Darivit: প্রায় ৬ বছর পারে হতে চলল। এখনও বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছে দাঁড়িভিটে (Darivit) নিহত তাপস বর্মন ও রাজেশ সরকারের পরিবার। তাঁদের ভরসা এখন আদালত। অভিযোগ, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল এই দুই যুবকের। সেদিন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের (Islampur) দাড়িভিট গ্রাম উত্তপ্ত হয়েছিল।
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দাড়িভিট স্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে এই গন্ডগোল হয়েছিল। স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল উর্দু ও সংস্কৃত শিক্ষকের। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি ছিল, বাংলা, ইংরেজি-সহ সাধারণ বিষয়ের শিক্ষকের অভাব আছে স্কুলে। সেই সব বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। সেই নিয়েই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে স্কুল চত্বর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল।
দাড়িভিট গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দোলঞ্চা নদী। তার পাশে মাটির নীচে শায়িত আছে তাপস ও রাজেশের মৃতদেহ। দুই পরিবারই দাবি করেছিল CBI তদন্তের। গত বছর ১০ মে হাইকোর্ট দাড়িভিট কাণ্ডে NIA তদন্তের নির্দেশ দেয়। স্কুলের উল্টোদিকে দাড়িভিট বাজারে মৃত তাপসের পরিবারের সঙ্গে একবার কথা বলেছে এনআইএ। দাড়িভিট থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরের সুখানিভিটা গ্রামে মৃত রাজেশের বাড়িতেও একবার গিয়েছিল এনআইএ।
আগামী ২৬ এপ্রিল রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন। গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election) এই কেন্দ্রে মূল ইস্যু ছিল দাড়িভিটে তাপস ও রাজেশের মৃত্যুর ঘটনা। BJP প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী তাপস ও রাজেশকে স্মরণ করে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছিলেন। রায়গঞ্জ (Raiganj) কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছিল বিজেপি। রাজেশের পরিবারের সদস্যদের আগের সাংসদকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু তাপসের পরিবারের সেই ক্ষোভ নেই। তবে দুই পরিবার ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য, একে তো গুলি চালনার ঘটনায় কোনও শাস্তি পায়নি দোষীরা ,তার ওপর প্রশাসন কখনও কোনও খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়নি।
এবারেও দাড়িভিট আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে। একাধিকবার ওই এলাকায় গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী কার্তিকচন্দ্র পাল (Kartik Chandra Paul)। দাড়িভিটে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীও (Krishna Kalyani)। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে কৃষ্ণ কল্যামী বিজেপি প্রার্থী হিসাবে জয় পেয়েছিলেন। তারপর তিনি যোগ দেন তৃণমূলে।
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee: ‘অভিষেককে খুন করতে গিয়েছিল’, নিশানায় কে? তপ্ত বাংলা আরও গরম করলেন মমতা!
রাজেশের বাবা নীলকমল সরকার জমি ভাগে নিয়ে চাষ করেন। আলু, ধান, ভুট্টার চাষ করেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নীলকমল সরকার বলেন, "ভোট আসবে ভোট যাবে। এমপি আসবে। এমপি যাবে। তবে বিচারটা যে কবে আসবে সেটাই তো কথা। এমপি ভোট গেল, এমএলএ ভোট গেল, পঞ্চায়েত ভোট গেল, আবার এমপি ভোট চলে এল। CBI তদন্ত চেয়েছিলাম। NIA দিয়েছে। একবার এনআইএ এসেছিল। কি করে করে গিয়েছে ওনারাই জানেন। তারপরে তো বন্ধ হয়েই গেল অনেক দিন। তারপর আবার আদালতে গিয়েছি। আবার শুনানি হল। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও ডিজিকে তলব করেছিল আদালত।"
সেদিনের দাড়িভিট স্কুলের ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করছে রাজেশের পরিবার। তরতাজা ছেলের মৃত্যুর বিচারের অপেক্ষায় তাঁরা। নীলকমল সরকার বলেন, "এখানে আসল দোষী তো পুলিশ প্রশাসন। তাঁরা ঘুরে বেরাচ্ছে। মমতা নিজেই পুলিশমন্ত্রী। এখানে দরকার ছিল বাংলা, ইংরেজি শিক্ষকের, পাঠিয়েছিল সংস্কৃত ও উর্দুর শিক্ষক। সেই নিয়েও তো বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল ছাত্র-ছাত্রীরা। তখন পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। আসল বিচার হল না। যেদিনও হোক বিচার পাব। আমার ছেলে তো কোনও অন্যায় করেনি।" কাদের ওপর ভরসা করছেন? নীলকমলবাবুর জবাব, "রাজ্য প্রশাসনের ওপর কোনও ভরসা নেই। ভরসা আছে আদালতের ওপর। বিচার একদিন পাবই।"
আরও পড়ুন- TMC VS CPIM: কী এমন ঘটল ডায়মন্ড হারবারে? অভিষেকের দলের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগ সিপিএমের!
স্কুলের সামনে বাড়ি তাপস বর্মনদের। ৬ বছর আগে ঘটনাও ঘটেছিল বাড়ির সামনেই। রাজেশের মা মঞ্জু বর্মন বলেন, "আমাদের এখনও আদালতের ওপর ভরসা আছে। আমরা বিচার পাব। প্রার্থীরা তো সান্তনা দিচ্ছে। এনআইএ থেকে এক দিন এসেছিল। সব জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে গেল। তারপরে আর খবর নেই। রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের ওপর কোনও ভরসা নেই। ওই দিনের ঘটনার দায়ে পুলিশ বা শিক্ষক কারও কিছু হয়নি। ভোট আসবে যাবে। তবে যাঁরা দোষী তাঁদের শাস্তি চাই।" মঞ্জু দেবীর আক্ষেপ, "রাজ্য সরকার আমাদের কোনও খোঁজ নেয়নি। বরং রাজ্য বলছে রাজেশ পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি।"
আরও পড়ুন- Amit Shah: ‘বাংলায় চাকরি পেতে ১০-১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ’, চরম কটাক্ষে তৃণমূলকে তুলোধনা শাহের
রায়গঞ্জ লোকসভার ইসলামপুর বিধানসভা দাড়িভিট ইস্যুর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল লিড পেয়েছিল ৪,৪৪২ ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল করিম চৌধুরী ৩৭,৪৪০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। এবার কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রামজ এই কেন্দ্র থেকে ভালো ভোট পাবেন বলে দল আশা করছে। এবার ২০২৪ নির্বাচনে ইসলামপুর থেকে কোন দলের প্রার্থী এগিয়ে থাকবে তা নজরে থাকবে রাজনৈতিক মহলের।