সোমবার রাতে নতুন করে অশান্তির আগুন ছড়ায় রিষড়ায়। মঙ্গলবার দুপুরেও যার রেশ ভালো মতো টের পাওয়া গিয়েছে। সরেজমিনে এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতি গিয়ে তা টের পেয়েছেন খোদ রাজ্যপালও। রিষড়ার ৪ নং রেলগেট, স্টেশন লাগোয়া এলাকাগুলি এখনও উত্তেজনাপ্রবণ। তবে পুলিশ রীতিমতো সজাগ। গোটা এলাকা কার্যত ঘোরাটোপে বেঁধে ফেলেছেন পুলিশকর্মীরা। ১৪৪ ধারা জারি করে এলাকাবাসীর কনফিডেন্স বিল্ড-আপের কাজ চালাচ্ছে পুলিশ।
রিষড়ায় অশান্তি ছড়াতেই উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি কলকাতায় ফেরেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার বেলা ১২.৪০ নাগাদ রিষড়ার ৪ নং রেলগেট চত্বরে পৌঁছে যায় রাজ্যপালের কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে এলাকা ঘুরে দেখেন সিভি আনন্দ বোস। এই এলাকাতেই সোমবার রাতে হিংসার আগুন জ্বলে উঠেছিল। চরম উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে ধুন্ধুমার-কাণ্ড বেঁধে গিয়েছিল এই ৪ নং রেলগেটেই।
দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, বেপরোয়া ভাঙচুর, রাস্তায় ফেলে পুলিশের গাড়িতে আগুন, বাদ যায়নি কিছুই। মঙ্গলবার সকাল থেকেও এলাকার পরিস্থিতি রীতিমতো থমথমে। এদিন রাজ্যপাল যেতেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান ঘটনাস্থলে হাজির পুলিশ ও প্রশাসনের বড় কর্তারা। ডিআইজি বর্ধমান রেঞ্জ শ্যাম সিং, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি-সহ প্রশাসনের একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে এদিন এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এলাকায় শান্তি স্থাপনে আরও কী কী করা যেতে পারে সেব্যাপারে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের এই ঝটিকা সফর ঘিরে এলাকায় পুলিশি প্রহরা এদিন ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি এদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেলের কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গেও কথা হয় রাজ্যপালের। এরই পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কথা বলেন সিভি আনন্দ বোস। তাঁরা রাজ্যপালকে জানান, দোকানপাট খুলতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। এভাবে চলতে থাকলে তাঁদের রুটি-রুজির সংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
তাঁদের আশ্বস্ত করে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, অসুবিধায় পড়লে তাঁরা যেন পুলিশের দ্বরস্থ হন। তবে সেখানেও কোনও সুরাহা না মিললে তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে সরাসরি তাঁকেই সমস্যার কথা জানাতে বলেছেন রাজ্যপাল। এদিন ৪ নং রেলগেট থেকে কিছুটা এগোতেই রাজ্যপালকে দেখে স্থানীয় সুভাষনগর হাউজিংয়ের বাসিন্দারা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তবে রাজ্যপাল এদিন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি। তিনি ফের সোজা চলে যান ৪ নং রেলগেটের দিকে।
আরও পড়ুন- ‘দুর্বৃত্তদের হাতে আইন তুলে নিতে দেব না’, রিষড়ায় কড়া বার্তা রাজ্যপাল আনন্দ বোসের
সুভাষনগর হাউজিংয়ের বাসিন্দা প্রেম বর্মা, নিশান্ত কুমার, মনু রায়দের অভিযোগ পুলিশ ভোররাতে তাঁদের হাউজিংয়ে ঢুকে হুমকি দিয়েছে। গতকাল রাতের ঘটনার পর থেকে তাঁরা বেশ আতঙ্কিত ও সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন। রাজ্যপালের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানাতে চাইছিলেন তাঁরা। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা না হওয়ায় আফশোস কাটছে না সুভাষনগর হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, গন্ডগোল যেখানে হল সেখানে গেলেও আশেপাশের উপদ্রুত এলাকায় যাননি রাজ্যপাল। ৪ নং রেলগেটের অন্যপাড়ের বাসিন্দা শেখ হোসেন বলেন, 'রাজ্যপাল তো আমাদের এদিকে এলেনই না। গতকাল রাতে বোমাবাজি হয়েছে। ব্যাপক গন্ডগোল হয়েছে। আমরাও ভয়ে আছি।'
এদিকে, ৪ নং রেলগেট ঘুরে দেখার পাশাপাশি এদিন রাজ্যপাল রিষড়া স্টেশনেও গিয়েছিলেন। স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন মানুষের সঙ্গেও এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর কথা হয়েছে। প্রায় ১ ঘণ্টা এলাকায় থাকার পর দুপুর দেড়টা নাগাদ রিষড়া ছেড়ে বেরিয়ে যায় রাজ্যপালের কনভয়।
আরও পড়ুন- রিষড়ায় অশান্তি: ফের পুলিশি বাধায় রেগে কাঁই সুকান্ত! ধুয়ে দিলেন মমতাকে
সোমবার রাতে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল রিষড়ার ৪ নং রেলগেটে। স্থানীয় ছাইবাজার, সন্ধ্যাবাজার-সহ কয়েকটি এলাকায় গতরাতের সেই ভয়াবহ ঘটনার ছাপ এদিন দুপুরেও বেশ স্পষ্ট। এলাকায় থমথমে পরিবেশ। স্থানীয়দের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। রেলপথ সংলগ্ন এলাকায় এখনও পড়ে ইট-পাথরের স্তূপ। গোটা এলাকায় জারি ১৪৪ ধারা। ৪ নং রেলেগেটের ওপাশেই পিচের রাস্তার উপরে ছিটিয়ে কালোছাই, সোমবার রাতে এখানেই গাড়ি পোড়ায় দাঙ্গাবাজরা।