Advertisment

মুখ্যমন্ত্রী সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে চলেন: জগদীপ ধনখড়

এ রাজ্যের করোনা বিরোধী লড়াইয়ে ১০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক হস্তক্ষেপ করে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে আরও কাজ হওয়া দরকার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকার : অভিজিত্্ বিশ্বাস

গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে- এই সব অভিযোগে যখন সরগরম জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতি, ঠিক তখনই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাঁর মতে, রাজ্য সরকারের কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা উচিত।

Advertisment

বাংলার সাত জেলায় (হটস্পট) করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দল সম্পর্কে আপনার কী অভিমত?

একজোট হয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। করোনা ভাইরাস ধর্মনিরপেক্ষ। এটি কোনও রকম বৈষম্য না করে অর্থাৎ মতাদর্শ বা অবস্থান নিরপেক্ষভাবে মানুষকে আক্রমণ করছে। মানব সভ্যতা বনাম ভাইরাসের এই যুদ্ধে এ দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সকলেরই উচিত তাঁকে সহযোগীতা করা।

এ রাজ্যের সকলকেই আমি অনুরোধ করেছি রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়াতে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারকেও অনুরোধ করেছি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে একযোগে কাজ করার জন্য।

ভাবনা-চিন্তা করে এবং আইনি পরিসরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় দলকে এ রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ৩১ মার্চের নির্দেশ সকলের মেনে চলা উচিত। সেখানে বলা হয়েছে, "...আমরা বিশ্বাস করি এবং আশা করছি, জনগণের সুরক্ষার্থে রাজ্য সরকারগুলি, সরকারি সংস্থাগুলি এবং দেশের নাগরিকরা ভারত সরকারের জারি করা নির্দেশিকা মেনে চলবে"। রাজনৈতিক বা অন্য কোনও উদ্দ্যেশে কাজ করার সময় এটা নয়।

আরও পড়ুন: ‘আমাদের রাজ্যপালের একটাই কাজ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করা’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর প্রসঙ্গে বলেছেন, 'উপযুক্ত কারণ ছাড়া এ কাজ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী'। আপনার কী মত?

আমি নিশ্চিত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের আইনি বিধানের আলোকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অবস্থানকে পুনরায় বিচার করবেন এবং কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগীতা করবেন। এরফলেই মানুষের দুঃখ-কষ্ট ঘুচবে এবং করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আরও ধারাল হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে বিজেপি সাংসদদের গৃহবন্দি রাখার বিষয়টিকে আপনি সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে কী করা উচিত ছিল বলে মনে করেন?

এই সংকটের মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে সাংসদদের। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁদের কাজকর্ম-গতিবিধিতে বাধা দান সুশাসনের পরিচায়ক নয়। আমি এ বিষয়ে সরকারের মনযোগ আকর্ষণ করেছিলাম। কী অদ্ভুত পরিস্থিতি! যেখানে একজন সাংসদ একদিনে হাজার মানুষকে খাওয়াতে পারেন এবং তা বেশ কিছুদিনের জন্য, সেখানে কেউ কেউ (বন্দি বিজেপি সাংসদরা) মানুষের জন্য কাজই করতে পারছেন না। এই বৈপরিত্য আশঙ্কাজনক এবং এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন:করোনায় বাবুলের টুইট করা ভিডিও ঘিরে তুমুল বিতর্ক

বিজেপি এবং সিপিএমের মতো বিরোধী দলগুলি যে রাজ্যের প্রকাশিত কোভিড১৯ আক্রান্ত-মৃতদের সংখ্যাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, সে বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

সরকারের গরমিলের জন্যই কোভিড-১৯-এ মৃতদের সংখ্যা নথিভূক্ত করার জন্য কেউ নেই এ রাজ্যে। রাজনৈতিক দলগুলির, চিকিৎসা ক্ষেত্রের এবং জনতার আশঙ্কা তাই ন্যায্য। সরকার এবং চিকিৎসাক্ষেত্রের ও সরকার এবং মানুষের মধ্যেকার এই বিশ্বাসের ঘাটতিই জাতীয়-আন্তর্জাতিক স্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। অডিট কমিটির ধারণাই পরিস্থিতিকে আরও বেগতিক করেছে...মানুষের প্রকৃত সত্য জানা উচিত এবং এইসব তথ্যই লকডাউনের নিয়মকানুন এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য মানুষকে সচেতন করবে।

আমি সরকারকে অনুরোধ করেছি এ সংক্রান্ত বিশ্বযোগ্য তথ্য সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আরও কার্যকর হবে।

লকডাউন চলাকালীন বাংলায় 'রেশন দুর্নীতি' প্রসঙ্গে আপনি মুখ খুলেছেন এবং বলেছেন, এটা আরও বড় আকার ধারণ করছে। কী করা উচিত? আপনি কি এ বিষয়ে কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন?

