তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাইক তুলে রেখে ঘোড়ায় সওয়ার যুবক! আজব কান্ড ব্যান্ডেলে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম লাগামছাড়া হতেই বাইক ছেড়ে ঘোড়ায় সওয়ার যুবক। শুধু তাই নয়, সাধের ঘোড়া রোজগারেরও সন্ধান দিয়েছে ব্যান্ডেলের অলোক রায়কে। বছর পঁয়ত্রিশের যুবকের এই কীর্তি রীতমতো জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে তাঁকে।
আকাশছোঁয়া জ্বালানির দাম। বাইকে যাতায়াতে ঢের খরচ। বাড়ি বসেই একদিন ঘোড়া কেনার পরিকল্পনা করে ফেলেন ব্যান্ডেলের বলাগড়ের বাসিন্দা অলোক রায়। সৌদি আরবে চাকরি করতেন অলোক। গত বছর তাঁর বাবা-মা করোনা আক্রান্ত হন। সেই সময় চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন অলোক। তবে বাড়ি ফিরে বেকার হয়ে পড়েন তিনি।
দুই সন্তানের বাবা অলোক অথৈ জলে পড়ে গিয়েছিলেন। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। ঠিক করেন, আর চাকরি নয়। এবার ব্যবসা করবেন তিনি। ব্যবসা করার কথা মাথায় আসতেই ঘোড়া কিনবেন বলে ঠিক করেন অলোক। সৌদি আরবে অলোকের সংস্থার কর্ণধার এক শেখের বেশ কিছু ঘোড়া ছিল। অলোক সেই ঘোড়াগুলির দেখভাল করতেন। সৌদিতে থাকাকালীন শিখে নিয়েছিলেন ঘোড়-সওয়ারিও।
সেই কারণেই তিনি ঠিক করেন ঘোড়া কিনবেন। বায়ু দূষণ কমাতে ও তেলের খরচে রাশ টানতে ঘোড়ায় চড়েই দৈনন্দিন কাজ সারবেন বলে মনস্থ করে ফেলেন। একইসঙ্গে ঘোড়ায় চড়ার ব্যাপারে বাকিদেরও উৎসাহ দেবেন বলে ঠিক করেন। তাঁর বাবা দীপক কুমার রায় এব্যাপারে ছেলেকে উৎসাহ দেন। জন্মাষ্টমীর দিনে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় 'কাটিয়াওয়ারা' প্রজাতির একটি ঘোড়া কেনেন অলোক। তার নাম দেন রাজু।
ফের কালীপুজোয় দ্বিতীয় ঘোড়াটিও কিনে ফেলেন তিনি। সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় একটি 'মারওয়া' প্রজাতির মেয়ে ঘোড়া কেনেন অলোক। শখ করে সেই ঘোড়াটির নাম দেন মুসকান। বর্তমানে এই রাজু আর মুসকানকে নিয়েই ঘুরে জীবন-যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন অলোক। তাঁর দুই মেয়েও খুব খুশি। বাবার পাশাপাশি দুই ঘোড়ার দেখভালের দায়িত্ব সামলায় তারাও। অলোকের স্ত্রী একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। সময় বের করে তিনিও ঘোড়ার দেখভাল করেন।
আরও পড়ুন- এবার ট্রেনে চড়েই জেলা সফরে যাবেন মমতা, প্রতিকূল আবহাওয়ার জের
ব্যান্ডেলের রাস্তাঘাটে অলোককে ঘোড়ায় চেপে যাতায়াত করতে দেখে রীতিমতো উৎসাহিত স্থানীয় বাসিন্দারাও। দোকান-বাজার যাওয়া থেকে শুরু করে বাড়ির বাইরে বেরোলেই অলোকের সঙ্গী রাজু বা মুসকান। ব্যবসায়িকভাবেও ঘোড়া দুটিকে কাজে লাগাচ্ছেন যুবক। হর্স রাইডিং ক্লাব খুলেছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই প্রচুর সদস্য-সদস্যাও যোগ দিয়েছেন সেই ক্লাবে। আয়ের পথ খুলে গিয়েছে অলোকের। অলোক রায়ের কথায়, 'গাড়ির মতো ঘোড়ায় তো পরিবেশ দূষিত হবে না। যেভাবে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ছে ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে তাতে আগামী দিনে ফের ঘোড়ার গাড়িই মুখ্য যানের জায়গা নেবে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন