চকচকে ব্র্যান্ড নতুন কালো জিপ। উইন্ডস্ক্রিনে বড় বড় করে প্রেস স্টিকার মারা। আরোহী, ফর্সা হ্যান্ডসাম যুবক। মুখে ঝরঝরে ইংরেজি। স্মার্ট যুবক আসলে যে মহাপ্রতারক, ধরা পড়ার আগে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পুলিশ। গত ২৭ ডিসেম্বরের ঘটনা। সুব্রত গিরি নামে বছর ৩৩-এর ওই যুবককে দাদপুর থানার পুইনান এলাকা থেকে পুলিশ সন্দেহজনিত কারণে আটক করে।
থানায় তার থেকে গুচ্ছ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত জানায়, সে আদতে উত্তর ২৪ পরগনার নিমতার বাসিন্দা। স্বীকার করে নেয়, হাইওয়ের ধারের থানা এলাকাগুলোর ATM কাউন্টার ছিল তার লক্ষ্য। দূরে নিজের বিলাসবহুল গাড়ি থামিয়ে সে লক্ষ্য রাখতো ATM কাউন্টারের ওপর। গ্রামবাংলার অনেকেই এখনও ডেবিট কার্ড ব্যবহারে সড়গড় নন। সেরকম গ্রাহক সে খুঁজত। পেয়ে গেলেই শুরু করত ভেলকি।
সাহায্য করার নামে কোনওরকমে পাসওয়ার্ড জেনে নিত। এরপর পকেটে রাখা অনুরূপ একটি ডেবিট কার্ড বের করে কৌশলে হাতবদল করে নিত। সেই কার্ড সোয়াইপ করে নগদ টাকা তুলে নিত এই মহাপ্রতারক। গাড়ি দেখে যাতে কেউ বিন্দুমাত্র সন্দেহ না-করে, তার জন্য গাড়ির কাচে প্রেস স্টিকার সাঁটিয়ে রাখত অভিযুক্ত। আর পকেটে রাখত ২টি নকল প্রেসকার্ড।
গত ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে সুব্রতকে গাড়ি নিয়ে দাদপুর থানার হারিট এলাকায় দুটি ATM কাউন্টারের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতে দেখে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের সন্দেহ হয়। তৎক্ষণাৎ ফোনে থানার ওসি প্রশান্ত ঘোষকে তিনি বিষয়টি জানান। ওসি কালবিলম্ব না-করে টহলদারি জিপ নিয়ে পৌঁছন ঘটনাস্থলে। পুলিশ দেখেই চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করে অভিযুক্ত। কিন্তু, লাভ হয়নি। সুব্রতকে ধাওয়া করে গাড়ি সমেত পাকড়াও করে দাদপুর থানার পুলিশ।
থানায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সব কথা কবুল করে ওই প্রতারক। তার থেকে উদ্ধার হয় বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৯টি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। এছাড়াও উদ্ধার হয় নগদ ২৭ হাজার টাকা। পাওয়া যায় দুটো আইফোন-সহ মোট তিনটি ফোন। এছাড়াও দুটি ভুয়ো প্রেসকার্ড।
এর মধ্যেই দেখা যায় যে কয়েকমাস আগেই দাদপুর এলাকায় ATM প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল। যিনি অভিযোগ করেছিলেন, বেতা গ্রামের বাসিন্দা সেই ইয়াসিন মণ্ডল খবর পেয়েই থানায় এসে সুব্রতকে শনাক্ত করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করে সুব্রতকে হেফাজতে নেয় দাদপুর থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন- পাথর ছুড়ে জয় শ্রীরামের বদলা! বন্দে ভারতে হামলার পর বিস্ফোরক দিলীপ
এরপর দাদপুর থানায় ওসি ও সিআইকে পাশে বসিয়ে ডিএসপি (ডিএনটি) এক সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি জানান, রিমান্ড পিরিয়ডে সুব্রতর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাঁরা আরও ১৫০টি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, একটি সোয়াইপ মেশিন এবং একটি নতুন জিও সিম উদ্ধার করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতের থেকে উদ্ধার হওয়া বিলাসবহুল গাড়িটি সুব্রতর নিজের নামেই কেনা।
জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বাসিন্দা এই মহাপ্রতারক যুবক ভূগোলে স্নাতক। জেরায় সুব্রত জানিয়েছে, সে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ায় নির্মাণকাজের ব্যবসা করে। মাসিক আমদানিও ভালোই। একটি সূত্র ধরে দিল্লির জনৈক এক 'ম্যাডাম'-এর থেকে ৪,০০০ টাকার বিনিময়ে দুটি প্রেস কার্ড কেনে। তারপরই গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে প্রতারণার ব্যবসায় নামে চটজলদি রোজগারের ধান্দায়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের অপরাধের পুরোনো রেকর্ডও আছে। কয়েকবছর আগে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানাতেও সে অপরাধের অভিযোগে ধরা পড়েছিল।