"ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিডের কাজে এত দেরি হচ্ছে কেন? আবার সমস্যা তৈরি হওয়ার আগে কাজটা করে ফেলুন। জানুয়ারির মধ্যে শেষ করুন।" বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানায় প্রশাসনিক বৈঠক থেকে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের আগেই এই বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে নতুন করে তেতে উঠেছে ভাঙড়। থমকে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ।
বৃহস্পতিবার নামখানার ইন্দিরা ময়দানে প্রশাসনিক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি প্রতিটি দপ্তর ধরে কাজের খতিয়ান নেন। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এলাকার সমস্যার কথা শোনেন।
জেলার বিদ্যুৎ প্রকল্প বিষয়ে আধিকারিকদের কাজে জানতে চাইলে এক আধিকারিক বলেন, ছ'টি নতুন সাব স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। এর পরই তিনি ভাঙড় পাওয়ার গ্রিডের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে আধিকারিক বলেন, কাজ চলছে। তৎক্ষণাৎ মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, "ভাঙড়ের কাজে এত দেরি হচ্ছে কেন?" পাওয়ার গ্রীডের এক আধিকারিক বলেন, "টাওয়ার তৈরির কাজ হয়ে গিয়েছে, তার টানা বাকি আছে। আর কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে।" এর পরই মমতা বলেন, "আর সমস্যা হওয়ার আগে কাজটা করে ফেলুন। দরকার হলে ম্যানপাওয়ার বেশি লাগান। জানুয়ারির মধ্যে শেষ করুন।"
আরও পড়ুন: ফের বন্ধ ভাঙড় পাওয়ার গ্রিডের কাজ, সৌজন্যে যুদ্ধং দেহি গ্রামবাসী
এদিনের সভায় কুলপি থানার ওসি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অভিযোগ করেন কুলপির বিধায়ক যুগরঞ্জন হালদার। তাঁর বক্তব্য, "ওরা কোনও কথা শোনে না। বলে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মানি না।" বিধায়কের মুখে একথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জানতে চান। তাঁকে বলা হয়, রাস্তার ধারে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখাকে কেন্দ্র করেই সমস্যার সূত্রপাত। প্রথমে ওসি কথা শোনেন নি। পরে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে বলেন বিধায়ক। তখন সুপার বিধায়কের কাছে জানতে চান, "আপনি ঠিক বলছেন তার গ্যারান্টি কী?"
বিরোধ মেটাতে হস্তক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দু'পক্ষকে বসে কথা বলে সমস্যা মেটানোর পরামর্শ দেন।পাশাপাশি জয়নগর হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন স্থানীয় থানার ওসি। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। জেলায় "অস্ত্রের দাপট বাড়ছে" বলে প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসকের কাছে একশো দিনের কাজ নিয়ে জানতে চান। জেলাশাসক বলেন, কাজ খুব ভালো হচ্ছে। ভালো কাজের কথা শুনে জেলাশাসক সহ বিডিও-দের পুরস্কৃত কারা কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী একশো দিনের কর্মীরা ঠিকঠাক টাকা পাচ্ছে কি না জানতে চাইলে জেলাশাসক বলেন, তাঁরা দু'মাসের টাকা পাননি। এতেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কেন টাকা পাননি আধিকারিকদের কাছে জানতে চান। এক আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীর কানে কানে কিছু বলেন, যার পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "দিল্লি থেকে এখনও টাকা দেয়নি। আড়াই হাজার কোটি দেয়নি।" এর পরই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের "বঞ্চনার" বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেন, "দিল্লির নন কো-ওপারেশন অলওয়েজ। ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজ্য থেকে তুলে নিয়ে যায়, আর রাজ্যকে দেয় ১০ হাজার কোটি। তাও ঠিকমতন দেয় না।"
এরপর শস্য বিমা নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মমতা বলেন, "অনেক প্রকল্প আছে, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সামান্য টাকা দেয়, বেশিরভাগটা দেয় রাজ্য সরকার। অথচ বিজেপি বলে বেড়ায়, এসব কেন্দ্রের কল্যাণমূলক প্রকল্প। সেটা নয়, রাজ্য সরকারই এই সমস্ত অর্থের ব্যবস্থা করে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে।"
আরও পড়ুন: ফসল বীমা যোজনা নিয়ে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র: মমতা
এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগণার অপেক্ষাকৃত অনুন্নত জেলা প্রত্যন্ত সুন্দরবনের উন্নতি বিধানের জন্য আলাদা করে প্রশাসনকে গুরুত্ব দিতে বলেন মমতা। পোলট্রি ব্যবসা ছাড়া, এই অংশে হাঁসের বাণিজ্যে উৎসাহ দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেন তিনি। কৃষকদের হাতে যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পৌঁছে দেওয়া যায়, কৃষি ঋণের পরিমাণ যাতে বাড়িয়ে আরও বৃহত্তর কৃষক সমাজকে এর আওতায় নিয়ে আসা যায়, সেই চেষ্টা করার কথাও বলেন মমতা।
এদিন প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী আবারও হুঁশিয়ারি দেন, "গরিবদের জন্য আবাসন প্রকল্পে কেউ কমিশন নিলে ছেড়ে কথা বলা হবে না।" কমিশনের বিষয়ে সবিস্তারে তাঁকে জানাতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব সহ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা, গিয়াসউদ্দিন সহ বিধায়ক, জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা।