পাট শিল্প পুনরুজ্জীবনের দাবি জানাতে শহরতলির শিল্পী তপন পাল দুর্গাপ্রতিমাকে বেছে নিয়েছেন। এবার উত্তর ২৪ পরগনার গয়েশপুরে পাটের যাবতীয় উপকরণকে ব্যবহার করে দুর্গাপ্রতিমা নির্মাণ করছেন ভিস্যুয়াল আর্টের এই শিক্ষক। শিল্পীর কথায়, 'পাট শিল্প দুর্বল জায়গায় আছে। কিছু দিন আগে এরাজ্যে আন্দোলন হয়েছে। পাটের মাধ্যমে প্রতিমা নির্মাণ করে পাট শিল্প পুনরুজ্জীনের দাবি জানাচ্ছি।' প্রসঙ্গত, এবছর পাট শিল্পে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ। পরে তিনি দল পরিবর্তন করে ফেলেন।
গয়েশপুরের পূর্বাশা ক্লাবের মন্ডপে শোভা পাবে পাটের উপকরণ দিয়ে তৈরি দুর্গাপ্রতিমা। শিল্পী বলেন, 'মূর্তি হচ্ছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার টুসু পুতুলের আদলে। চোখ, নাক, মুখ তৈরিতে পাটের দড়ি ব্যবহার করা হয়েছে, দেহ তৈরি রয়েছে পাটের আঁশ দিয়ে, পাঠ কাঠি দিয়ে অস্ত্র। দুর্গা প্রতিমার হাইট ১০ ফুট, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর মূর্তি নিয়ে চওড়া ১২ ফুট।' তপন পাল বলেন, 'আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সর্বক্ষেত্রে ক্ষতিকারক প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পরিবর্তে পাট জাত দ্রব্য উৎপাদন, পাটের ব্যাগের ব্যবহারকে সর্বত্র সরকারি স্বীকৃতি ও আইন প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাকে সক্রিয় করতেই এই শিল্প কলা মূর্তি(মা দুর্গা) নির্মাণ করেছি। এই কাজের মাধ্যমেই পাট চাষী ও এই শিল্পকে রক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি।' শিল্পী ২ মাস ধরে এই মূর্তি তৈরির কাজ করছেন। মন্ডপ তৈরি করা হচ্ছে পাটের মূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।
২০০১ সাল থেকে তপনবাবু নানা উপাদান দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা গড়ছেন। পেশায় বেলুড় হাইস্কুলের ভিস্যুয়াল আর্টের শিক্ষক, তবে শিল্প সৃষ্টিই তাঁর নেশা। ২০০১-এ প্রতিমা নির্মান করতে কাঁচা সবজি ব্যবহার করেছিলেন তপনবাবু। তারপর ফুচকা, সময় উত্তীর্ণ হওয়া ট্যাবলেট-ক্যাপসুল, বিভিন্ন খাওয়ার ডাল, ইলেক্ট্রিকের ওয়ার-ব্ল্যাক টেপ, থালাবাসন দিয়ে প্রতিমা গড়েছেন। কখনও আবার তালগাছ, খেজুর গাছ কার্ভিং করেছেন তিনি। ২০২০-তে ইঁট (১০"/৫" সাইজ ) খোদাই করে ২টো দুর্গা মূর্তি নির্মাণ করে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এবং এশিয়া বুক অফ রেকর্ডসের স্বীকৃতি লাভ করেন তপন পাল।
আরও পড়ুন- কোন বাহনে আসছেন এবং ফিরবেন দুর্গা, জনজীবনে তাতে কী প্রভাব পড়বে?
গয়েসপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তপন পাল প্রতিমা তৈরি করছেন লেখাপড়ার বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে। তপনবাবু জানান, বইয়ের পাতা, পেন, স্কেচ পেন, রিফিল, ইরেজার, জ্যামিতিক চাঁদা, কম্পাস, স্কেল, পেন বক্স, পেন দানী, চক, ব্ল্যাক বোর্ড, প্রাথমিক শিক্ষাদানে লেটার, অর্থাৎ পড়াশুনার ক্ষেত্রে যাযা ব্যবহৃত হয় তা দিয়ে প্রতিমা তৈরি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বইয়ের পাতা দিয়ে প্রতিমার দেহের অংশ, ডাস্টারের প্যাড খুলে তা দিয়ে সিংহের স্কিন তৈরি হয়েছে।
বছর আটচল্লিশের শিল্পী বলেন, 'লকডাউনে ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে পড়াশুনা হয়েছে। মোবাইলে পড়াশুনা করতে করতে তা এখন ছোটদের গেম খেলার নেশায় পরিণত হয়েছে। তাই পুনরায় বই-খাতায় ফিরে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে মা দুর্গার প্রতিমা গড়ে।' এই পুজোর আয়োজক গয়েশপুর মালঞ্চ সাংস্কৃতিক সংস্থা। তপন পালের কথায়, 'শিক্ষা আনে চেতনা, সে চেতনা সুন্দর হোক, বাস্তবমুখী হোক, হোক বই মুখী, এই লক্ষ্যেই এবার তৈরী করেছি সমস্ত শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে এই দুর্গা প্রতিমা।'