মহা অষ্টমীর অঞ্জলি, তারপরে আবার মঞ্চে সংবর্ধনা। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্রের পরিচালনাধীন ক্লাবের দুর্গাপুজোয় হাজির থেকে বিতর্কে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কেনই বা রাজ্যপালকে কুণালের আমন্ত্রণ? আবার সেই আমন্ত্রণে রাজ্যপালের স্বতস্ফূর্ত সাড়া। এই 'সৌজন্যে' রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়। অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি। রাজনৈতিক মহল কুণালের পুজোতে রাজ্যপালের উপস্থিতির পিছনের কারণ খুঁজতে তৎপর।
উত্তর কলকাতার রামমোহন সম্মেলেনীর চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র। যেদিন রাজভবনে ছিলেন কুণাল সেদিন আবার কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অষ্টমীতে রামমোহন সম্মেলনীতে পুস্পাঞ্জলি দেন সিভি আনন্দ বোস। কুণালের দুর্গাপুজোয় রাজ্যপালের উপস্থিতি যে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে তা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যেও স্পষ্ট।
নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, 'রাজ্যপাল আমার কাছে জানতে চাইলে বলতাম বেলুড়মঠে গিয়ে পুস্পাঞ্জলি দিন। যেখানে বাংলার বহু মানুষের সারদায় জমা রাখা টাকা জলে গিয়েছে সেখানে যাওয়া ঠিক হয়নি।' কলকাতায় এত মণ্ডপ থাকতে রাজ্যপাল কুণাল ঘোষের আয়োজনে পুজোতে পুস্পাঞ্জলি দিয়েছেন, পরে মঞ্চে সংবর্ধনাও নিয়েছেন। বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলেই তা নিয়ে রীতিমতো 'ঝড়' উঠেছে। মহা অষ্টমীর 'সৌজন্য' নয়া বিতর্কের সৃষ্টি করেছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
এর আগে ১৫ অক্টোবর কুণাল ঘোষের টুইট নিয়ে তোলপাড় হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি। ৮ দিন আগের ওই টুইটে রাজ্যের শীর্ষ স্থানীয় এক পদাধিকারীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের কথা লিখেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। নাম না প্রকাশ করে লিখেছিলেন অভিযুক্ত সাংবিধানিক রক্ষাকবচে আছেন। যদিও কে সেই ব্যক্তি তা এখনও প্রকাশ্যে ফাঁস করেননি কুণাল ঘোষ। এই বিষয়ে আরেক ভিন্ন জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের বিরোধ চরমে উঠেছিল। প্রায় নিত্য বিবাদ লেগেই থাকতো এই দুপক্ষের মধ্যে। সকালে ধনকড় সাংবাদিক বৈঠক করলে বিকেলে পাল্টা সেই বক্তব্যের সরাসরি বিরোধিতা করে তোপ দাগতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ধনকড় যখন উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হলেন তখন কংগ্রেসের সঙ্গে মন কষাকষি করে ভোটদানে বিরত রইল তৃণমূল। অর্থাৎ জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি জোড়া ফুল শিবির। সিভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল পদে যোগ দেওয়ার কিছু দিন পর থেকেই 'ধনকড়ের দ্বিতীয় জমানা' শুরু কথা মনে করছিল রাজনৈতিক মহল। এবার কুণালের পুজোয় হাজির থেকে কি বার্তা দিতে চাইলেন রাজ্যপাল? সেটাই বড় প্রশ্ন।
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, কুণালের পুজোতে রাজ্যপালের হাজির থাকা কি নেহাতই 'সৌজন্য সংস্কতি'? না এর পিছনে গূঢ় কোনও রহস্য আছে?