওমিক্রণ যেমন চরিত্র বদল করছে। দুমাস বাদে আমার যদি গলা ব্যাথা, ফ্যাচ ফ্যাচ করছে। আমি কি আরটিপিসিআর করব? তাহলে আমি কি করব? এমন হলে আমি নিজেকে আলাদা রাখব। আমি কি চাইব বাড়ির তিনটে লোকের গলা ব্যাথা, গা ব্য়াথা হোক, জ্বর হোক আমি কি চাই?

প্রশ্ন- এখন কি পরিস্থিতি?

ডাঃ কুণাল সরকার- ভ্যাকসিনেশন এফেক্টিভ। প্রোটেকশন ফ্রম ভ্যাকসিন পার্সিয়াল ও টেমপোরারি। কিন্তু বিভিন্ন সময় আমি-তুমি এক্সোপোজ হচ্ছি। তুলনা করলে বলতে পারি ভাইরাস এখন আড়ায়-পাড়ায় পলিটিক্যাল গুন্ডার মতো। সবাইকে চিনে গিয়েছে। তুমি নতুন পাড়ায় এলে জানো না কোনটা নিরীহ রাজনৈতিক নেতা কোনটা গুন্ডা নেতা। কোনটা বাড়িতে উৎপাত করবে? কোনটা ধীরে ধীরে নিশব্দে কান মুলবে? এখন তুমিও জেনে গিয়েছ কিভাবে পাশ কাটিয়ে হাটতে হয়। মোটামুটি জেনে গিয়েছ কার মেজাজ ভাল ও কার মেজাজ খারাপ।

প্রশ্ন- এখনও কি করোনা নিয়ে আতঙ্কের কারণ আছে?

ডাঃ কুণাল সরকার- আমি কি কোভিডে না মরলে মরতে পারি না? ভারতবর্ষে একদিনে ৪০ হাজার লোক মারা যায়। ভারতবর্ষে এক দিনে এক লক্ষ হার্ট অ্য়াটাক হয়। তাহলে রোজ দুশ্চিন্তা করব হার্ট ধরে বসে থাকব। আমি তা করছি না তো। এখনও তো টিবি আছে। এই কদিন আগে তো ডেঙ্গি শহর ছাড়খাড় করে দিল। এখনও তো ডেঙ্গি আছে। মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের এনকেফেলাইটিস হচ্ছে। কিছু ইনফেকটিভ অসুখ থাকবে, কিছু ধাক্কাধাক্কি ট্রমা-ইনজুড়ি থাকবে। আরও কত অসুখ থাকবে। আজ থেকে একশো বছর আগে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪০ বছর। আজকে এত ঝুটঝামেলা সত্বেও মানুষের গড় আয়ু ৬৫-৭০ বছর।

COVID-19 corona Dr. Kunal Sarkar
Advertisment