শীতের রোদ গায়ে মেখে বেড়িয়ে পড়ুন দিন দু'য়েকের ছুটিতে। সপ্তাহান্তে এর চেয়ে ভালো বেড়ানোর জায়গার হদিশ মেলা বেশ কঠিন। পছন্দের সঙ্গী অথবা কাছের মানুষগুলিকে সঙ্গে নিয়ে হারিয়ে যান বঙ্গোপসাগরের কোলে। আপনার প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠবে আরও রঙিন আরও প্রাণবন্ত! তাহলে আর দেরি কীসের? মেরেকেটে দিন'দুয়েকের ছুটি ম্যানেজ করুন। কলকাতার কাছেই অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট গঙ্গাসাগর থেকে ঘুরে আসুন।
গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ থেকে জন্ম নেওয়া গঙ্গাই এখানে ভাগীরথী হয়েছে মিশেছে বঙ্গোপসাগরের জলে। গঙ্গাসাগর বরাবরই অন্য পর্যটকেন্দ্রগুলি থেকে ভীষণ আলাদা! কাছের মানুষের হাত ধরে সাগরতটে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার দারুণ ফিলিংস চিরজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকার মতো। এবছরের গঙ্গাসাগর মেলা শেষ। পুণ্যভূমি গঙ্গাসাগরে আর কাতারে-কাতারে মানুষের ভিড় নেই। নিরিবিলিতে সময় কাটাতে গেলে তাই ভুলেও মেলার সময়ে গঙ্গাসগরমুখো হবেন না।
গঙ্গাসাগর মেলার আগে বা পরে যেতে পারেন। সাগরতটের অপরূপ সৌন্দর্য্য মন ভরিয়ে দেবে। দিনভর সাগরের ঢেউয়ের হালকা সুর আর বয়ে চলা উতল হাওয়ায় সব স্ট্রেস এক লহমায় ঘুঁচে যাবে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ঢেলে সাজানো হয়েছে গোটা গঙ্গাসাগরকে। একাধিক হোটেল, কটেজ রয়েছে এখানে। সন্ধেয় সাগড়পাড়ের চিকন আলো মায়াবী এক পরিবেশ তৈরি করে। যা বিশেষভাবে আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
আরও পড়ুন- কলকাতা থেকে সকালে বেরিয়ে সন্ধেয় ফিরুন, মন জুড়োবে অসাধারণ এই নদীপাড়
গঙ্গাসাগরে কী দেখবেন?
গঙ্গাসাগর মানে শুধুই কপিলমুনির আশ্রম নয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে নাগ মন্দির, মনসামাতার মন্দির। চাইলে টোটো নিয়ে এই সব জায়গাগুলির পাশাপাশি ঘুরে আসতে পারেন রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম থেকেও। টোটোয় চেপেই সাগরপাড়ের গ্রামগুলিতও একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। শীতের মরশুমে গঙ্গাসাগরে এলে গ্রামে ঢুকে খেঁজুর রস খেতে যেন ভুলবেন না। এমন অভিজ্ঞতা চিরকাল আপনার স্মৃতিতে রয়ে যাবে। এবছর থেকে বাংলার প্রাচীন মন্দিরগুলি সম্পর্কে পুন্যার্থী ও পর্যটকদের ধারণা দিতে এখানেই তৈরি করা হয়েছে কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, তারকেশ্বর মন্দিরের ছোট ছোট সংস্করণ। বিশেষ করে রাতে এগুলি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
গঙ্গাসাগরে কোথায় থাকবেন?
গঙ্গাসাগরে বেশ কয়েকটি থাকার হোটেল রয়েছে। বেসরকারি হোটেলের পাশাপাশি সরকারি লজও আছে। থাকার খরচও নাগালের মধ্যেই। সেক্ষেত্রে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো। কম খরচে থাকতে গেলে ভারত সেবাশ্রম সংঘের অতিথি নিবাসে সেই সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন- কলকাতার খুব কাছেই নিরিবিলি অপরূপ এই সমুদ্রতট, ফাঁক পেলে ঘুরেই আসুন
গঙ্গাসাগরে কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে রেল বা সড়কপথ দু'ভাবেই যেতে পারেন গঙ্গাসাগরে। রেলপথে গেলে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার নামখানা অথবা কাকদ্বীপ লোকাল ধরুন। নামখানা স্টেশনে নেমে অটো বা টোটো ধরে পৌঁছে যান লঞ্চঘাটে। লঞ্চে চেপে ঘাট পেরিয়ে বেণুবনে উঠুন। এই বেণুবন থেকে গঙ্গাসাগর যাওয়ার গাড়ি পাবেন। তবে কাকদ্বীপ স্টেশনে নেমেও গঙ্গাসাগর যাওয়া যায়। ট্রেনে কাকদ্বীপে নেমে টোটো বা অটোতে যান ৮ নম্বর লট-এর ঘাটে। ৮ নম্বর লট থেকে ভেসেলে চেপে পৌঁছে যেতে পারবেন গঙ্গাসাগরে। তবে ভেসেল পরাপারের সময় সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিন।
কলকাতা থেকে সড়কপথেও নামাখানা যাওয়া যায়। ধর্মতলা থেকে প্রতিদিনই বাস পাবেন। তবে বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে গেলে সরাসরি কাকদ্বীপ বা নামাখানায় পৌঁছে যান। সেখান থেকে একইভাবে নদী পেরিয়েই পৌঁছতে হবে গঙ্গাসাগরে।