তৃণমূল নেতার নির্মীয়মাণ বাড়িতে খোলা হয়েছিল অস্থায়ী তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়। পুলিশি অভিযানে সেখান থেকেই উদ্ধার হল বস্তায় ভরে রাখা ৯টি তাজা বোমা। শনিবার সকালে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার অমরপুর গ্রামে। ঘটনা নিয়ে সামনে চলে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
ওই নির্মীয়মান বাড়ির মালিক সারাফত হোসেনের অভিযোগ, 'তাঁদের ফাঁসাতে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খানের পরিকল্পনায় এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।' যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্লক সভাপতি। ওই নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা কীভাবে এল, কারা রেখেছিল, তা পুলিশ তদন্তে নেমে খতিয়ে দেখছে। পুলিশ ও দমকল বাহিনীর উপস্থিতিতে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড এদিন বিকালে জামালপুরের দামোদরের চরে বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করে।
জামালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম অমরপুর। এই এলাকার বাসিন্দা সারাফত হোসেন ওরফে হিরুর দাবি, জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলে তিনি দলের হয়ে নেতৃত্ব দেন। তিনি ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেহেমুদ খানের সঙ্গে দল করেন না। অরবিন্দ ভট্টাচার্য্য, গৌর মণ্ডল ও প্রদীপ পালের নেতৃত্বে তিনি সংগঠন করেন। তাঁদের পার্টি অফিস না-থাকায় অমরপুরে তাঁর নির্মীয়মাণ বাড়িটি জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চল দক্ষিণ জোন কার্যালয় হিসেবে আপাতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
সারাফতের অভিযোগ, 'জ্যোৎশ্রীরাম এলাকায় আমাদের সংগঠন যথেষ্টই মজমুত। সেটা মেনে নিতে না-পেরে আমাকে ও আমার সঙ্গে থাকা তৃণমূল কর্মীদের ফাঁসাতে লুকিয়ে বস্তায় বোমা ভরে নিয়ে এসে ওই নবনির্মীত বাড়িতে ফেলে রাখা হয়েছে। মেহেমুদ খানের পরিকল্পনাতেই এই গোটা ঘটনা ঘটানো হয়েছে।' জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের অপর তৃণমূল নেতা কার্তিক ঘোষ ও গোষ্ঠ মাল অভিযোগে বলেন, 'আমাদের জন্য তোলা তুলে খেতে ও লুটপাট চালাতে যাঁদের অসুবিধা হচ্ছে, তাঁরাই সারাফত হোসেনের নির্মীয়মান বাড়িতে বোমা রেখে গিয়েছে।'
জেলা বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, 'বালি, কাটমানি ও তোলাবাজির টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে জামালপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখন চরম আকার নিয়েছে। এখন এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীকে ফাঁসাতে নিজেদের কার্যালয়েই বোমা রেখে যাচ্ছে। এরপর আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে জামালপুরের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বোমা-গুলির লড়াই দেখবে রাজ্যবাসী।'
যদিও ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খান স্থানীয় দলীয় নেতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'জামালপুরে তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠী নেই, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও নেই। তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। পুলিশ বোমা উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত করছে। প্রকৃত ঘটনা কী, কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা পুলিশি তদন্তেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।'
আরও পড়ুন- নয়া-অস্বস্তিতে কেষ্ট-কন্যা, গরু পাচার মামলায় সুকন্যাকে দিল্লি তলব ED-র
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টাকে হালকা ভাবে দেখতে নারাজ। দলের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, 'তৃণমূলের পার্টি অফিস জনসেবামূলক কাজ ও দলীয় কাজের জন্য খোলা হয়ে থাকে। সেখানে কারা বোমা রাখল, সেটাই আশ্চর্যের। পুলিশকে বলব যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে।'