Advertisment

Exclusive: দুর্নীতির পাহাড়ে অবাধ বিচরণ মিলমালিক থেকে এজেন্টদের, কোন পথে 'লুঠতরাজ'?

তিল তিল করে তৈরি দুর্নীতির আপাতমস্তক চেইন, পর্যাপ্ত তথ্য ইডির হাতে। এমনই দাবি সূত্রের।

IE Bangla Web Desk এবং Joyprakash Das
New Update
ED is looking into the role of rice wheat mill owners and their agents in ration scam

রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য ইডির হাতে।

রেশন দুর্নীতির তদন্তে ইতিমধ্যেই ইডির হাতে চাঞ্চল্যকর একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। তিল তিল করে কীভাবে বিশাল এই দুর্নীতির একটি আপাতমস্তক চেইন তৈরি করা হয়েছিল, সেব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে ইডির হাতে। পাহাড় প্রমাণ এই দুর্নীতিতে রাঘববোয়ালরা তো যুক্ত আছেনই, তাছাড়াও বহু চাল ও গমকলের মালিক থেকে শুরু করে তাঁদের এজেন্ট-সহ আরও বেশ কয়েকটি শ্রেণি দিনের পর দিন ধরে এই জাল কারবারে হাত পাকিয়ে ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়েছে।

Advertisment

সূত্রের দাবি, ইডির তদন্তে জানা গিয়েছে চাল ও গমকলের মালিকরা রীতিমতো এজেন্ট নিয়োগ করেছিল এলাকায়-এলাকায়। সেই এজেন্টরাই ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের চেয়েও কম দামে সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান কিনে নিত। সেই ধান তাঁরা পাঠিয়ে দিত চালকল মালিকদের। তদন্তে উঠে এসেছে ধানের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সরকারের থেকে নিয়ে তারও কম দামে ধান কেনা হয়েছে। অর্থাৎ এতে লাভবান হয়েছেন চালকল মালিকরা আর ক্ষতির বোঝা বেড়েছে কৃষকদের।

আরও পড়ুন- বুধে মেয়াদ শেষ, বৃহস্পতিতেই বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে পুলিশি তলব! কী বললেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য?

তদন্তে জানা গিয়েছে, রেশন দুর্নীতিতে ধৃত বাকিবুর রহমানের গমকল ছাড়াও ছিল চালকল। সেগুলি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাতায় নথিভুক্তও ছিল। বাকিবুরই সেকথা স্বীকার করেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সমবায় সমিতিগুলিকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান সংগ্রহ করতে হয়। সমবায় সমিতিগুলি সেই রেকর্ড সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে জমা দেয়। তারপর কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সহায়ক মূল্যে বিক্রি করা ধান-গমের টাকা পৌঁছোয়। তবে বাস্তবে সব কৃষকই সমবায় সমিতির কাছে ধান বিক্রি করেন না। অনেকেই গম-চালকলের এজেন্টদের কাছে ধান বিক্রি করেন। মিল মালিকরা সরাসরি এজেন্টদের কাছ থেকে ধান কিনে দেখান যে এটা সমবায় সমিতির মাধ্যমে কেনা হচ্ছে। কৃষকের নাম এবং অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলিও তাঁরা জোগাড় করে নেন। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া টাকা ওই ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টে ঢোকে। পরে সেই টাকাই মিল মালিকদের অ্যাকাউন্টে চলে যেত। জেরায় বাকিবুর রহমান আরও স্বীকার করেছেন যে এই ধরনের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের টাকা পেতে তিনি তাঁর বেশ কয়েকজন কর্মচারী এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ব্যবহার করেছেন।

আরও পড়ুন- মহুয়াকে বহিষ্কারেই সম্মতি এথিক্স কমিটির, ডিসেম্বরে ভাগ্য নির্ধারণ

এর মানে হল এই যে, রেশনসামগ্রী যা সুবিধাভোগীদের পাওয়ার কথা, তা একটি চেইনের মাধ্যমে দিনের পর দিন ধরে কার্যত ছিনতাই হয়েছে। এই চেইনে রাঘবোয়ালদের পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটর থেকে শুরু করে ডিলার-সহ আরও লোকজন যুক্ত রয়েছেন। মিল মালিকরা সমবায় সমিতির সঙ্গে যোগসাজশ করত। কৃষকদের কাছ থেকে ধান ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের চেয়ে কম দামে কেনা হতো। সেই ধান সমবায় সমিতিকে বিক্রি করতেন মিল মালিকরা। গমের পাশাপাশি ধানেও এমনই বেনজির দুর্নীতির হদিশ ইডির, দাবি সূত্রের। সমবায় সমিতির যোগসাজশেই এই দুর্নীতি চলতো। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ২০০ টাকা কমে কেনা হতো ধান। বিনিময়ে সহায়ক মূল্য যেত মিল মালিকদের 'ভুয়ো কৃষক'দের অ্যাকাউন্টে। ফলে বিপুল লাভ হয় মিল মালিকদের। একইসঙ্গে কাতারে কাতারে কৃষক দিনের পর দিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এইভাবে ধান ও গমকল মালিকরা দিনের পর দিন ধরে গরিব কৃষকদের কার্যত লুঠ করে গিয়েছে বলে দাবি ইডি সূত্রের।

আরও পড়ুন- এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা: তোলপাড় ফেলা কী নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের?

