সোমবার বিকালে ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী পূর্ব বর্ধমানের গলসির সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তারপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কড়া হয় পুলিশ। চলে ব্যাপক পুলিশি ধরপাকড় অভিযান। ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।তারপর থেকে এখনও কার্যত পুরুষ শূণ্য রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর গ্রাম। আর তাতেই বিপাকে পড়ে গিয়েছেন নিহত উৎপল ঘোষের স্ত্রী সাধনা ঘোষ ও তাঁর পরিবার। গ্রামে এখন নাপিত , ব্রাহ্মণ কেউ নেই। স্বামীর পারলৌকিক কাজ সম্পাদনের জন্য ক্ষৌরকর্ম পর্যন্ত তাঁরা করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বুধবার পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষেভ উগরে দিয়েছেন সাধনাদেবী। পাশাপাশি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তও দাবি করেছেন।
কৃষি প্রধান গলসির সন্তোষপুর গ্রাম হঠাৎ করে খবরের শিরনামে ঠাঁই পাওয়ার কারণটাও যথেষ্ট শিহরণ জাগানো। স্ত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা উৎপল ঘোষ। শুধু প্রতিবাদ করাই নয় , স্ত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনায় জড়িত প্রতিবেশী মনোজ ঘোষের বিরুদ্ধে তিনি গলসি থানায় অভিযোগও জানিয়ে ছিলেন। তারই বদলা নিতে রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুড়ুর দিয়ে কুপিয়ে উৎপলকে নৃশংস ভাবে খুন করে মনোজ ঘোষ। রাতে মাথায় কুড়ুল গেঁথে থাকা অবস্থায় এলাকার একটি পুকুর পাড় থেকে উদ্ধার হয় উৎপলের মৃতদেহ। মৃতর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনার তদন্তে নেমে গলসি থানার পুলিশ ওই রাতেই মনোজকে আটোক করে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের দাবি, জেরায় নাকি মনোজ উৎপলকে নৃশংস ভাবে খুনের কথা কবুল করেছে। ফলে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। সোমবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করলে তাঁর ৪ দিন পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর হয়।
এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকালে উৎপলের দেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পরই অবস্থা বদলায়। মনোজের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আঁচ বাড়ে। কিছু উত্তেজিত গ্রামবাসী ধৃত মনোজ ও তাঁর আথ্মীয়দের বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যা বাড়ি, একাধিক গাড়ি ও খড়ের পালুই। আগুন নেভানোর জন্য খবর দেওয়া হয় দমকলে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌছে বেশকিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাতভর চলে পুলিশি ধরপাকড়। আগুন ধরানোর অপরাধে গ্রেফতার করা হয় গ্রামের ৩৯ জনকে।
পুলিশের এই গ্রেফতারি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন নিহত উৎপল ঘোষের স্ত্রী সাধনাদেবী। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ নিরপরাধ গ্রামবাসীদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। অথচ অপরাধীদের অনেকে এখনো দিব্যি গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুনি মনোজ ঘোষকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তার বাবা কার্তিক ঘোষ ও কাকা হারাধন ঘোষকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশের ভয়ে গোটা গ্রাম এখনও পুরুষ শূন্য হয়ে রয়েছে। গ্রামে ব্রাহ্মণ নেই, নাপিত নেই। স্বামীর মৃত্যুর তিন দিন পর পরলৌকিক কাজ সম্পাদনে জন্য ক্ষৌরকর্ম করার রীতি থাকলেও তা করতে পারা গেল না । এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ সাধনাদেবী এদিন বলেন, 'আমার স্বামীর খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হোক। নিহত উৎপল ঘোষের কাকা ভরত ঘোষও বলেন, 'পুলিশ ঠিক মত কাজ করছে না। যার বাড়ি থেকে অস্ত্র গেল উৎপলকে খুন করার জন্য তাকে পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সিবিআই হলেই নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।'
যদিও জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন বলেন, 'পুলিশ খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সব দিক বিবেচনা করেই পুলিশ তদন্ত করছে।'