রাজ্যের সব জায়গা থেকেই ভয়ঙ্কর সব খবর পাচ্ছি যে গণবণ্টন ব্যবস্থা (রেশন) রাজনৈতিকভাবে 'হাইজ্যাক' হচ্ছে। শাসকদলের কর্মীরা রেশন ডিলারদের নিশানা করছে এবং খাদ্য সামগ্রী রাজনৈতিকভাবে বিলি করা হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থার করুণ ছবি ফুটে উঠছে, আর এ জন্য যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরাই দায়ী।

খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এ রাজ্যে ৬ কোটির বেশি মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা (পিএমজিকেএওয়াই) থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই যোজনায় তিন মাসের জন্য বিনামূল্যে রেশন মেলে। প্রতি মাসে মাথা পিছু ৫কেজি চাল এবং পরিবার পিছু মাসে ১কেজি করে ডাল পাওয়া যায়। একদিকে, মানুষ রেশন ঘাটতি ও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। আর অন্যদিকে, কেন্দ্রের দেওয়া বিনা মূল্যের রেশন তোলা হচ্ছিল না। আমি বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে ধরি এবং শেষ পর্যন্ত পিএমজিকেএওয়াই-এর আওতায় বিনামূল্যের রেশন চালু হয়েছে।

গণবণ্টন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। আমি যা সব খবর পাচ্ছি এবং সোশাল মিডিয়ায় যা দেখছি, সেই অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতি যথেষ্টই আশঙ্কাজনক। অবিলম্বে এই ব্যবস্থার যাবতীয় ছিদ্র মেরামত করতে হবে। তা না হলে গণবণ্টন ব্যবস্থার দুর্নীতি এমন আকার ধারণ করবে যা অতীতের দুর্নীতিগুলিকেও ছাপিয়ে যাবে এবং রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করবে।

আমি আমার অফিসের মাধ্যমে মুখ্যসচিব, খাদ্যমন্ত্রী এবং খাদ্য সচিবের থেকে তথ্য চেয়েছি এবং খাদ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের প্রত্যুত্তর সন্তোষজনক নয়।

আরও পড়ুন:সোনিয়ার বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য, অর্ণবের নামে এফআইআর, মুম্বাইতে গাড়ি ভাঙচুর

করোনার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লড়াইয়ে আপনি কি খুশি?

এ রাজ্যের করোনা বিরোধী লড়াইয়ে ১০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক হস্তক্ষেপ করে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে আরও কাজ হওয়া দরকার। এটা সমালোচনা করার বা সংঘাতে জড়ানোর সময় না। সকলকে একসঙ্গে এবং সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। পুলিশের নাকের ডগায় ধর্মীয় জমায়েত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

একমাত্র সাধারণ মানুষই হল সেই সৈনিক যে করোনাকে দমিয়ে দিতে পারে। তাঁদের ১০০ শতাংশ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতেই হবে। রাজনৈতিক ভোটব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও কথা মাথায় না রেখে প্রশাসনকে এই বিষয়টি সুনিশ্চিত করতেই হবে।

বৃহৎ সংখ্যক ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর এবং অনেক হাসপাতালও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের আমি কুর্নিশ জানাচ্ছি।

তবে ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী যখন ৫ মিনিটের জন্য করতালি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, তখন দেখলাম মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীরা এতে জনসমক্ষে অংশগ্রহণ করলেন না। এরপর ফের ৫ এপ্রিলের প্রদীপ জ্বালানোতেও দেখা গেল না তাঁদের। এটা নিশ্চই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ লড়ায়ের ছবি নয়।

তৃণমূলের সাংসদরা আপনার অবস্থানের সমালোচনা করেছেন এবং লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন বলেছে। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

বর্তমান সংকটের পরিস্থিতিতে এবং অন্যান্য সময়েও আমি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি। কিন্তু, আমি বুঝি না, শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা কেন আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। আমার সব পদক্ষেপই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশে এবং আমি একই অভিমুখে কাজ চালিয়ে যাব। আমি ভারতীয় সংবিধান মেনে চলি। তৃণমূলের কোনও সাংসদই এখনও পর্যন্ত আমার কাছে ক্ষোভ বা আপত্তি জানায়নি।

মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে রাজভবনের জন্য লৌহপর্দা ঝুলিয়ে রাখা নিশ্চিতভাবেই অনুচিত। সাংবিধানিক রীতির প্রতি অশ্রদ্ধা তাঁকে শোভা পায় না। আমি তাঁকে বহুবার অনুরোধ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী অগণতান্ত্রিক কায়দায় সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে চলেন যা স্বৈরতন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus government of west bengal corona Governor
Advertisment