মহিলা সুরক্ষায় এবার তাক লাগানো আবিষ্কার বাঙালি যুবকের। ইতিমধ্যেই নজরকাড়া এই আবিষ্কারে সেরার সেরা হওয়ার শিরোপা পেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ছাত্র। ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের এই কৃতী পড়ুয়ার।
মহিলা সুরক্ষায় কড়া আইন করেছে দেশের সরকার। এছাড়াও মহিলাদের সুরক্ষা দিতে রাজ্যে-রাজ্যে তৈরি হয়েছে পুলিশের বিশেষ বাহিনীও। তবে এত কিছুর পরেও নারী সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গিয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার মহিলাদের জন্য বিশেষ একটি যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের যুবক আবির ঘোষ।
বিশেষ এই যন্ত্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসও। আবিরের নামও উঠেছে তাঁদের তালিকায়। গোটা দেশের মধ্যে আবিরের সৃষ্টিকেই মহিলা সুরক্ষার যন্ত্র হিসেবে সেরার সেরার তকমা দিয়েছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস। বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বড়শুলের বাসিন্দা আবির ঘোষ।দুর্গাপুর কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির বি-টেকের প্রথম বর্ষের ছাত্র আবির। তিনি জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে রাজধানী দিল্লিতে এক মহিলার উপর হওয়া নির্যাতনের খবর তিনি সংবাদপত্রে পড়েছিলেন।
তারপরেই মহিলাদের সুরক্ষায় বিশেষ যন্ত্র বানানোর ব্যাপারে মনস্থির করেন। এরপর ধাপে-ধাপে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষ একটি যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন আবির। বেশ কয়েকবার শুরুর পরেও কিছু ভুল-ত্রুটিতে আটকে গিয়েছিল যন্ত্র তৈরির কাজ। এছাড়াও সফটওয়্যারের কাজ ভালোমতো জানা না থাকায় আবিরকে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। শেষমেষ অবশ্য সফলভাবে যন্ত্রটি তৈরি করতে পেরেছেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই পড়ুয়া।
মহিলা সুরক্ষায় তাঁর আবিষ্কৃত বিশেষ এই যন্ত্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস। 'ইনভেটিভ ওমেন সেফটি ব্যান্ড ডিভাইস ডিজাইন বাই এ টিন' বিভাগে সারা দেশের মধ্যে তাঁর তৈরি যন্ত্রটি বাছাই করে নেওয়া হয়েছে বলে আবির ঘোষ জানিয়েছেন।
যন্ত্রটির বিশেষত্ত্ব কী ? কীভাবে মহিলারা এটিকে নিজেদের সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে আবির ঘোষের দাবি, মহিলারা তাঁর আবিষ্কার করা এই যন্ত্র সহজেই হাতে পড়ে বাইরে বের হতে পারবেন। আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ওই যন্ত্রে রয়েছে নয় ধরণের ব্যবস্থা। বিপদে পড়লে ওই যন্ত্রটির মাধ্যমে মহিলারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দিতে পারবেন। সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশও যদি ডিভাইসটিতে ৭৭৭ এসএমএস করে তাহলে ডিভাইসটি একটি জিপিএস লোকেশন পুলিশের মোবাইলে পাঠিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন- পুজো এগোতেই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা, বঙ্গে একদিনে আক্রান্ত প্রায় ৩০০
পুলিশ সেটি ক্লিক করলেই খুলে যাবে 'গুগল ম্যাপ'। এর মাধ্যমে মহিলার অবস্থান জানতে পারবে পুলিশ। এর ফলে দ্রুত মহিলার সাহায্যে পৌঁছে যেতে পারবেন পুলিশকর্মীরা। এরই পাশাপাশি যন্ত্রটিতে রয়েছে শত্রুকে প্রায় ২০০০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দেওয়ার ক্ষমতাও। যা আততায়ীকে পরাস্ত করতে ভীষণভাবে কার্যকরী হবে বলে দাবি আবিরের। এছাড়াও যন্ত্রটিতে রয়েছে লেজার লাইট, ক্যামেরা ও অটোমেটিক কলিংয়ের সুবিধাও।
অন্ধকারে মহিলারা বিপদে পড়লে লেজার লাইটের মাধ্যমে তিনি কাছে পিঠে থাকা ব্যক্তিকে সংকেত দিতে পারবেন। এছাড়াও ওই বিশেষ যন্ত্রে রয়েছে ফ্লাস লাইট। সেটি চোখের দিকে তাক করে মারলে সমস্যায় পড়বে দুষ্কৃতী। সেই সুযোগে মহিলা ওই জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন- ছেলে কোলে সিজিও-য় রুজিরা, কয়লাকাণ্ডে অভিষেক-পত্নীকে জিজ্ঞাসাবাদ ED-র
এছাড়াও তাঁর আবিষ্কার করা এই যন্ত্রের নানাবিধ গুণ রয়েছে বলে দাবি আবিরের। তিনি বলেন, ''বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়লে মহিলারা ওই যন্ত্রের সাহায্যেই নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে তাঁর বিপদের কথা পরিবারকে ও পুলিশকে জানাতে পারবেন।''
মহিলাদের সুরক্ষায় বর্ধমানের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের আবিস্কার করা এমন যন্ত্রের বিষয়টি জেলার মহিলা মহলেও যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছে। যন্ত্রটির বিষয়ে জেলা পুলিশের কর্তারাও খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছেন । দেশের মহিলাদের সুরক্ষায় তাঁর বিধানসভা এলাকার ছাত্র আবির যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন জেনে যারপরনাই খুশি বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিকও। তিনি আবিরের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন।