রাজ্য সরকার সদর্থক ভূমিকা নিলেই অনশন-আন্দোলন তুলে নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট করলেন ডিএ আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা। রবিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠক করেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ৫ প্রতিনিধি। বকেয়া ডিএ-সহ তাঁদের একাধিক দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের সব দাবি-দাওয়া রাজ্যপালকে জানিয়েছেন। রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা চাইছেন।
বকেয়া ডিএ-র দাবিতে একটানা আন্দোলন-অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। দিন কয়েক আগেই আন্দোলনকারীদের অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। জট কাটাতে নিজে থেকে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যপালও। এরপর রবিবার সকালে রাজভবনে গিয়েছিলেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পাঁচ প্রতিনিধি। তাঁরা রাজ্যপালকে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানিয়েছেন।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেন, 'বকেয়া ডিএ নিয়ে আলোচনায় বসুক রাজ্য সরকার। রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হোক। রাজ্য সরকার সদর্থক ভূমিকা নিলেই অনশন তুলে নেওয়া হবে।' তিনি আরও বলেন, 'রাজ্যপাল বলেছেন আমি নিজেও একজন সরকারি কর্মচারী ছিলাম। আমি বুঝি সরকারি কর্মীদের বিষয়টি। আমি রাজ্যকে আপনাদের বক্তব্য জানাব।'
বকেয়া ডিএ-র দাবিতে নাছোড় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের সরকারি কর্মীদের একাংশ। শহিদ মিনারে টানা অবস্থান আন্দোলন আজ ৪৫ দিনে পা দিয়েছে। এরই পাশাপাশি ডিএ-র দাবিতে অনশন আন্দোলন পা দিয়েছে ৩১ দিনে। ইতিমধ্যেই অনশন মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়েছে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীদের। এছাড়াও আন্দোলন করতে গিয়েও ফি দিন অসুস্থদের তালিকা ক্রমশ বাড়ছে। এই মুহূর্তে বেশ কয়েকজন অনশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও রয়েছেন।
এদিকে, রাজ্যপাল আন্দোলনকারীদের অনশন তুলে নিতে আবেদন করায় এব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। ডিএ আন্দোলনের পক্ষে থেকেও শুভেন্দু অধিকারী সরকারি কর্মীদের অনশন কর্মসূচি তুলে নিতে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি টুইটে লিখেছেন, 'যারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন আন্দোলন করছেন পশ্চিমবঙ্গের সেই সরকারি কর্মচারীদের বলছি, মাননীয় রাজ্যপালের অনুরোধ বিবেচনা করুন। আপনারা অনশন শেষ করুন। আন্দোলন চালিয়ে যান। কারণ আপনাদের দাবিগুলি একশো শতাংশ বৈধ। রাজ্য সরকারকে অবশ্যই সেগুলি মেনে নিতে হবে।'
আরও পড়ুন- ফের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি, ভাঙল জানলার কাচ
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার তিন শতাংশ ডিএ দিতে রাজি হলেও তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। ডিএ-র দাবিতে গত শুক্রবার রাজ্যজুড়ে সরকারি দফতরগুলিতে ধর্মঘট পালন করেছেন কর্মীদের একাংশ। যদিও তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। সরকারের তরফে আগেই নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধর্মঘটে দফতরে না গেলে চাকরিজীবন থেকে একদিন কমে যাবে, কাটা যাবে বেতন। পড়তে হবে শোকজের মুখেও।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ধর্মঘটের দিন যে সরকারি কর্মীরা দফতরে অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের তালিকা পৌঁছেছে। সোমবার থেকে তাঁদের শোকজের প্রক্রিয়াও শুরু হবে। এদিকে, ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মীদের একাংশের অনশন-আন্দোলন তুলে নিতে আবেদন জানিয়েছেন রাজ্যপাল। আজ ফের তিনি কথা বলবেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।