দীর্ঘদিন ধরে মিলছে না বকেয়া থাকা ৪২ লক্ষ টাকা। প্রশাসন ও সিডিপিও-কে জানিয়েও ফল মেলেনি। শেষমেশ বাধ্য হয়েই 'বিদ্রোহ'-এর পথে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কর্মীদের এই প্রতিবাদের জেরে ব্লকের সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বন্ধ রান্না। পুষ্টিদায়ক খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার খানেক শিশু থেকে শুরু করে গর্ভবতী মা ও প্রসূতিরা। 'অরন্ধন'-এর এই খরা কাটিয়ে ফের কবে থেকে স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি, এর স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারছেন না প্রকল্প আধিকারিক নিজেও।
জামালপুরের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাইরে একটি কাগজ সাঁটানো চোখে পড়েছে। তাতে লেখা রয়েছে , ''গত ২ মাস ধরে নিজেদের পয়সায় সেন্টার চালানোর পরে সবজি, জ্বালানি ও ডিমের পয়সা না পাওয়ায় বিডিও এবং সিডিপিও স্যারকে জানিয়ে গোটা জামালপুর ব্লক রান্না বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। যেদিন সবজি, জ্বালানি ও ডিমের টাকা পাব তার পরদিন থেকেই পুনরায় রান্না চালু হবে।''
শুধু জামালপুর ব্লকই নয়। দু’মাস ধরে বরাদ্দ টাকা পাচ্ছে না পূর্ব বর্ধমানের অন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিও। সেই কারণে ওই সব কেন্দ্রগুলির কর্মীরাও শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতিদের পুষ্টিদায়ক খাবারের জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন । জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা জানিয়েছেন, কোভিড অতিমারির কারণে লকডাউনের সময়ে সেন্টারে নাম নথিভুক্ত থাকা প্রত্যেককে এক মাসের শুকনো খাবার দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২ কেজি চাল, ২ কেজি আলু ও ৩০০ গ্রাম মুসুর ডাল দেওয়া হয়েছিল প্রত্যেককে। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে চাল, ডাল, আলু বা ছোলা না মেলায় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাচ্চাদের আর তা দেওয়া যায়নি।
এরপর চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জামালপুর ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে রান্না করা খাবার দেওয়া শুরু হয়। সেই সময় চাল ও ডাল থাকলেও ডিম, সবজি সহ অন্য জিনিস নিজেদের পয়সাতেই কিনেছেন কর্মীরা। এভাবে দু’মাস চালানোর পরেও পাওনা টাকা না মেলায় ঘোর বিপত্তি বাধে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ব্লকের বিডিও ও সিডিপিও কে- লিখিতভাবে জানান। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দাবি, অভিযোগ জানিয়েও বকেয়া টাকা মিলছে না। বাধ্য হয়েই তাঁরা রান্না বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, শিশু প্রতি ডিম ও সবজির জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা হাতে পান ৫ টাকা ৩৬ পয়সা। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্য মেলে ৬ টাকা ৩৫ পয়সা। এছাড়া খিচুড়ির দিন শিশুদের জন্য ৬ টাকা ২০ পয়সা করে আর মায়েদের জন্য ৭ টাকা ৪১ পয়সা কর্মীরা পেয়ে থাকেন। এর বাইরে জ্বালানি ও মশলা কেনার জন্য তাঁরা গড়ে পান ২১ টাকা। সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রগুলিতে সোম, বুধ ও শুক্রবার ভাত, আলু-ডিমের ঝোল দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- চোখ রাঙাচ্ছে ‘অশনি’, সংকেত পেয়েই জেলা সফর বাতিল মুখ্যমন্ত্রীর
মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার দেওয়া হয় ডিম সিদ্ধ, খিচুড়ি, সয়াবিন ও সবজি। কর্মীদের ডিম, আনাজ, সয়াবিন বাজার থেকে কিনতে হয়। আইসিডিএস দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ,এই সব খাদ্য সামগ্রী কেনা বাবদ গত দু’মাসে জামালপুর ব্লকের ৫৩৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪২ লক্ষ টাকা।
জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী রঙ্গনা সরকার বলেন, ''রান্না করা খাবার দিতে গিয়ে এক-একটি কেন্দ্রের কর্মীরা নিজেদের কয়েক হাজার টাকা খরচ করেছেন। তাঁদের বেতনের প্রায় সবটাই সামগ্রী কিনতে চলে গিয়েছে। দু’ মাস ধরে বকেয়া টাকা না মেলায় তাঁরা আর চালাতে পারেননি। সেই কারণেই রান্না করা খাবার তৈরি বন্ধ রাখতে আমরা বাধ্য হয়েছি।''
এবিষয়ে জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ''অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার দেওয়া যে ওঁরা বন্ধ করে দেবেন তা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলাশাসক নিজে বিষয়টি দেখছেন। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে। অন্যদিকে, আইসিডিএস-এর জেলা প্রকল্প আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''সফটওয়্যার-জনিত সমস্যার কারণে টাকা পেতে দেরি হচ্ছে। জেলা প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সমস্যা মেটানোর জন্যে উদ্যোগী হয়েছে।''