প্রয়াত নদিয়ার স্কুল শিক্ষক রেবতীমোহন বিশ্বাস। ভোটের ডিউটিতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। দিন কয়েক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষে শেষমেশ বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। রেবতীবাবুর মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মর্মান্তিক এই পরিণতির জন্য কমিশনকেই দায়ী করেছে সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। আইনি পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল? শিক্ষক রেবতীমোহন বিশ্বাসের পরিবার মনে করছে, ডিউটির জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী না-থাকাতেই এই বিপত্তি ঘটেছে। সম্ভবত বাহিনী না-থাকায় আতঙ্কেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বছর আটচল্লিশের স্কুল শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে প্রয়াত রেবতীমোহন বিশ্বাসের শ্যালকের স্ত্রী দেবীকা বিশ্বাস বলেছেন, 'জামাইবাবুকে অসুস্থ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ভোটের দিন সকালে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। মাঝরাস্তায় আমাদের খবর দেওয়া হলে ওই অ্যাম্বুলেন্সেই আমরা কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যাই। কিন্তু, সেই সময় সরকারি প্রশাসনের কেউ ছিলেন না। তারপর থেকে এখনও জামাইবাবুর স্কুল বা প্রশাসনের তরফে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা মনে করছেন, হার্ট অ্যাটাকেই ওঁনার মৃত্যু হয়েছে। আমাদেরও মনে হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী বা পুলিশ ভোটের বুথ এলাকায় না-থাকাতেই উনি ভয় পেয়েছিলেন। তার দরুণই ওঁনার শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী বা পুলিশ থাকত, তাহলে তো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখে তারা পদক্ষেপ করত। তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে।'
ভোটের কাজে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছে সরকারি কর্মীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। তিনি বলেন, 'আমরা কমিশনের কাছে যাব, স্মারকলিপি দেব। এই মৃত্যুর জন্য রাজীব সিনহা দায়ী। হাইকোর্টের কথামত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ডিউটি করানো হলে এটা ঘটত না। মানসিক চাপের জন্যই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সময়ে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়নি।' মঞ্চের অভিযোগ যে, বুথে পৌঁছনোর পর থেকেই স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী তাঁকে ক্রমাগত মানসিক চাপ দিয়েছে। রাতভর দফায়-দফায় চলে হুমকি। অভিযোগ, ওই বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়নি। এক্ষেত্রে মঞ্চের সুরই শোনা গেল প্রয়াত প্রিসাইডিং অফিসার রেবতীমোহন বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যার মুখে।
নদিয়ার স্কুল শিক্ষক রেবতীমোহন বিশ্বাস ছিলেন রিজার্ভ প্রিসাইডিং অফিসার। অভিযোগ, ৭ জুলাই প্রশাসনের তরফে তাঁকে ভোটের ডিউটিতে পাঠানো হয়েছিল। করিমপুর ১ নং ব্লকের ১৩৪নং বুথের নন্দলালপুর এসএসকে-তে তাঁকে ডিউটি দেওয়া হয়েছিল। মৃতের শ্যালকপত্নী দেবীকা বিশ্বাসের কথায়, '৭ তারিখ বিকেলে আমাদের সঙ্গে জামাইবাবুর শেষ কথা হয়েছিল। এরপর ওঁনার স্ত্রী, মেয়ের সঙ্গেই আর কোনও কথা হয়নি। ৮ তারিখ সকালে আমাদের কাছে ফোন আসে, বলা হয় রেবতীমোহন বিশ্বাসের বাড়ির লোক কথা বলছেন? জানানো হয় উনি অসুস্থ। অ্যাম্বুলেন্সে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমরা মাঝরাস্তা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে চেপেই হাসপাতালে যাই। ভর্তি করা হয় জামাইবাবুকে। কিন্তু, ১২ তারিখ রাতে উনি চলে গেলেন।' পরিবারের অভিযোগ যে, সহকর্মীর মৃত্যুর পরও রেবতীমোহন বিশ্বাসের স্কুল হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠের কোনও সহকর্মী শিক্ষক খোঁজ করেননি। প্রশাসনের থেকেও কেউ কোনও যোগাযোগ করেনি।
মৃতের পরিবারের তরফে অবশ্য এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। একমাত্র রোজগেরে সদস্যকে হারিয়ে বিশ্বাস পরিবার এখন দিশাহারা। প্রশাসনের সহায়তা-প্রার্থী মৃত রেবতীমোহনের স্ত্রী সোমা বিশ্বাস।