বাড়িতে, হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে চাঁদা সংগ্রহ নয়, হেমন্তের সোনালি ধান কেটে শ্যামা পুজোর খরচ জোগানোর উদ্যোগ নিয়েছে ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং ১ অঞ্চলের পূর্ব ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ধাপের ডাঙ্গা শ্যামা পুজো কমিটির সদস্যরা। যা ইতিমধ্যেই সমীহ আদায় করেছে।
লকডাউনে বিপর্যস্ত গ্রামীণ অর্থনীতি। তার উপর নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। নাভিশ্বাস অবস্থা গ্রামবাসীদের। এই পরিস্থিতিতে মানুষের দুয়ারে পুজোর চাঁদা চাইতে গেলে নানান সমস্যা হতে পারে। ফলে কমিটির সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে চাঁদা নয়, ধান কেটে সংগ্রহ করা হবে পুজোর খরচ।
আরও পড়ুন- ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ শাক-চোদ্দ বাতির নেপথ্যের ইতিহাস জানেন?
পুজোর অর্থ জোগাড়ে এখন তাই রোজ নিয়ম করে দশ বিঘা ধানক্ষেতের পাঁকা ধান কাস্তে দিয়ে কাটছেন যোগেশ, সুমিত, মানব, জিৎ, উত্তম, বিরাট সহ ১৫-১৬ জন তরুণের দল। এদের কেউ স্কুল পড়ুয়া, আবার কেউ কলেজে পড়েন। অনেকেই নানা পেশায় যুক্ত। হেমন্তের সকালে শিশিরে ভেজা সোনালি ধান ক্ষেতে এসে দল বেঁধে ধান কাটার কাজ করছে ওঁরা।
ইতিমধ্যেই তারা কয়েক বিঘার বেশি ধান কেটে ফেলেছে। বিঘা প্রতি ১২০০ টাকা চুক্তিতে ধান কাটার কাজ করছেন। কমিটির সদস্য বীরাপ্পন রায় বলেন, '১২০০ টাকা বিঘা প্রতি মোট দশ বিঘা জমির ধান আমরা কাটবো। স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের জমিতে ধান কাটছি। বৃহস্পতিবার পুজো, তার আগেই আমাদের হাতে টাকা আসবে এমন চুক্তি করেই ধান কাটছি। এই টাকার সঙ্গে সদস্যদের ব্যক্তিগত চাঁদা দিয়ে আমরা খুব সাধারণ ভাবে কালীপুজার আয়োজন করছি।'
আরও পড়ুন- মহাকালের ভৈরবী হিসেবে পূজিত হন মা আনন্দময়ী, মায়ের রূপ সদাই মঙ্গলকারী
পুজো কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দয়াল রায় ধান কাটতে কাটতে বলেন, 'রোজকারের অভাবে এবছর মানুষের হাতে টাকা পয়সা নেই, জিনিসপত্রের যা দামও চড়া। ফলে মানুষের বাড়িতে চাঁদার জন্য গেলে অনেকে অনেক রকম কথা বলেন তাই এই পদক্ষেপ।' আরেক সদস্য হেমন্ত রায় বলেন, 'গ্রামাঞ্চলে ছোটখাটো পুজোর সংখ্যা বাড়ছে, চাঁদা সংগ্রহ করার জন্য নিত্যদিন কমিটিগুলো বাড়ি বাড়ি ঘুড়ছে। চাঁদা দিতে দিতে মানুষও বিরক্ত হয়েছে। তাই আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়েছি ধান কেটেই পূজার চাঁদা তুলবো।'
একসময়য় জঙ্গল ভরা ধূপগুড়ির পূর্ব ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ধাপের ডাঙ্গা আসলে উঁচু জমি। বিভিন্ন পুজো ও অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এই এলাকায়। তবে, অর্থের অভাবে অনেক কিছুই বন্ধ হয়েছে, টিম টিম করে হয় শুধু শ্যামা পুজোই। বহু দিনের পুজো ধরে রাখতে সচেষ্ট এলাকার এই প্রজন্ম। পুজোর জন্য তাঁদের ভিন ধারায় অর্থ জোগানের উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয়।
ধনতেরাসে ভুল করেও কিনবেন না এগুলি! তাহলেই সর্বনাশ
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন