/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/01/election-commission-of-india-publishes-draft-electoral-rolls-for-bihar-following-sir-2025-08-01-16-45-54.jpg)
নির্বাচন কমিশন বনাম পশ্চিমবঙ্গ: ভোটকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ফের সংঘাতে জড়াল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রশ্ন একটাই—ভোট দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মীদের উপর শাসনাধিকার থাকবে রাজ্যের, নাকি নির্বাচন কমিশনের? সম্প্রতি ভোটার তালিকা নিয়ে কারচুপির অভিযোগে চারজন সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল কমিশন। কিন্তু রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, এখনও কোনও নির্বাচন ঘোষণা হয়নি, কাজেই মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট কার্যকর নয় এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।
এই ঘটনা ফের সামনে এনেছে বহুদিনের বিতর্ক—ভোট চলাকালীন সরকারি আধিকারিকরা কতটা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন?
১৯৪৯ সালের ১৫ জুন গণপরিষদে এই প্রসঙ্গ ওঠে। খসড়া প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. বি. আর. আম্বেদকর জানান, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে এমন সুরক্ষা প্রদান করতে হবে যা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সমতুল্য, যাতে নির্বাচনের যাবতীয় কাজকর্ম তৎকালীন নির্বাহী সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। তবে তিনি একটি আলাদা স্থায়ী নির্বাচন কর্মী গঠনের বিরোধিতা করেন। তাঁর মতে, কমিশন প্রয়োজনে প্রাদেশিক সরকারের কাছ থেকে কর্মী ধার নিতে পারবে এবং তখন তারা কমিশনের অধীনেই কাজ করবেন।
প্রায় চার দশক পরে, ১৯৮৮ সালে সংসদ জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫০ ও ১৯৫১) সংশোধন করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উপর কমিশনের কর্তৃত্বকে আইনি স্বীকৃতি দেয়। ওই আইন অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, এমনকি নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা পুলিশও নির্বাচনের সময়কালে কমিশনের অধীনে থাকবেন। সেই সময়ে তাদের উপর কমিশনের শাসন, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধি প্রযোজ্য হবে।
তবুও সংঘাত থামেনি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টিএন সেশনের (১৯৯০-৯৬) সময় এই বিরোধ চরমে ওঠে। তিনি ঘোষণা করেন, ভোটের কাজে নিয়োজিত হলে সব কর্মকর্তা শুধুমাত্র কমিশনের কাছে জবাবদিহি করবেন। ভুল করলে কমিশনের অধিকার আছে তাদের বদলি, বরখাস্ত বা শাস্তি দেওয়ার। এ নিয়ে তীব্র বিরোধ তৈরি হয় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে। ১৯৯৩ সালের রণিপেট উপনির্বাচনে এমনকি তিনি এক ঝটকায় ৩১টি নির্বাচন স্থগিত করে দেন। পরে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।
অবশেষে ২০০০ সালে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এম. এস. গিলের আমলে এক সমঝোতায় পৌঁছায় কেন্দ্র ও কমিশন। তাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, কমিশন চাইলে দায়িত্বে গাফিলতি করা আধিকারিককে বরখাস্ত বা বদলি করতে পারবে, তাদের নিজস্ব ক্যাডারে ফেরত পাঠাতে পারবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করতে পারবে। সেই সুপারিশ ছ’মাসের মধ্যে কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে। কেন্দ্র সমস্ত রাজ্যকেও এই নির্দেশ মানতে বলে।
তবুও বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ইস্যু দেখিয়ে দিল, দীর্ঘদিনের এই টানাপোড়েন এখনও শেষ হয়নি। কমিশনের নির্দেশে ব্যবস্থা নিতে রাজ্য আপত্তি জানালে ইসি ইতিমধ্যেই ১৩ অগস্ট রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তলব করে এবং এক সপ্তাহের ডেডলাইন দেয়। প্রয়োজনে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে বলা হবে। শেষ অবলম্বন হিসেবে কমিশনের সামনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পথও খোলা আছে।
এই অচলাবস্থা ফের প্রশ্ন তুলছে—নির্বাচনের সময়ে কর্মকর্তাদের উপর নির্বাচন কমিশনের শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্তৃত্ব কার্যত কতটা বলবৎ হয়, এবং রাজ্য সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও কমিশনের ক্ষমতা কতটা কার্যকর করা সম্ভব?