1998 panchayat election violence: তৃণমূল কংগ্রেস দল করার জন্যে বাম আমলে অনেকেই খুন হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের মরাবাঁধ গ্রামের ফিরদৌস রহমান ওরফে বোটন।১৯৯৮ সালের ২৮ মে পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষনার পরেই তৃণমূল কর্মী ফিরদৌস রহমানের উপর নৃশংস হামলা চালায় সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী। টাঙ্গি ও কুড়ুলের কোপে মারাত্মক জখম হন ফিরদৌস । দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৩১মে ফিরদৌস জীবন যুদ্ধে হার মানেন। তৃণমূল কর্মী ফিরদৌস রহমানকে খুনের অভিযোগ ওঠে এলাকার ১১ জন সিপিএম হার্মাদদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়। চারজন গ্রেপ্তারও হয়েছিল। ব্যাস ওই পর্যন্তই । খুনিদের বিচার আজও অধরাই রয়ে আছে।
তারপর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে ২৮ টা বছর। কিন্তু ফিরদৌসের খুনিদের কারুর সাজা আজও হয় নি। যাঁদের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তাঁরা সবাই খালাস পেয়ে গিয়েছেন। তবুও প্রতি বছর ৩১ মে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ঘটা করে পালন করেন ফিরদৌস রহমানের শহীদ দিবস। যদিও মৃতের মা তহুরা পুরকাইত শহীদ দীবস পালনের থেকেও বেশি করে চান খুনিদের শাস্তি। সেই দিন আদৌ আর আসবে কিনা তা জানেন না ফিরদৌসের পরিবার ।
তৃণমূল কর্মী ফিরদৌস রহমান খুন হওয়ার পর জাড়গ্রামের মরাবাঁধে তৈরি করা হয়েছিল শহীদ বেদি। এদিন ফুল মালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় সেই বেদি। জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি ,ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন সহ এক ঝাঁক নেতা নেত্রী এদিন বিকালে ফিরদৌসের শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানান । পাশাপাশি নেতারা শহীদ বেদির সামনে দাঁড়িয়ে ৯৮ সালের সেই ভয়াবহ দিনের স্মৃতি চারনাও করেন । কিন্তু অভিযুক্তরা কেন ঘটনার ২৮ বছর বাদেও শাস্তি পেলেন না তার সদুউত্তর কেউই দিতে পারলেন না।সবাই আইনের যাঁতাকলের দোহাই দিয়ে পাশ কাটালেন ।
ফিরদৌস রহমানকে খুনের বিচার আজও অধরা রয়ে থাকার কারণ প্রসঙ্গে জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলক মাঝি রবিবার বলেন,“তৎকালীন সময়ে পরিকল্পিতভাবে তৃণমূল কর্মী ফিরদৌস কে খুন করে সিপিএমের হার্মাদরা।তারপর পুলিশ ও সিপিএম মিলে যুক্তি করে কেস সাজায়। দোষীদের যাতে সনাক্ত করা না যায়,সেভাবেই তখন কেস সাজানো হয়।এসবের জন্যেই বিচার অধরা রয়ে আছে“। অন্যদিকে জামালপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন বলেন ,“খুনের মামলায় যাঁরা সাক্ষী ছিলেন তাঁদের অনেকে মারা যাওয়ায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয় ।বর্ধমান আদালতে মামলা চলাকালীন অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে গিয়েছে।"
তবে বিচার না মেলা নিয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ও বিধায়ক যাই দাবি করুন না কেন,জাড়গ্রাম অঞ্চলের পুরানো তৃণমূল কর্মীরা সেই দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেন নি। পুরানো তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই বলেন,“কে কাকে শাস্তি দেবে ? সেদিন যাঁরা তৃণমূল কর্মীদের পেটাতো,এলাকায় সন্ত্রাস চালাতো, তাঁরা সবাইতো এখন তৃণমূলে ভিড়ে গিয়েছেন। জাড়গ্রামে এখন তো ’মার্কসবাদী তৃণমূলীরাই’ দাপট দেখাচ্ছে। এই কারণেই ফিরদৌসের খুনিদের বিচার আর কোন কালেই হবে না বলে পুরানো তৃণমূল কর্মীরা মন্তব্য করেছেন।“
নিহত ফিরদৌসের বৃদ্ধা মা জাহানারা পুরকাইত এদিন বলেন , “তাঁর ছেলের খুনিদের বিচার আল্লাহই করবেন । সেই আবেদনই তিনি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে রাখেন”। ফিরদৌসের দাদা জাহাঙ্গীর রহমান এদিন বলেন , তাঁর ভাই খুন হওয়ার পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জামালপুরে এসেছিলেন। সভাও করেছিলেন।জাহাঙ্গীর বলেন ,"তাঁদের পরিবারের কথা ভেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রেলে চাকরি করে দেন। কিন্তু আক্ষেপ একটাই রয়ে গেছে ,তাঁর ভাইয়ের খুনিরা আজও কেউ শাস্তি পেল না!"