Electricity Bill: বিদ্যুতের বিল নিয়ে রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশের রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়েছে! গত এক বছর ধরে বিদ্যুতের বিল বেশি দিতে হলেও অনেক গ্রাহকই বুঝতে পারছেন না কী করে বিল বাড়ছে। একদিকে যেমন ফিক্সড চার্জ দ্বিগুণ হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে মিনিমাম চার্জ নতুন করে বসানো হয়েছে। এদিকে কলকাতায় নতুন করে বাড়তে চলেছে বিদ্যুতের বিল। বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্যের প্রতিবাদে ফের পথে নেমেছে অল বেঙ্গল ইলেট্রিসিটি কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন তথা অ্যাবেকা (ABECA)। পাশাপাশি স্মার্ট মিটার বসানোর প্রতিবাদও করছে এই সংগঠন।
অ্যাবেকার সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস বলেন, "বর্ধিত ফিক্সড চার্জ ও মিনিমাম চার্জ প্রত্যাহার করতে হবে রাজ্য সরকারকে। মিনিমাম চার্জ বৃদ্ধি করে রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প ও ক্ষুদ্রকৃষি ধ্বংস করা হচ্ছে। গ্রামীণ ক্ষেত্রে গৃহস্থ গ্রাহকদের ৩০০ ইউনিটের স্ল্যাবে ১৮ পয়সা দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্রামীণ বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্যাটাগরি তুলে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্মার্টলি গ্রাহকদের টাকা লুঠ করার যন্ত্র স্মার্ট মিটার লাগানোর উদ্যোগ চলছে। এই সব জনবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করছি আমরা।" অন্যদিকে কলকাতায় CESC-তে এফপিপিএএসের নামে বিদ্যুতের বিলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা চলবে না বলে দাবি করেছে অ্যাবেকা।
দীর্ঘ দিন ধরেই বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে অ্যাবেকা। সুব্রত বিশ্বাস বলেন, "যেভাবে কলকাতায় CESC ও জেলাগুলিতে রাজ্য বিদ্যুত বন্টন সংস্থাও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে তাতে সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে।" গত ২৪ জুলাই CESC ভবনে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল। হাজার হাজার গ্রাহকদের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে বিদ্যুতের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে আনার দাবি করছে অ্যাবেকা। আগামী সেপ্টেম্বরে আইন অমান্য কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে অ্যাবেকা।
কীভাবে বিদ্যুতের বিল বাড়ছে তা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন সুব্রত বিশ্বাস। তিনি উল্লেখ করেছেন, গড় বিলের দাম ২০১৬ সালে ইউনিট প্রতি ছিল ৭ টাকা ১২ পয়সা। এখন সেটাই আছে। তবে এখন শহর ও গ্রামীণের ডোমেস্টিক বিল একই ক্যাটেগরিতে নিয়ে এসেছে। ডোমেস্টিক রুরালে প্রথম ১০২ ইউনিট, তারপর ৭৮ ইউনিট, তারপর ১২০, তারপর ৩০০ ইউনিট। এই ৩০০ ইউনিট স্ল্যাব থেকে ১৮ পয়সা করে দাম বাড়িয়েছে।
কমার্শিয়াল আরবান ও কমার্শিয়াল রুরাল আলাদা ছিল এখন এক ক্যাটাগরিতে আছে। এখানে রুরাল ক্যাটাগরি উঠে গিয়েছে। যার ফলে প্রতি ইউনিট ২ পয়সা করে বেড়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ বিল ২০০২ পাস না হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অনুযায়ী সকলের বিদ্যুতের দাম একই করছে আইন না করে।
মিনিমাম চার্জ ও ফিক্সড চার্জ দ্বিগুণ করেছে। ফিক্সড চার্জ ডোমেস্টিক ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট আগে ছিল ১৫ টাকা এখন হয়েছে ৩০ টাকা। কমার্শিয়ালে ছিল ৩০ টাকা, এখন দিতে হয় ৬০ টাকা। ইন্ডাস্ট্রিয়ালে গ্রাহকদের ক্ষেত্রে মিনিমাম চার্জ দিতে হয়ে ২০০টাকা। আগে এটা ছিল না। একটা আটা চাকিতে যদি ২০ হর্ষ পাওয়ারের মোটর থাকে, তাঁকে প্রতি মাসে ২০×২০০ অর্থাৎ ৪০০০ টাকা দিতে হবে। এখন রেশনে গমও পাওয়া যায় না। কোথা থেকে এই টাকা দেবে। ক্ষুদ্র শিল্প উঠে যাওয়ার অবস্থা। রাজ্যে ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র শিল্প উঠে গিয়েছে। বর্ষাকালে পাম্প না চললেও সাবমার্সিবল থাকলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। ৭৫ টাকা প্রতি কিলোওয়াট পাম্প চালালে দিতে হবে। ক্ষুদ্র কৃষকদের গত বছর থেকে এই দুর্দশা চলছে।
আগাম লোড বাড়ানো না থাকলে সারা বছরে কোনও একবার লোড বৃদ্ধি হলে মিটারে তা ইন্ডিকেট করে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী বিল হতে থাকে। অর্থাৎ ফিক্সড চার্জ কীভাবে বেড়ে যাবে গ্রাহক বুঝতেও পারবে না। এটা ঠিক করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। কলকাতার ক্ষেত্রে ফিক্সড চার্জ বা মিনিমাম চার্জের ক্লাস্টার নেই।
আরও পড়ুন- TMC MLAs Oath: বিধানসভায় শপথ চার বিধায়কের, গরহাজির BJP, মুখ্যমন্ত্রী যা বললেন…
কেন্দ্রীয় সরকার ইলেকট্রিসিটি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২২-এ বলছে কোনও বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি যদি মনে করে ফুয়েল ও পাওয়ার যে রেটে কিনেছিল তা বেড়ে গিয়েছে তাহলে তাঁরা নতুন করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। একএক মাসে একএক বিল হতে পারে। তাতে রাজ্যের বিদ্যুৎ কমিশনের অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই। এটা কলকাতার ক্ষেত্রে দেখা যাবে।