রেশন দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যের একাধিক জেলায় হানা দিয়েছে ইডি। বাজেয়াপ্তও হয়েছে বহু নথি। ইডি সূত্রের আরও দাবি, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কম আটা সরবরাহ করে চলত দেদার লুট। লুঠের গম খোলা বাজারে বিক্রি হতো। সেই টাকা পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া হতো। গম এবং গমের আটার মাসভিত্তিক একাধিক এমন বিবরণ ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে সূত্রের দাবি। বাজেয়াপ্ত করা ওই সব নথিতে বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটরদের নগদ টাকা দেওয়ার বিবরণও রয়েছে। ইডি সূত্রের দাবি, তদন্তে এখনও পর্যন্ত এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, অপরাধের টাকা ডিস্ট্রিবিউটর, মিলমালিক থেকে শুরু করে দুর্নীতির চেইনে থাকা প্রত্যেকে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। জেরায় বাকিবুর রহমান এই বিষয়গুলি স্বীকার করে নিয়েছে বলে দাবি সূত্রের।

রেশন দুর্নীতির তদন্তে দিকে দিকে চালানো অভিযানে ১০০টিরও বেশি স্ট্যাম্প/সিল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইডি সূত্রে আরও দাবি, এমআইসি এবং তার সহযোগীদের বিভিন্ন ঠিকানায় তল্লাশি চালানোর সময় একটি "মেরুন ডায়েরি" বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তারিখ অনুযায়ী বিশদ বিবরণ সহ বহু তথ্য ওই ডায়েরিতে লেখা রয়েছে বলে দাবি। এমনকী বিপুল পরিমাণে নগদ প্রাপ্তি এবং অর্থ প্রদানের বিষয়ও ওই ডায়েরিতে উল্লেখ করা আছে। ওই ডায়েরিতে MIC-এর ‘বালুদা’ হিসেবে নাম রয়েছে। তার উপরে লেখা আছে তিনটি কোম্পানির নাম। ওই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে নগদ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে দাবি ইডি সূত্রের।

আরও পড়ুন- মারাত্মক! সরকারি হাসপাতাল থেকে মরা মানুষের দেহ লোপাট! বিরাট চক্রের পর্দা ফাঁস!

সূত্রের আরও দাবি, যে ইডি তদন্তে এটা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে যে কীভাবে নগদ টাকা 'বালুদা' গ্রহণ করেছিলেন। একইভাবে ওই টাকা জমা করা হয়েছিল ডায়েরির উপরে উল্লিখিত তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে। বাজেয়াপ্ত করা ওই "মেরুন ডায়েরি"-তে যাদের কাছ থেকে নগদ টাকা নেওয়া হয়েছে তাদের বিবরণ এবং তাদের নাম এবং দেওয়া টাকার পরিমাণের উল্লেখ রয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, রেশন দুর্নীতির এই বিরাট চেইনে রয়েছে ধান-গম কল মালিক, পিডিএস ডিস্ট্রিবিউটর, পিডিএস ডিলার এবং অন্যান্যরা।

আরও পড়ুন- পার্থ ইতিহাস! অনুব্রতর মতোই জ্যোতিপ্রিয় নিয়ে অবস্থান মুখ্যমন্ত্রীর, নীরব ‘যুবরাজ’

উল্লেখ্য, রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে বাকিবুরকে জালে পুরে একের পর এক তথ্য জোগাড়ের মরিয়া চেষ্টা চালাতে শুরু করে ইডি। বাকিবুরকে জেরায় এরপর প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম পায় ইডি। বাকিবুরকে গ্রেফতার করার কয়েকদিনের মধ্যেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সেই বাড়ি থেকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত ইডি হেফাজতেই আছেন বনমন্ত্রী। ইডির দফতর থেকে বেরনোর পথে বা আদালতে তোলার সময় একাধিকবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুদা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু এখনও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাশেই রয়েছেন। অনুব্রত মণ্ডলের মতো জ্যোতিপ্রিয়কেও ফাঁসানো হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

West Bengal ED Jyotipriyo Mallick Ration Scam Bakibur Rahman
Advertisment