রাজভবন হল বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপি বিধায়ক ও প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বের ঘর, বাড়ি। জগদীপ ধনকড় রাজ্যপাল থাকালীন প্রায়ই এই অভিযোগ করত শাসক দল তৃণমূল। বাস্তবে দেখা গিয়েছিল, বিজেপি পরিষদীয় দলের কাছে রাজভবন ছিল অবারিত-দ্বার। যেকোনও ইস্যুতে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে রাজভবনে হত্যে দিতেন গেরুয়া দলের বিধায়ককূল। কিন্তু, গত তিন মাসে পরিস্থিতি পাল্টেছে। রাজভবনে এসেছেন অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশন। প্রায়ই তিনি থাকেন রাজ্যের বাইরে। ফলে আর কথায় কথায় রাজভবন মুখী হতে দেখা যায় না বিজেপি নেতা, নেত্রী বা বিধায়কদের। আবার প্রয়োজনে তাঁরা রাজভবনে গেলেও রাজ্যপালের সাক্ষাৎ না পেয়ে কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়। যেমন হল সোমবার।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু প্রসঙ্গে কারামন্ত্রী অখিল গিরির কুমন্তব্যের প্রতিবাদে সোচ্চার বিজেপি। দিল্লিতে এফআইআর করা থেকে কমিশনে নালিশ, প্রতিবাদ মিটিং-মিছিল- সবই হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে অখিলকে বরখাস্তেরও দাবি তোলা হয়েছে পদ্ম শিবিরের তরফে। এই দাবি নিয়েই সোমবার রাজভবনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির পরিষদীয় দল। বিরোধী দলের দাবি, রাজ্যপাল মমতা মন্ত্রিসভা থেকে অখিল গিরিকে সরাতে মুখ্যমন্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করুন।
আরও পড়ুন- অখিলের কুবচন: ক্ষমা চাইলেন মমতা, যদিও শুভেন্দু সহ বিজেপি নেতৃত্বের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন
দাবি পেশের জন্য সময় চেয়ে শনিবার থেকে শুভেন্দু অধিকারীরা একাধিকবার রাজ্যপাল লা গণেশনের দফতরে মেইল দিয়েছিলেন। কিন্তু, তার জবাব মেলেনি বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। যদিও এ দিন বিধানসভা থেকে হেঁটে শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির জনা পঞ্চাশ বিধায়ক রাজভবনে যান। এরপর রাজ্যপালের দেখা না পেয়ে তাঁর সচিবের হাতেই দাবিপত্র পেশ করেন।
রাজভবন থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'শনিবার থেকে উপর্যপরি রাজভবনে মেইল করে রাজ্যপালের সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সময় দেওয়া হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে জনা পঞ্চাশ বিধায়ক রাজভবনে এসেছি। কিন্তু রাজ্যপালের দেখা না পেয়ে তাঁর সচিবের কাছে আমাদের দাবিপত্র জমা দিয়ে গেলাম। রাজ্যপালের হাতে ক্ষমতা আছে। যা ব্যবহার করে তিনি এক জন মন্ত্রীকে সরানোর পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীকে দিতেই পারেন। আমাদের দাবিপত্রে সেটাই উল্লেখ রয়েছে। তিনি চেন্নাই, ইম্ফল বা দিল্লি যেখানেই থাকুন, মেইল বা হোয়াটসঅ্যাপে করুন, উনি কীভাবে করবে জানি না। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছি। আমরা এখানে সচিবের সামনে চা খেতে আসিনি।' তাঁর হুঙ্কার, 'দাবি পূরণ না হলে বিজেপি, সামাজিক সংগঠন, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরা মিলে প্রতিবাদ হবে। বিধানসভার আগামী অধিবেশনের আগে এই মন্ত্রী বরখাস্ত না হলে বিজেপি বিধায়করা সংসদীয় ব্যবস্থা মেনে জোরাল প্রতিবাদ করবে। এটা স্পষ্টভাষায় আমরা রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানাচ্ছি।'
আরও পড়ুন- সবজির দর নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা, ‘চিকেনের দাম কমান’, নবান্নের বৈঠকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশনের ব্যবহারে যে বঙ্গের গেরুয়া শিবির মোটেও সন্তুষ্ট নয় তা শুভেন্দুবাবুর কথাতেই ফুটে উঠেছে। গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কান পাতলেও অসন্তোষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই প্রথম নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেন্নাইতে রাজ্যপালের বাড়ির অনুষ্ঠানে যাওয়া সহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে আগই পদ্ম নেতাদের উষ্মা ঝড়ে পড়েছিল।