মৃত্যু মিছিল বা বায়ুদূষণে তৃতীয় স্থান পেলেও আটকানো গেল না শব্দদানবকে। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুরের মোচপোলো বাজি কারখানায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে একাধিক মানুষের নৃশংস মৃত্যু এখনও দগদগে। শব্দবাজি নিয়ে সরকার নাকি ভীষণ নজরদারি শুরু করে! এরই মধ্যে গ্রিন বাজি নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। তবে এবারও কালীপুজোর রাতে শব্দদানবের হাত থেকে রেহাই মিলল না। শহর কলকাতায় আগের থেকে কিছুটা দাপাদাপি কমলেও শহরতলিতে কানফাটা শব্দে মানুষজন কেঁপেছে সন্ধ্যা থেকে অধিক রাত পর্যন্ত। পরিবেশবিদদেরও হা-হুতাশ করা ছাড়া যেন কিছু করার নেই।
পরিবেশ বিজ্ঞনী ড. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'ভীষণই দুঃখজনক ব্যাপার। আমরা এমনই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে বিশ্বে বায়ুদূষণে কলকাতার স্থান তৃতীয়। সেই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা এতটা নির্বাকার হতে পারি। একটা পুজো উপলক্ষ্যে এত নিষিদ্ধ শব্দ বাজি ফাটাতে পারি। আমরা জানি, এতে কতরকমের টক্সিক গ্যাস রিলিজ করে, পার্টিকুলেট ম্যাটার কতগুলো কিভাবে আমাদের পিএম .৫, পিএম ১০-এর পরিমান বাতাসে বাড়িয়ে দেয়। দূষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। আমরা পরিবেশকে অবহেলা করছি। পরিবেশও কিন্তু আমাদের সঙ্গে এর প্রতিশোধ নেবেই।'
গত কয়েক বছর রাজ্যের একাধিক বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই সব ক্ষেত্রে একাধিক মৃত্যুও হয়েছে। তবুও কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের। এমনই অভিমত পরিবেশবিদদের। এবারই অন্য রাজ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজ্য সরকার শব্দ বাজির মাত্রা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করেছে। স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, 'শব্দের সীমা বাড়লই। তা সত্বেও আইনের বাইরে গিয়েই শব্দবাজি ফাটছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা না এলে আর কিছু বলার নেই। পাশাপাশি দেখতে হবে গ্রিনবাজি কতটা পরিমাণ সরবরাহ করা গিয়েছে। নিষিদ্ধ বাজিতে ভরে আছে। মানুষ যদি সচেতন না হয় খুব মুশকিল। এত কিছুর পরও আইনের জোরদার প্রয়োগ বা ফাইনের মধ্যে না আনলে ততক্ষণ নিয়ন্ত্রণে আসবে না। সরকারের উদাসীনতা তো আছেই তা নাহলে এই ক'দিনে ৯০ থেকে ১২৫ ডেসিবেল বৃদ্ধি করা হয়।'
অসুররা গল্পে থাকে কিন্তু শব্দদানব বাস্তবে অমর। তার কখনও মৃত্যু নেই। রবিবাসরীয় কালীপুজোতে তা আরও একবার প্রমাণিত। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা বা উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুরের মোচপোলে বেআইনি বাজি কারখানায় মৃত্যু মিছিলও আটকাতে পারল না। পরিবেশ বিজ্ঞানীরাও মাথায় হাত দিয়েছেন। সবুজ বাজি, সবুজ বাজি বলে সরকারি প্রচার চললেও চকোলেট বাজি, হাওয়াই শট সহ নিষিদ্ধ বাজি দাপাল রবিবারের অমাবস্যার রাত। পাশাপাশি গ্রিন বাজির পরীক্ষা-নিরীক্ষাও নিয়মিত করা জরুরি বলে মনে করছে পরিবেশবিদরা। তাতেও বিষ যেন না থাকে।
আরও পড়ুন- নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তৃণমূল নেতা, ঘিরে ধরে এলোপাথাড়ি গুলি, নৃশংস খুনে ভয়ঙ্কর অভিযোগ
স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, 'পুজোর আগে যতই চেঁচামেচি করা হোক সারা বছরের পরিকল্পনা প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা দরকার। শব্দ বাজির কারবার কোনও ভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সব থেকে অবাক লাগছে মানুষ এটাকে মেনে নিচ্ছে। আইন আছে, লাল ফিতের গেরো আছে, কিন্তু সব কিছু আইন দিয়ে হয় না। কোনও একটা জায়গায় আপনাকেও দায়িত্ব নিতে হবে।'