আবারও বাঘের আক্রমণে প্রাণ খোয়ালেন মৎস্যজীবী। চার বন্ধু মিলে সুন্দরবনের নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। নৌকায় বসে কাঁকড়ার 'চার' তৈরির সময়েই ঘটে চরম বিপত্তি। আচমকা ঘন জঙ্গল থেকে নৌকায় লাফ দক্ষিণরায়ের। কামড়ে-আঁচড়ে যুবককে ধরে টানাটানি বাঘের। হাতে থাকা লাঠি, বর্শা নিয়ে পাল্টা বাঘের উপর চড়াও বাকিরাও। শেষমেশ যুবককে ছেড়ে জঙ্গলে পালায় বাঘ। এরপর গত দু'দিনে হাসপতালের বেডে শুয়ে যমে-মানুষে টানাটানি, তবু হয়নি শেষ রক্ষা। রবিবার ভোরেই মৃত্যু হয় ওই মৎস্যজীবীর।
Advertisment
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপীঠের নগেনাবাদ গ্রাম থেকে নৌকা নিয়ে পূর্ণ দাস, পশুপতি সরদার, সমর হালদার ও সঞ্জয় চক্রবর্তী নামে চার বন্ধু সুন্দরবনের নদীতে কাঁকড়া ধরতে যায়। গত শনিবার বিকেলে নৌকায় বসে কাঁকড়া ধরার 'চার' তৈরি করছিলেন চারজন। ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটে চরম বিপদ। নদীপাড়ের জঙ্গলে ঘাপটি মেরে লুকিয়েছিল বিশালকায় একটি বাঘ। আচমকা সেই বাঘটি লাফ দেয় নৌকায়। সঞ্জয় চক্রবর্তী নামে ওই মৎস্যজীবীর ঘাড়ে কামড় বসায় দক্ষিণরায়।
এদিকে, বন্ধুকে বাঘে টানছে দেখে তড়িঘড়ি তাঁকে ছাড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নৌকায় থাকা বাকি তিন বন্ধু। দক্ষিণরায়ের গ্রাস থেকে সঞ্জয়কে ছাড়াতে মরণপণ লড়াই জুড়ে দেন পূর্ণ দাস, পশুপতি সরদার, সমর হালদারেরা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে অসীম সাহসিকতায় বাঘের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান তাঁরা। শেষমেশ উপর্যুপরি আঘাত পেয়ে সঞ্জয়কে ছেড়ে ফের জঙ্গলে ফিরে যায় পূর্ণবয়স্ক বাঘটি। ততক্ষণে অবশ্য রক্তাক্ত অবস্থায় নৌকাতেই লুটিয়ে পড়েছিলেন সঞ্জয় চক্রবর্তী নামে ওই মৎস্যজীবী।
কোনওমতে নৌকা টেনে জখম সঞ্জয়কে নিয়ে মৈপীঠ কোস্টাল এলাকায় ফেরেন বাকিরা। সেখানেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। তবে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে ওই মৎস্যজীবীকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর টানা কয়েক ঘণ্টা চলে যমে-মানুষে টানাটানি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। রবিবার ভোররাতে মৃত্যু হয় সঞ্জয় চক্রবর্তী নামে ওই যুবকের। এদিকে, এলাকার তরতাজা এক যুবকের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে শিউরে ওঠেন গ্রামের সবাই। গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।